টাকা নিয়ে ভাবনা নেই, এক নম্বর দল গড়বে মোহামেডান
দেশের ফুটবলে অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাক্ষী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ঐত্যিহবাহী এই ক্লাবের ফুটবল দল লিগ শিরোপাহীন প্রায় দুই দশক। চলমান লিগের দ্বিতীয় লেগে টানা দুই ম্যাচ জিতেছে সাদা কালোরা। মোহামেডানের নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ফুটবলে সাফল্য ফেরানো। ক্লাবের অন্যতম পরিচালক বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মো: আলমগীর মোহামেডানের নতুন ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান। শিরোপা খরা কাটানো ও সমর্থকদের ফেরাতে মোহামেডানের ভাবনা প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নতুন ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান।
আপনি ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেই স্বীকৃত। ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান কতটুকু চ্যালেঞ্জ আপনার জন্য ?
আলমগীর: সংগঠকদের কাজ সুন্দর পরিকল্পনাকে কার্যত বাস্তবায়ন করা। এই কাজটি প্রায় সব জায়গায় একই রকম। এটাকে কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডান। মোহামেডানের জনপ্রিয়তার মূলে ফুটবল। সেই ফুটবল লিগে ২০০২ সালের পর আর শিরোপা নেই ক্লাবটির। আপনি চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় সেই শিরোপা পুনরুদ্ধার কতটুকু সম্ভব?
আলমগীর: আমাদের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ দুই বছর। প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ বর্তমানে চলছে। এই লিগে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শীর্ষ তিনে থাকা। পরের মৌসুমটিই মূলত আমরা পাবো পুরোপুরি। পরের মৌসুমে আমরা এক নম্বর হওয়ার জন্যই দল গড়ব।
বর্তমানে বসুন্ধরা কিংস সেরা দল। এরপর ঢাকা আবাহনী। এই দুই দলকে টপকে মোহামেডান সেরা দল গড়তে পারবে কি?
আলমগীর: প্রয়াত বাদল দার উদ্যোগে গত বছর মোহামেডান দল গড়েছে বেশ সংকটপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে। এই মৌসুমের মাঝামাঝি আমরা নতুন কমিটি দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বিশেষ করে ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। তাদের উন্নত আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি বোনাসও থাকছে। এই দলেও বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। সাইফের বিপক্ষে সলেমনের (মালির ফুটবলার) দ্বিতীয় গোলটি তো বিশ্বমানের। আমাদের এই দলের সাথে আরও কয়েকজন যোগ হলে অবশ্যই আমরা শিরোপার জন্য লড়াই করতে সক্ষম হবো। ফুটবল ফেডারেশনের কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা থাকবে রেফারিং যেন সঠিক ও নিরপেক্ষ হয়। ক্লাবগুলো অনেক অর্থ বিনিয়োগ করে ফুটবলে। খেলোয়াড়, কোচরা সবাই পরিশ্রম করে। রেফারির একটি ভুল বা সাহসী সিদ্ধান্তের অভাবে সব কিছু পন্ড হয়ে যেতে পারে। তাই রেফারিংয়ের দিকে নজর রাখার অনুরোধ থাকবে আমাদের।
ফুটবল কমিটির পাশাপাশি টেকনিক্যাল কমিটিও করা হয়েছে। দুই কমিটির মধ্যে ভারসাম্য থাকবে কিভাবে?
আলমগীর : টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়েছে মোহামেডানের সাবেক তারকা ফুটবলার দিয়ে। তারা লিগের, টুর্নামেন্টের খেলা দেখবেন। আমাদের দলের পাশাপাশি অন্য দলগুলোরও পর্যালোচনা করে আমাদের কমিটিকে বিভিন্ন রিপোর্ট দেবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা খেলোয়াড় সংগ্রহ করব।
বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবলের সাফল্য না থাকলেও ফুটবলারদের সম্মানী অনেক। গত দশ বছর মোহামেডান দলবদলের বাজারে সেভাবে নামেনি আর্থিক কারণে। আসন্ন মৌসুমে দলগঠনে আর্থিক পরিকল্পনা কেমন-
আলমগীর : দল গঠনে অর্থ কোনো বিষয় হবে না। আমাদের ফুটবল কমিটি বেশ শক্তিশালী হয়েছে। এরা সবাই মোহামেডানে ফুটবলে আর্থিকভাবে সাহায্য করার সামর্থ্য ও ইচ্ছে উভয় রাখে। কমিটি ছাড়াও আমাদের সভাপতি ও পরিচালকবৃন্দরাও অত্যন্ত আন্তরিক ভালো দল গঠনের ব্যাপারে। অর্থ ভালো দল গঠনে কোনো অন্তরায় হবে না।
আপনি দেশের অন্যতম একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। সারা বিশ্বে ফুটবল একটি বড় বাণিজ্য। বাংলাদেশে মোহামেডান-আবাহনী অনেক সমর্থকপুষ্ট দল হওয়ার পরেও এই দুই ক্লাব এখনো পেশাদারিত্ব আদলে দাঁড়াতে পারেনি।
আলমগীর: আমাদের সামনে এখন মূল লক্ষ্য সামনের মৌসুমে ভালো দল গড়া। অন্য বিষয়গুলো আমরা পর্যায়ক্রমে গুরুত্বের সাথে দেখব।
এখন রাস্তায় বের হলে অনেককে দেখা যায় কিংস ও সাইফের জার্সি গায়ে পড়া। সমর্থকদের জন্য মোহামেডানের কি এ রকম কোনো পরিকল্পনা আছে?
আলমগীর: সমর্থকরাই মূলত ফুটবলের প্রাণ। সমর্থক ছাড়া খেলায় উন্নতি করা সম্ভব নয়। সারা দেশে মোহামেডানের অনেক সমর্থক রয়েছে। সমর্থকদের জার্সিসহ আরও অনেক বিষয় আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পরিকল্পনা করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক সমর্থক রয়েছে। সেই দিকটিও আমরা মাথায় রাখছি।
প্রথম পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে বলেছিলেন, ‘ছোট খেলাগুলোতেও ফিরবে মোহামেডান’। আগে ব্যাডমিন্টন, দাবায় মোহামেডানের দাপট ছিল। এগুলোতে ফিরবে কি মোহামেডান। আপনি নিজেও সাঁতার ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি (সিনিয়র সহ-সভাপতি)। সাঁতারে মোহামেডানকে কি দেখা যাবে?
আলমগীর: আমরা এখন ফুটবল ও ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। অন্য খেলাগুলোতেও মোহামেডান ফিরবে নিশ্চয়ই। সাঁতারে এই বছর হয়তো সম্ভব না। আগামী বছর সাঁতারে মোহামেডানের বিষয়টি বিবেচনা করব।
দুই বছর পর একজন পরিচালক হিসেবে মোহামেডানকে কোথায় দেখতে চান?
আলমগীর: আমরা মাঠে ও মাঠের বাইরে উভয় জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। শিরোপার পাশাপাশি সমর্থকরা মাঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের সমর্থন দেবে। আগের সেই মোহামেডানের উৎসব-উন্মাদনা সেই জায়গায় দেখতে চাই।
এজেড/এটি/এমএইচ