মার্টিনেজের সফর: প্রাপ্তি ছাপিয়ে বিচ্যুতি!
১১ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসেছিলেন তিন যুগ পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক গোলরক্ষক এমিলিয়েনো মার্টিনেজ। এত সংক্ষিপ্ত সময়েও নানা ঘটনায় এখনো আলোচনায় সফরটি। ক্রীড়াপ্রেমী ও সমালোচকদের ব্যবচ্ছেদে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারকার আগমনে প্রাপ্তির চেয়ে বিচ্যুতিই ধরা পড়ছে বেশি!
বাংলাদেশের মানুষ ক্রীড়াপ্রেমী। সেই ক্রীড়াপ্রেমের মধ্যে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আরো একটু বেশি। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থকদের অকৃত্রিম ভালোবাসার টানেই ঢাকায় এসেছেন মার্টিনেজ। আর্জেন্টাইন এই গোলরক্ষক ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপই বাংলাদেশে এসেছেন। সেটা অবশ্য নিজের গাটের পয়সা খরচ করে নয়; তার এবং তার সফরসঙ্গীর ভ্রমণ এবং আনুষাঙ্গিক ব্যয় বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হয়েছে।
মার্টিনেজের সফরের ব্যয় বহন করেছে নেক্সট ভেঞ্চার্স নামক কোম্পানি যা ফান্ডেড নেক্সটেরও একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের শিল্প-ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তিই এই প্রতিষ্ঠানের নাম সেভাবে আগে শুনেননি। এই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব উদ্যোগে মার্টিনেজের সফর হওয়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারকার আগমন থেকে বিদায় পর্যন্ত সব কিছুর ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বও ছিল তাদের। সেই কর্তৃত্বপনার কিছু বিষয়ে বিচ্যুতিগুলো ফুটে উঠেছে।
মার্টিনেজের সফরের ব্যয় বহন করেছে নেক্সট ভেঞ্চার্স নামক কোম্পানি যা ফান্ডেড নেক্সটেরও একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের শিল্প-ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তিই এই প্রতিষ্ঠানের নাম সেভাবে আগে শুনেননি। এই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব উদ্যোগে মার্টিনেজের সফর হওয়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারকার আগমন থেকে বিদায় পর্যন্ত সব কিছুর ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃত্বও ছিল তাদের। সেই কর্তৃত্বপনার কিছু বিষয়ে বিচ্যুতিগুলো ফুটে উঠেছে।
গতকাল ভোরে সোয়া পাঁচটায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান মার্টিনেজ ও তার সফরসঙ্গীরা। মার্টিনেজের খবর সংগ্রহের জন্য মিডিয়া কাকডাকা ভোরে বিমানবন্দরে গিয়েছিল। মার্টিনেজকে মিডিয়া ও জনসম্মুখে না এনে সরাসরি হোটেল ওয়েস্টিনের উদ্দেশে নেন আয়োজকরা। হোটেল ওয়েস্টিনে ঘন্টা তিনেক বিশ্রাম নিয়ে নেক্সট ভেঞ্চার অফিসের উদ্দেশে রওনা হন মার্টিনেজ।
আরও পড়ুন: ভক্তদের উন্মাদনা না দেখেই চলে গেলেন মার্টিনেজ
উত্তর বাড্ডাস্থ নেক্সট ভেঞ্চার অফিসেও ছিল অসংখ্য গণমাধ্যম। এত সংখ্যক গণমাধ্যম দেখে বেশ উৎসাহিতই দেখা গিয়েছিল মার্টিনেজকে। বাংলাদেশে মিডিয়ায় কথা না বলার ব্যাপারে চুক্তিগত বিষয় থাকলেও ন্যূনতম হাত নাড়িয়ে ছবি ও ফুটেজ গ্রহণের সৌজন্যতায় নিশ্চয়ই কোনো বাধা নিষেধ ছিল না। মার্টিনেজ সেই সৌজন্য প্রদর্শনের সুযোগও পাননি।
মার্টিনেজ নেক্সট ভেঞ্চার অফিসে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই উপস্থিত হন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা। যিনি অন্তঃপ্রাণ আর্জেন্টিনা সমর্থক। পৌনে এক ঘন্টা পর মার্টিনেজ ও মাশরাফি দুই জনই এক সঙ্গে ভবন ত্যাগ করেন। এবারও যথারীতি মার্টিনেজকে অপেক্ষারত গণমাধ্যম ঠেলেই বের হতে হয়েছে।
মার্টিনেজ চলে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর ঐ অফিস থেকে বের হন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। মার্টিনেজের এই অফিসে অবস্থানকালের কর্মকান্ড ও আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে তিনিই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ফান্ডেড নেক্সট প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্ণধাররা জাতীয়ভাবে তেমন পরিচিত না হলেও প্রতিমন্ত্রীর বেশ কাছেরই বলে জানিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের কাছের ব্যক্তি বা বন্ধুরাই মার্টিনেজকে দেখার জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন যেখানে সুনির্দিষ্ট অন্য কোনো ক্রাইটেরিয়া ছিল না মন্ত্রীর ভাষ্যমতে।
