মুন্সিগঞ্জে কিংসের শিরোপায় মোহামেডানের স্বপনের সুখ-দুঃখ
![মুন্সিগঞ্জে কিংসের শিরোপায় মোহামেডানের স্বপনের সুখ-দুঃখ](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2022July/untitled-11-20220718213938.jpg)
মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের মাঠে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা হ্যাটট্রিক শিরোপা উৎসব করছেন। স্টেডিয়ামের লাউঞ্জে থেকে অনুজ ফুটবলারদের উল্লাস দেখে অন্য রকম এক অনুভূতি পেলেন আশির দশকের তারকা ফুটবলার স্বপন কুমার দাস।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক স্বপন কুমার দাসের নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জ। এ মাঠে খেলেই তার বেড়ে উঠা। সেই মাঠে প্রিমিয়ার লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা হওয়ায় বেশ উচ্ছ্বসিত জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের ছেলে হিসেবে আজ আমার বেশ গর্বের দিন। দেশের সবচেয়ে বড় লিগের শিরোপা নির্ধারণ হলো আমাদের মুন্সীগঞ্জে। সেটাও আবার হ্যাটট্রিক। আমাদের মাঠটি এখন ফুটবল ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।’
স্বপন কুমার দাস অবশ্য এখন ঢাকাতেই থাকেন। আজকের ম্যাচটি দেখতে তিনি নিজ জেলায় এসেছিলেন। লাউঞ্জে এক সঙ্গে খেলা দেখছিলেন চার জাতীয় সাবেক অধিনায়ক স্বপন কুমার দাস, ইলিয়াস হোসেন, হাসান আল মামুন ও বিপ্লব ভট্টাচার্য।
স্বপন কুমার দাস তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণ সময় কাটিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে। ১৯৮০-৮৭ পর্যন্ত তিনি লিগে চার বার সাদাকালোদের হয়ে শিরোপা জিতেছেন। নিজে চারবার লিগ জিতলেও আজকের শিরোপা জিততে দেখা তার ভিন্ন অনুভূতি। তিনি বলে, ‘নিজে কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ফুটবলের সঙ্গে জড়িত চার দশকের বেশি সময়। অনেক সময় অনেক শিরোপা দেখেছি তবে নিজ জেলায় লিগের শিরোপা দেখা আসলেই ভিন্ন রকম অনুভূতি৷’
আরও পড়ুন : বসুন্ধরা কিংসের ইতিহাস
১৯৮৪ সালে ঢাকা মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন স্বপন কুমার দাস (সেই বছর কাজী সালাউদ্দিন ফুটবল থেকে অবসর নেন)। তার খেলোয়াড়ি জীবনে মোহামেডান অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখন সেই মোহামেডান লিগ জিতে না ২০ বছর। নিজ দলের শিরোপা না জেতা নিয়ে স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘আসলে এটা খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি মোহামেডান পয়েন্ট টেবিলের নিচে। এখন অবশ্য চেষ্টা করছে। জনি, সাব্বিরসহ অনেকে দলের সঙ্গে সময় দিচ্ছে। এটা খুব ভালে দিক।’
ঘরোয়া ফুটবলে হ্যাটট্রিক শিরোপার রেকর্ড ছিল এতদিন মোহামেডান ও আবাহনীর। এখন সেই রেকর্ডের অংশীদার বসুন্ধরা কিংস। নতুন ক্লাবের এ সাফল্য দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের জন্য ইতিবাচক মনে করে তিনি বলেন, ‘কিংসের এ সাফল্য নিশ্চয়ই আবাহনী ও মোহামেডানকে সচেতন করে তুলবে। তারা নিজেদের শিরোপা পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করবে৷’
তার ক্লাব মোহামেডান যেমন শিরোপা খরায় তেমনি তার জেলা মুন্সীগঞ্জেও অনেক দিন নেই জাতীয় কোনো ফুটবলার। এ নিয়েও বেশ অতৃপ্তি তার। এ বিষয়ে সাবেক এ তারকা ফুটবলার বলেন, ‘এক সময় নওশের ভাই, শরীফ ভাই, আমি জাতীয় দলে খেলেছি। এরপর মুন্সীগঞ্জ থেকে সেভাবে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি ফুটবলে। এর পেছনের মূল কারণ এখানে ধীরে ধীরে খেলার সংখ্যা কমে যাওয়া। খেলা আয়োজনে প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা সেটাও কম। ফলে এখান থেকে তেমন ফুটবলার জাতীয় পর্যায়ে আসেনি।’
আশির দশকে মুন্সীগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গন যে ভিন্ন ছিল সেটা বোঝা গেল তার এক মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আশির দশকের দিকে জাতীয় দল একবার মুন্সীগঞ্জে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল। সে সময় আমি পড়ি উভয় সংকটে। একদিকে মুন্সীগঞ্জ, আরেকদিকে জাতীয় দল। বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম সেদিন।’
১৯৮৮ সালের পর ঘরোয়া ফুটবল আর খেলেননি তিনি। এরপর মুন্সীগঞ্জে কয়েক বছর ব্যবসা করেছেন। তার দ্বারা ব্যবসা সম্ভব না ভেবে আবার ফুটবলে ফেরেন। স্বপন কুমার বলেন, আলুর ব্যবসা করেছিলাম কিছু দিন। দেখলাম ব্যবসা করতে গেলে অনেক কথা বলতে হয় ও কিছুটা ছয়-নয় হয়। যা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তখন টিপু ভাইকে (গোলাম সারওয়ার টিপু) বলি কোচিং করাব। তার নির্দেশনায় কোচিংয়ে যুক্ত হই।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ফুটবল কোচ হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। কয়েক বছর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ হিসেবে অবসরে গিয়েছেন। এখন ঢাকায় থাকলেও নিজ জেলায় সময় দেন কিছুটা। মুন্সীগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থায় সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন।
মুন্সীগঞ্জে প্রিমিয়ার লিগ আয়োজনের মাধ্যমে ফুটবলে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখানে ঢাকার কয়েকটি ক্লাব ভেন্যু করায় অনেক ম্যাচ হচ্ছে। এতে ফুটবলের চর্চা কিছুটা বাড়ছে। এর প্রভাব তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও পড়বে।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে গত দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম ভেন্যু মুন্সীগঞ্জ। বছর বছর ভেন্যু পরিবর্তন হওয়া বাংলাদেশের ফুটবলে অলিখিত নিয়ম৷ ফলে কিছু জেলায় ফুটবল সংস্কৃতি বিকশিত ও প্রসারিত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়।
এজেড