সিরাজের যে জাদুতে কুপোকাত ক্রিকেটাররা
মোহাম্মদ সিরাজ, ভারতীয় ক্রিকেটে তার উত্থান ঘটেছে বেশ রাজকীয়ভাবেই। বাবার কাছ থেকে ৭০ রূপি নিয়ে প্রতিদিন অনুশীলনে যেত যে ছেলেটা, সেইই এখন বিশ্বক্রিকেটের বড় এক নাম। হায়দ্রাবাদের গলি থেকে বিশ্বক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে খুব বেশি সময় লাগেনি তার। তবে দ্রুত উত্থানের পর নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি সিরাজ। বরং প্রতিভাকে প্রতিনিয়ত যত্ন করেছেন। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়।
অভিষেকের পর থেকে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন সিরাজ। সাফল্যের সন্ধানে থাকা এই পেসার নিজেকে দক্ষ করে তুলেছেন ‘ওয়াবল’ সিমে (wobble seam)। নিজেকে এই ধরণের বলে রীতিমত বিশেষজ্ঞ করে তুলেছেন সিরাজ। ওয়াবল সিমের মূল কথা ব্যাটসম্যানকে সুইং দিয়ে বিভ্রান্ত করা। শেষ পর্যন্ত এই ধরণের বলের দিক বুঝতে পারা কষ্টকর।
ওয়াবল সিমের আবিষ্কারক কে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ক্লার্কই মূলত এর শুরু করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ভার্নন ফিলেন্ডারকেও এর ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে মূলত ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের হাতেই ওয়াবল সিম বড় আকারে ব্যবহার হতে শুরু করে। টেস্ট ক্রিকেটের কিংবদন্তি বনে যাওয়া এই পেসার আবার এর প্রেরণা পেয়েছিলেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আসিফ থেকে।
ওয়াবল সিম কী?
ওয়াবল সিম মূলত বল ধরার একটি বিশেষ পদ্ধতির উপরেই নির্ভর করে। এই বলের জন্য বলের সুতার দুই পাশে তর্জনি এবং মধ্যমা আঙুল রাখা হয়। তবে এক্ষেত্রে আঙুল অনেকটা ফাঁকা করে রাখা হয়। যার ফলে বলের সুতা বা সিম দৃশ্যমান থাকে। তবে এরচেয়ে বড় কারুকাজ হয় বল ছাড়ার সময়।
ওয়াবল সিমের ক্ষেত্রে বল ছাড়ার সময় কবজি শক্ত রাখা হয়। বল ছাড়ার সময় আঙুলে বাড়তি চাপ না দিয়ে কেবল কবজির জোরের উপরে নির্ভর করতে হয় বোলারকে। এমন বিশেষ পদ্ধতির কারণে বল বাতাসে পাশাপাশি অবস্থায় কিছুটা বাড়তি সুইং সৃষ্টি করে। এতেই মূলত বিভান্ত হয়ে পড়েন ব্যাটাররা।
ওয়াবল সিমে সিরাজ কেন দক্ষ?
জেমস অ্যান্ডারসনের এমন বোলিং বর্তমানে অনেকেই নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বদল করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সিরাজই সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন। সিরাজের রানআপ এবং বল ছাড়ার ধরণ তাকে এমন বোলিংয়ের জন্য দক্ষ করে তুলেছে। সিরাজের রানআপ অনেকটাই বাঁহাতি পেস বোলারদের মত। তবে সিরাজ পুরোদস্তুর ডানহাতি। সেই সঙ্গে জোরে বল ফেলা এবং কুইক বাউন্সার আদায় করার সক্ষমতা আছে তার।
২০১৭ আইপিএলে সিরাজের এই বিশেষ গুণে আকৃষ্ট হয়েছিলেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার এবং কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ। সিরাজের উত্থান সেই সময় থেকেই। রানআপে বিভ্রান্ত করার পর বোলিং পজিশনে বিভ্রান্ত করার এই ক্ষমতা সিরাজকে নিয়ে এসেছে এতটা দূরে।
ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত বেশ সফলই বলা চলে সিরাজকে। ২১ টেস্টে ৫৯ উইকেট আর ২৯ ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৫৩ উইকেট। গতকালের এশিয়া কাপ ফাইনালেও দেখা গিয়েছে সিরাজের বোলিং কারিশমা। ২১ রানের ৬ উইকেট শিকারের পর ক্রিকেট দুনিয়ার স্পটলাইটে আছেন হায়দ্রাবাদের এই পেসার।
জেএ