বার্সেলোনায় প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না খেলোয়াড়দের
মিরালেম পিয়ানিচ বার্সেলোনা ছাড়ার আগে একটা বোমাই ফাটিয়ে গেলেন। ক্লাবের হয়ে খুব একটা খেলার সুযোগ পাননি। এর দায় তিনি দেখছেন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের। তিনি জানালেন, কোচ কিছু কিছু খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এতটাই অবহেলা করতেন যে, তাদের অনুশীলনও দেখতে আসতেন না তিনি।
বার্সায় যোগ দেওয়ার এক বছরে খুব বেশি সময় খেলেননি তিনি। প্রাপ্য সময় পেতেই বার্সা ছেড়ে ধারে চলতি মৌসুমে যোগ দিয়েছেন বেশিকতাসে। অথচ ‘বাল্যকালের স্বপ্ন’ যখন পূরণ হয়েছিল তার, কি আশা নিয়েই না এসেছিলেন কাতালুনিয়ায়!
বার্সা ছাড়ার আগে মার্কাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘আমি সবসময়ই বার্সেলোনার খেলার ধরনকে ভালোবেসেছি, তাদের খেলাও দেখতাম। তাদের দর্শনটা ছিল পরিষ্কার, আমার খেলার ধরনও মিলে যেত। এখানে অনেক খেলোয়াড়কে দেখেছি, যাদের সঙ্গে খেলার স্বপ্নই দেখেছি আমি। বার্সেলোনার মতো ক্লাবে খেলাটা আমার একটা লক্ষ্য ছিল, কিন্তু আমি এমন জটিল পরিস্থিতি মোটেও আশা করিনি।’
তিনি বার্সেলোনায় আসার পর একটা ভিডিও প্রকাশ হয় তার, যেখানে দেখা যায় তার বাবা মা রীতিমতো কাঁদছেন। হাজার হোক, ছেলের আজন্ম স্বপ্নটা পূরণ হয়েছিল, আনন্দের কান্না তো কাঁদারই কথা! তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মায়ের কাছে এটা অনেক বেশি আবেগী একটা মুহূর্ত ছিল। আমি তাদের জন্য খুশি ছিলাম, কিন্তু এটা আমার জন্যেও স্বপ্নের মতো ছিল। আমি জুভেন্তাসে খুশিই ছিলাম। বার্সেলোনা দুই বছর ধরে আমাকে দলে ভেড়াতে চাইছিল, কিন্তু পারেনি। যখন সুযোগ এলো, তারা লুফে নিল। বাল্যকালের স্বপ্নের ক্লাবে এসে আমিও আনন্দিত ছিলাম, অনেক আশা ছিল। কিন্তু এখানে এসে পেলাম এক কোচকে যিনি... আমি জানি না...’
কিন্তু এখানে আসার পর সময়টা ভালো কাটেনি তার। কোনো এক অজানা কারণে কোচ কোম্যান তাকে ম্যাচেই নামাতেন না। কেন এমন হয়েছে, বিষয়টা এখনো ধোঁয়াশা তার কাছে। হবে না কী করে, কোচ কোম্যান যে কথাই বলতেন না তার সঙ্গে!
