পাপুয়া নিউ গিনির ক্রিকেট যেন আমিনিদের ‘পারিবারিক সম্পত্তি’
পাপুয়া নিউ গিনির ক্রিকেটের সঙ্গে যেন চার্লস আমিনি জুনিয়রের পরিবারের সম্পর্কটা একটু বেশিই গভীর। পরদাদা, দাদা, বাবা, মা, ফুপু, ভাই... আমিনিদের কে খেলেননি ওশেনিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির হয়ে?
শুরুটা হয়েছিল কয়েক পুরুষ আগে। চার্লসের পরদাদা আমিনি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন, কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যানও তখন খেলা শুরু করেননি। খেলা শুরু করবেন কোত্থেকে? তার তো তখন জন্মই হয়নি! বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে যখন ক্রিকেটটা ছিল কেবলই অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের খেলা, সে যুগে তিনি ক্রিকেট দল গঠন করেছিলেন। সে দল নিয়ে তিনি নৌকা নিয়ে চলে যেতেন দেশটির রাজধানী পোর্ট মোরেসবিতে, যা পরে বনে যায় দেশটির ক্রিকেটের প্রাণকেন্দ্রও। চার্লসদের পূর্বসূরী তো বটেই, আমিনি তাই ছিলেন দেশটির ক্রিকেটের স্বপ্নদ্রষ্টাও।
বাবা খেলার মানুষ হলে যা হয়, ছেলে ব্রায়ানও বুঁদ হয়ে যান ক্রিকেটে। বাবার অনুপ্রেরণা তো ছিলই, অস্ট্রেলিয়ার টুউম্বাতে স্কুল জীবন কাটানোর ফলে ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্যতাটাও গড়ে ওঠে বেশ। শুধু সখ্যতাই নয়, পাপুয়া নিউ গিনির ইতিহাসের প্রথম স্থানীয় অধিনায়ক বনে যান তিনি। ১৯৭৫ সালে তার নেতৃত্বেই ফিজি সফরে যায় দলটি, এরপর ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও খেলেছে তার দল।
বংশ পরম্পরায় তিনিও ছড়িয়ে দিয়েছেন ব্যাট বলের খেলাকে। তবে এক দিক থেকে তিনি বাবাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তার সময়েই যে তার পরিবারে লিঙ্গ, বয়স নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট। কাঠ কেটে ব্যাট, আর কার্ডবোর্ডের প্যাড বানিয়ে বাড়ির উঠোনে দিব্যি চলত খেলা। ক্রিকেট হয়ে পড়েছিল পরিবারটার অবসরের সঙ্গী, আড্ডার উপজীব্য বিষয়বস্তু।
ব্রায়ান খেলা বন্ধ করলেও খেলাটাকে একেবারে ছেড়ে যাননি। পোর্ট মোরেসবির ক্রিকেট সংগঠক বনে গিয়েছিলেন তিনি। পরে পাপুয়া নিউ গিনির হাই কমিশনারও বনেছিলেন, কাজ করেছেন নিউজিল্যান্ডে। সেখানেই তার পরের প্রজন্মের ক্রিকেটের হাতেখড়ি।
ব্রায়ানের ছেলে চার্লস (চার্লস আমিনি জুনিয়রের বাবা) প্রথমবারের মতো খেলেন টার্ফের পিচে। পরিবার একটা সময় যখন ফিরল দেশে, তখনো চার্লস খেলা চালিয়ে গেছেন দিব্যি, ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। ১৯৯০ সালের দিকে বেশ কয়েক বছরই ক্রিকেট মাঠে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। বোন শেরিলও খেলেছেন ক্রিকেট; ভাই, বাবা, কিংবা দাদার মতো নাম কামাতে পারেননি হয়তো, কিন্তু এরপর পাপুয়া নিউ গিনি দলের মিডিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলেছেন বহু বছর।
চার্লসের বিয়ে হয় কুনের সঙ্গে। সেখানেও এ পরিবারের পিছু ছাড়েনি ক্রিকেট। সেই কুন আবার পাপুয়া নিউ গিনির নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক ম্যাচে না খেললেও নারী ক্রিকেট তখনো ছিল দেশটির। ২০০৬ সালে যখন জাপানের বিপক্ষে দলটি নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে, সেই দলেরও সদস্য ছিলেন কুন।
চার্লস আর কুনের ছেলেরাও বাবা, মা, ফুপু, দাদা, আর পরদাদার পরম্পরাটা ধরে রেখেছেন ভালোভাবেই। বড় ছেলে ক্রিস আমিনি ২০০৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলে গেছেন অধিনায়ক হিসেবে। কলিন, তার ছোটজন ২০১৩ অ-১৯ বিশ্বকাপে দলের অধিনায়কত্ব করেছেন, সেই দলে ছিলেন চার্লস আমিনি জুনিয়রও।
পাপুয়া নিউ গিনি নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে উঠে এসেছে এ বছর। শূন্য রানে দুই উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে, তখন উইকেটে এলেন চার্লস জুনিয়র। তার ব্যাট থেকেই এলো দলের প্রথম রানটা, বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের প্রথম রান। পাপুয়া নিউ গিনির ইতিহাসে এত অবদান যে পরিবারের, সে পরিবারের কারো ব্যাট থেকেই দলটার রানের খাতা খুলুক, ক্রিকেট-বিধাতাও হয়তো চেয়েছিলেন সেটাই!
এনইউ