গুগলকে চ্যালেঞ্জ জানাবে চ্যাটজিপিটি!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চটজলদি প্রশ্নে উত্তর দিয়ে এরই মধ্যে সবার মাঝে সাড়া ফেলে দিয়েছে আশ্চর্য সফ্টওয়্যার ‘চ্যাটজিপিটি’! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ‘ওপেনএআই’ এই সফ্টওয়্যার তৈরি করেছে।
চ্যাটজিপিটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটও বলা যায়। কয়েক সেকেন্ডে হাজার হাজার শব্দ লিখে ফেলা কিংবা নিমেষে জটিল কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া— চ্যাটজিপিটির কাছে সবটাই যেন ডালভাতের মতো।
চ্যাটজিপিটি মূলত শিক্ষামূলক কথোপকথন ভিত্তিক প্রযুক্তি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে এর প্রকাশ ঘটে। আর তার পর থেকেই চমকের পালা। কৃত্রিম মেধাসম্পন্ন এই প্রযুক্তি চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। তাকে ইচ্ছামতো কাজে লাগানো যাচ্ছে।
প্রকাশের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। মাত্র ৫ দিনের মধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহারকারীর সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল ১০ লাখ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে ১০ কোটির বেশি মানুষ চ্যাটজিপিটির আস্বাদ নিয়ে ফেলেছেন। ব্যবহারকারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
চ্যাটজিপিটির প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে তুলতে 'ওপেনএআই'-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে মাইক্রোসফ্ট। এই প্রযুক্তি আগামী দিনে গুগলকে টেক্কা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দাবি, গুগলে যে প্রশ্নের উত্তর জানতে চান মানুষ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটজিপিটি সে উত্তর দেয় আরও বেশি যত্ন নিয়ে।
চ্যাটজিপিটি কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়
ইন্টারনেট পরিষেবাসম্পন্ন ফোন বা কম্পিউটার এবং তাতে উপযুক্ত কোনও ব্রাউজারই কৃত্রিম মেধার এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।
প্রথমে ব্রাউজারের মাধ্যমে 'ওপেনএআই'-এর চ্যাটজিপিটির প্রথম পৃষ্ঠায় যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে, গুগল ক্রোম, সাফারি কিংবা মাইক্রোসফ্ট এজ-এর মতো ব্রাউজার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
চ্যাটজিপিটির প্রথম পৃষ্ঠায় গিয়ে নিজস্ব গুগল কিংবা মাইক্রোসফ্ট অ্যাকাউন্টের ইমেল আইডি দিয়ে সাইন আপ করতে হবে। নতুন অ্যাকাউন্ট খুললে তথ্য যাচাইয়ের জন্য একটি ইমেল পাঠাবেন কর্তৃপক্ষ। তার মাধ্যমে ভেরিফাই করাতে হবে।
লগ ইন করার পর 'ওপেনএআই'-এর তালিকাভুক্ত নানা উদাহরণ, সীমাবদ্ধতা এবং কারিগরির নমুনা দেখা যাবে। সেগুলোতে ক্লিক করে চ্যাটজিপিটির প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন ব্যবহারকারী।
চ্যাটজিপিটিকে যে কোনও ধরনের প্রশ্ন করা যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই সব প্রশ্নের জবাব বলে দেবে কৃত্রিম মেধার এই সফ্টওয়ার। মৌলিক কবিতা, নাটক কিংবা পরীক্ষার খাতায় প্রয়োজনীয় আস্ত রচনাও লিখে দেবে চ্যাটজিপিটি। যে কারণে এটি পড়ুয়াদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
সারা বিশ্বে বহু মানুষ ‘ওপেনএআই’-এর ব্রাউজারগুলো ব্যবহার করেন। চ্যাটজিপিটিতেও ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রচুর। ফলে এই সফ্টওয়ারে মাঝেমধ্যেই কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। 'এরর' বার্তা ভেসে উঠতে পারে চোখের সামনে। সে ক্ষেত্রে, পৃষ্ঠাটি আর এক বার রিফ্রেশ করলেই কাজ হবে।
শুধু প্রশ্নোত্তর নয়, চ্যাটজিপিটিতে আক্ষরিক অর্থেই 'চ্যাট' করতে পারেন মানুষ। রোবটের সঙ্গে দিব্যি গল্প জুড়ে দেওয়া যায়। কৃত্রিম মেধার সাহায্যে স্বতন্ত্রভাবে প্রশ্নকারীর সঙ্গে কথোপকথন গড়ে তোলে চ্যাটজিপিটি।
প্রয়োজনে ব্যবহারকারীকে সৎ পরামর্শও দেয় চ্যাটজিপিটি। নীতিশিক্ষার বুলিও এই 'চ্যাটে' দেখা যায়। কেউ কোনও অনৈতিক প্রশ্ন করলে, উপযুক্ত জবাব পায় এই সফ্টওয়্যার থেকে। কোনও প্রশ্নে ত্রুটি থাকলে, তা-ও ধরিয়ে দেয় চ্যাটজিপিটি।
কিছু দিন আগে পেনসিলভানিয়ার পাসপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্র পিটার স্নিপভ্যানগার্সের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। তিনি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ২ হাজার শব্দের একটি প্রতিবেদন লিখতে বলেন ‘চ্যাটবট’টিকে। পিটার জানিয়েছেন, মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে নির্ভুলভাবে ২০০০ শব্দের প্রতিবেদন তার লেখা হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত, এই ধরনের বড় প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করতে পিটারের সময় লেগে যায় প্রায় ১২ সপ্তাহ। চ্যাটজিপিটির ক্ষমতায় বিস্মিত ব্যবহারকারীও।
শিক্ষাক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির বাড়বাড়ন্তে প্রমাদ গুনছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃত্রিম মেধাকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে 'ওপেনএআই'। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে সার্বিকভাবে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মত অনেকের।
শিক্ষকদের আশঙ্কা এই প্রযুক্তির জন্য পড়ুয়াদের জানার আগ্রহ বা শিক্ষা, দুই-ই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে এই প্রযুক্তি সাহায্য করলেও অভিনব ফল করার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে মানুষের মেধাই, মত বিশেষজ্ঞদের।