মার্টিনেজ যখন বিমানবন্দরে পৌঁছান বাংলাদেশ ফুটবল দল তখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে ভারত থেকে মাত্র দেশে পৌঁছায়। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া অপেক্ষায় ছিলেন মার্টিনেজের সাক্ষাতের জন্য। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক অপেক্ষারত এই বার্তা মার্টিনেজের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া হলেও তারা সেটি কর্ণপাত করেননি। উল্টো দ্রুতগতিতে মার্টিনেজকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করানো হয়।
মার্টিনেজের মতো একজন বৈশ্বিক ফুটবল তারকার অনুষ্ঠানে ফুটবলপ্রেমী দেশে কোনো বর্তমান বা সাবেক ফুটবলার নেই অথচ একজন মন্ত্রী ও একজন এমপি সপরিবারে উপস্থিত। এ নিয়ে ক্রীড়ামোদীর রীতিমতো কাঠগড়ায় আয়োজকরা। এর সঙ্গে ভেসে আসছে প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা প্রশ্নও।
মার্টিনেজ যখন বিমানবন্দরে পৌঁছান বাংলাদেশ ফুটবল দল তখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে ভারত থেকে মাত্র দেশে পৌঁছায়। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া অপেক্ষায় ছিলেন মার্টিনেজের সাক্ষাতের জন্য। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক অপেক্ষারত এই বার্তা মার্টিনেজের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া হলেও তারা সেটি কর্ণপাত করেননি। উল্টো দ্রুতগতিতে মার্টিনেজকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করানো হয়।
আরও পড়ুন: কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী থেকে মার্টিনেজ, বাংলাদেশে পা পড়েছে যাদের
মার্টিনেজের এই সফরের সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন -যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কোনোভাবে সম্পৃক্ত না। আয়োজক প্রতিষ্ঠানও ক্রীড়া সংস্থাকে এড়িয়েই চলেছে আবার ক্রীড়ার প্রতিষ্ঠানগুলো এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার তেমন চেষ্টাও করেনি। এরপরও দৈবক্রমে বাংলাদেশ অধিনায়ক এবং মার্টিনেজের অবস্থান কাছাকাছি হয়েও সাক্ষাৎ না হওয়ায় বিচ্যুতির মাত্রা আরো বাড়িয়েছে। পেশাদারিত্ব-আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আন্তরিকত সৌহার্দ্য বড় এর নির্দশন বাংলাদেশের অধিনায়ক স্থাপন করলেও মার্টিনেজের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিরা তা করতে পারেননি। মার্টিনেজ বাংলাদেশ ছাড়ার মুহূর্তে এই দেশকে ভালোবেসে পোস্ট দিয়েছেন। এই দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে কিন্তু সেই ভালোবাসা প্রদর্শনের সুযোগ মানুষরা পাননি।
৪-৫ জুলাই কলকাতায় আসবেন মার্টিনেজ এটি নিশ্চিত হয়েছিল চলতি বছরের মে’র মাঝামাঝি। বিশ্বখ্যাত তারকাদের সফর ও চুক্তির বিষয়গুলো দেখভাল করেন ম্যানেজার কিংবা এজেন্টরা। তারকাদের ম্যানেজার বা এজেন্টদের সঙ্গে অন্য এজেন্ট/ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করে সফর/চুক্তি সম্পাদন করে। ভালোবাসা ও সৌজন্যতার মধ্যেও এখানে অন্তনির্হিত বিষয় ব্যবসা/মুনাফা। কলকাতার চেয়ে ঢাকায় মার্টিনেজের ভক্ত কোনো অংশে কম নয়। তাই কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত বাংলাদেশেও মার্টিনেজকে ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশেও আর্জেন্টিনার অনেক সমর্থক তাই ঢাকায় আসতে মার্টিনেজের একটা সবুজ সংকেতও ছিল।
মার্টিনেজের ঢাকা সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত ছিলেন। মার্টিনেজকে জনবিমুখ এবং মিডিয়াবিহীন করার পেছনে তার ভূমিকাই বেশি বলে ধারণা অনেকের। নেক্সট ভেঞ্চারও তার অনেক আইনকানুনে বাধা পড়েছে।
মার্টিনেজকে ঢাকায় আনতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে শতদ্রু দত্ত। দেশের শীর্ষ কর্পোরেটগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেছে শুরুতেই। পরবর্তীতে অর্থ আদান-প্রদানের মাধ্যম ও নানা বিষয়ের গভীরে যাওয়ার পর সামনে আসে বাংলাদেশের ডলার সংকট ইস্যু। এক পর্যায়ে মার্টিনেজের সফর বাতিলের উপক্রম হয়। শেষ পর্যায়ে মার্টিনেজের আর্থিক লাভ বাদ দিয়ে শুধু বিমান ভাড়া, নিরাপত্তা ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় প্রদানের শর্তে কয়েক ঘন্টার সফরের বন্দোবস্ত হয়। মার্টিনেজের ঢাকা সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত ছিলেন। মার্টিনেজকে জনবিমুখ এবং মিডিয়াবিহীন করার পেছনে তার ভূমিকাই বেশি বলে ধারণা অনেকের। নেক্সট ভেঞ্চারও তার অনেক আইনকানুনে বাধা পড়েছে।
মার্টিনেজ সংক্ষিপ্ত সফরসুচি ও আয়োজকরা নানা পারিপার্শ্বিকতায় অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর মেলবন্ধন ঘটাতে পারেননি। দেশের সমগ্র জনগণের প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারকাকে ঠিকই সময় দিয়েছেন। ১১ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত সফরে নানা বিচ্যুতি অপ্রাপ্তির মধ্যে মার্টিনেজ-শেখ হাসিনার ফ্রেমবন্দীর মুহূর্তটিই একমাত্র ও সেরা প্রাপ্তি।
এজেড/এফআই