আফ্রিকান শ্রেষ্ঠত্ব থেকে ৯০ মিনিটের দূরত্বে সালাহর মিসর
শেষ ষোলয় আইভরি কোস্টের বিপক্ষে শেষ শটটা তোলা ছিল মোহামেদ সালাহর জন্য। সেদিন শেষ শটে গোল করে দলকে নকআউট জয় এনে দিয়েছিলেন লিভারপুল স্ট্রাইকার। গত রাতে ক্যামেরুনের বিপক্ষে আফ্রিকান নেশন্স কাপের সেমিফাইনালেও টাইব্রেকারে গড়াল ম্যাচ, শেষ শটটা গতকালও তোলা ছিল তার জন্যেই। কিন্তু খেলাটা শেষ পর্যন্ত সে শটে গেলই না। গোলরক্ষক আবু গাবালের বীরত্বে তৃতীয় শট শেষ হতেই নিশ্চিত হয়ে গেল মিসরের জয়, নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে ‘ফারাও’রা চলে এসেছে আফ্রিকান শ্রেষ্ঠত্ব থেকে ৯০ মিনিটের দূরত্বে।
শেষ পাঁচ টাইব্রেকারেই শেষ হাসিটা হেসেছিল মিসর। তার ওপর আক্রমণে এক সালাহ বাদে আর কেউ তেমন কার্যকরি নন। পুরো টুর্নামেন্টে ৬৩০ মিনিটে মাত্র ৪ গোল, যার মধ্যে তিন গোলে আবার সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে সালাহর, করেছেন দুই গোল, করিয়েছেন একটি। সব মিলিয়ে রক্ষণাত্মক ফুটবলটাকেই কোচ কার্লোস কিরোজের কাছে বেশি যৌক্তিক মনে হয়েছে। সালাহরা সেটা পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণভাবে করে আসছেন।
তার আরও একটা পুনর্মঞ্চায়ন ঘটল আফকনের সেমিফাইনালে। শুরু থেকে মিসরের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে ক্যামেরুন। ১৮ মিনিটে মাইকেল এনগাদেউ-এনগাদুইয়ের হেড পোস্ট ও বারের কোণায় প্রতিহত হয়, ভিনসেন্ট আবুবাকারের শটও একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এর ফলে আরও একটা কর্নার যায় ক্যামেরুনের পক্ষে। পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় বল পেলেও মাইকেল এবার শটই নিতে পারেননি।
এরপর নিজেদের ভুলেই গোল হজম করে বসার দুয়ারে চলে গিয়েছিল ক্যামেরুন। ডিফেন্ডারের দুর্বল এক ব্যাকপাসে সালাহ বল পেয়ে গিয়েছিলেন ফাঁকায়। তবে আয়াক্স গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা সে যাত্রায় রক্ষা করেন ক্যামেরুনিয়ানদের।
এরপরই দুঃসংবাদ নেমে আসে মিসর শিবিরে। ৯০ মিনিটে কোচ কিরোজ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ডাগআউট ছাড়েন। কিছু পরে রেফারির সিদ্ধান্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সহকারী কোচ গোমাও হলুদ কার্ড দেখে বসেন। এর আগে নকআউটে আরও একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি। ফলে ফাইনালে ডাগআউটে থাকা হচ্ছে না তারও।
অবসাদের কারণেই হয়তো, যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে খানিকটা রক্ষণাত্মকই হয়ে পড়েছিল দুই দল। তবু মিসরের সামনে দুটো সুযোগ এসেছিল ম্যাচটা পকেটে পোরার। ১০০ মিনিটে বক্সের কোণা থেকে মোহামেদ সালাহর ট্রেডমার্ক শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় একটুর জন্য। ১১৭ মিনিটে রামাদান সোভির ক্রস খুঁজে পায়নি কাউকে। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
পেনাল্টি শুট আউটে শুরুটা ভালোই করেছিল ক্যামেরুন। আবুবাকার মিসর গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল করেন, এগিয়ে দেন দলকে। জবাবে মিসরও জিজুর প্রথম শটে গোল নিয়ে ১-১ সমতা আনে ম্যাচে।
পরের দুই শটেই মূলত খেলা শেষ হয়ে যায় ক্যামেরুনের। হ্যারল্ড মুকুদি ও জেমস লিয়া সিলিকির শট ঠিকঠাক পড়ে ঠেকিয়ে দেন মিসর গোলরক্ষক আবু গাবাল। এ সময় মিসর এগিয়ে গেছে কোয়ার্টার ফাইনাল নায়ক মোহামেদ আব্দেলমোমেনের গোলে, ব্যবধান বাড়িয়েছে মোহামেদ লাশিনের পেনাল্টিতে।
তখনো অবশ্য ক্যামেরুনের আশা বেঁচে ছিল। নিজেদের শট কাজে লাগাতে পারলে, মিসর মিস করে বসলে যে সাডেন ডেথে গড়াত খেলা! তবে তাদের ক্ষীণ আশাটাও শেষ করে দেন ক্লিন্টন এন’জিয়ি, শেষ শটটা তিনি উড়িয়ে মারেন আকাশে। তাতেই ক্যামেরুনের শিরোপা স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়, সালাহর মিসর চলে যায় ফাইনালে।
শিরোপার লড়াইটি হবে আগামী রোববার। লিভারপুল সতীর্থ সাদিও মানের সেনেগালের মুখোমুখি হবেন মোহামেদ সালাহ।
এনইউ