তিনি বলেন, ‘আমি এখনো জানি না, তিনি কি চাইতেন। আমাকে তিনি বোঝানোর চেষ্টাও করেননি, সমাধান পেতে কিছু করেননি তিনি। আমি তার কাছে গিয়ে জানতে চাইতাম, আমি কোন কাজটা ভুল করছি সেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইতাম। নিজেকে এখানে মানিয়ে নিতে, দলের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম।’
মূলত কোচের কারণেই যে কাতালুনিয়ায় আসার এক মৌসুম পর ক্লাব বদল, সেটাই যেন অনুচ্চারে বলে গেলেন পিয়ানিচ, ‘আমার খেলার সঙ্গে তার কোনো সমস্যা ছিল না, আমাকে কোনো উত্তরই দিতে চাননি তিনি। সময়ের সাথে সাথে এটা আরও খারাপের দিকেই গড়িয়েছে। দলের ভেতরের অনেক মানুষের কাছেও বিষয়টা বোধগম্য ছিল না। এরপরই এই দল ছাড়ার সুযোগটা এলো, আর আমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিলাম, কারণ আমি খেলতে চাইছিলাম।’
তাকে যেভাবে খেলা থেকে বাইরে রাখা হতো, সে ধরনটাও পছন্দ হয়নি তার। পিয়ানিচ বলেন, ‘আমাকে সরাসরি কেউ কিছু বলুক, আমি সেটাই চাই। কিন্তু তেমনটা হয়নি। এটা যোগাযোগের খুবই অদ্ভুত একটা উপায়। জীবনে এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো আমার। আমার অতীত কোচদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল। এখানে কী হয়েছে আমি জানি না। তিনি দায় নেননি কিছুরই, কারণ আমার মনে হয় সেটা সামলানো সম্ভব নয়।’
ম্যাসিমিলানো অ্যালেগ্রি, লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি, লুইস এনরিকেদের মতো কোচের অধীনে খেলেছেন তিনি। কিন্তু এমন কিছু এবারই প্রথম হয়েছে তার সঙ্গে। পিয়ানিচের ভাষ্য, ‘অ্যালেগ্রি, সারি, এনরিকে, স্প্যালেত্তি সবাই যোগাযোগ করতেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তিনি খুবই অদ্ভুত এক কোচ। যদি তিনি বলতেন, শুধু রোটেশনের কারণে তুমি সুযোগ পাচ্ছ না, তাহলে আমি সেটা মেনে নিতাম। কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। তিনি আমার সঙ্গে কখনোই কথা বলতে চাননি।’
তবে এই দলে বসনিয়ান এই মিডফিল্ডারই শুধু একঘরে হয়ে পড়েননি। রিকি পুজও গেল মৌসুমে দলে হয়ে পড়েছিলেন ব্রাত্য। চলতি মৌসুমে বার্সা যুব দলের অধিনায়ক অ্যালেক্স কোলাদোর সঙ্গেও হচ্ছে একই ব্যবহার। মেসি চলে যাওয়ার পর রাইট উইংয়ে যখন সুযোগ পাওয়ার কথা কোলাদোর, তখনই ১৬ বছর বয়সী অস্ট্রিয়ান স্ট্রাইকার ইউসুফ দেমিরে ভরসা রাখা শুরু করেছেন কোম্যান। তালিকাটা এখানেই শেষ নয়। পিয়ানিচ জানালেন, তাদের সঙ্গেও একই ব্যবহার করা হয় এখানে।
তিনি বলেন, ‘আমি একা ছিলাম না। এমন অনেক খেলোয়াড়ই দেখবেন আপনি। আমি তাদের নিয়ে কথা বলতে চাই না, তারা চাইলে তাদের বিষয়টা বলতে পারে। আপনি জানেন বিষয়টা কেমন? ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আমি খুবই কম খেলেছি। আমি খুবই হতাশ ছিলাম। আমি বলতে পারতাম, আমার তিন বছরের একটা চুক্তি আছে, আর তাই আমার কোনো কিছুর পরোয়া নেই। কিন্তু আমি মোটেও তেমন নই।’
পিয়ানিচ একে দেখছেন সম্মানের অভাব হিসেবে। এতটাই যে, বার্সেলোনা কোচ নাকি এসব খেলোয়াড়ের অনুশীলনই দেখতে আসেন না আদৌ! বললেন, ‘ক্লাবটাতে সম্মানের অভাব আছে, খেলোয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না এখানে। যারা অনুশীলনে ভালো করেছে, কিন্তু এরপরও খেলতে পারেনি। কোচ কখনোই অনুশীলনে আসেননি, যারা খেলছে না তাদের মনোভাব কী, কী করে অনুশীলন করছে তা দেখতে। এমন আমি প্রথমবার দেখছিলাম। এমন হলে খেলোয়াড় অনুপ্রেরণা পাবে কী করে? এটা আমার দেখা সবচেয়ে বাজে বিষয় ছিল, সম্মানের অভাবটা। আমরা যারা খেলছি না, তাদের জন্য এটা খুবই কঠিন বিষয় ছিল। এখন আমি একটা সমাধান খুঁজে পেয়েছি, এখন আমি সুখী।’
এনইউ