শঙ্কার পর বাংলাদেশের স্বস্তির জয়
আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে এই টেস্ট খেলার আগে মোট ১১টি দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ ছিল বাংলাদেশের। আর এই ১১ দলের বিপক্ষেই সাদা পোশাকে প্রথম দেখায় বাংলাদেশের সঙ্গী ছিল হার। তবে এবার সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পেরেছে টাইগাররা। আইরিশদের বিপক্ষে লাল বলের ক্রিকেটে প্রথম দেখায় ৭ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
১৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২৭ ওভার ১ বল খেলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। আর প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ছিল ৩৬৯ রান। আয়ারল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংসে করেছিল ২১৪ রান, আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯২ রানে থেমেছিল আইরিশরা।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল বাংলাদেশ। শুধু খেলার ধরনে নয়, ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ টিম ম্যানেমজমেন্ট। প্রথম ইনিংসে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী ছিল নাজমুল হোসেন শান্ত, তবে আজ ইনিংসের গুরাপত্তন করেছেন লিটন দাস।
টেস্টে সাধারণত লোয়ার মিডল অর্ডারেই ব্যাটিং করতে দেখা যায় লিটনকে, তবে আজ ওপেনিংয়ে এসে ব্যাটিং করেছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। তার খেলা ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে কাউ কর্ণার দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খুলেন। পরের বলেই আবার পয়েন্টে দারুণ এক কাট শটে বাউন্ডারির দেখা পান এই ওপেনার।
এমন দুর্দান্ত শুরুর পর সেটা ধরে রেখে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন তিনি। আর তাতেই যেন বিপদ ডেকে এনেছেন লিটন। মার্ক অ্যাডায়ারের করা পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি শট লেন্থে ছিল। এমন বলে লোভ সংবরণ করতে পারেননি এই ওপেনার, তাতে পুল করতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং হয়নি, ফলে বল তার হ্যালমেট ছুঁয়ে স্টাম্পে আঘাত হানে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ বলে ২৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
লিটন ফিরে গেলেও অপর প্রান্তে আগ্রাসী ছিলেন তামিম। এই অভিজ্ঞ ওপেনারও শুরু থেকেই হাত খুলে শট খেলেছেন। তিনে খেলতে নেমে একই ভঙ্গিতে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন শান্তও। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি এই ব্যাটার। ৪ রান করে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। তার বিদায়ে দলীয় হাঁফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার আগেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর লাঞ্চ বিরতির আগ পর্যন্ত বাকিটা সময় ভালো ভাবেই পার করেছেন মুশফিক এবং তামিম। বিশেষ করে মুশফিক দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন তামিম ইকবাল। আজ দেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সেই এলিট ক্লাবে যোগ দিলেন মুশফিকুর রহিম।
লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না তামিম। ইনিংসের ২১তম ওভারে হোয়াইটের করা শট বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন তামিম। এই ওপেনার সাজঘরে ফেরার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন ৬৫ বলে ৩১ রান।
এরপর বাকি কাজটুকু মুমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সেরেছেন মুশফিক। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এই ইনিংসেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তুলে নিয়েছেন ব্যাক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি। চতুর্থ উইকেটে এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সহজেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে গত দিনের ৮ উইকেটে ২৮৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল আয়ারল্যান্ড। সকাল বেলা উইকেটে পেসারদের জন্য যে বাড়তি সুবিধা থাকে সেটা পুরোপুরি আদায় করেছেন আজ এবাদত হোসেন। এদিন নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই পেসার।
ইনিংস হার এড়িয়ে আইরিশদের ম্যাচে ফেরানো অ্যান্ডু ম্যাকব্রাইন এবাদতের পোলার লেন্থের ডেলিভারীতে রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখেছেন। ইনিংসের ১১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তার স্টাম্প উপড়ে দিয়েছেন এবাদত। সাজঘরে ফেরার আগে গত দিনের রানের সঙ্গে যোগ করতে পেরেছেন কেবল ১ রান। শেষ পর্যন্ত ৮ চার আর এক ছক্কায় ১৫৬ বল খেলে ৭২ রান করেছেন তিনি।
এর তিন ওভার পর আবারও এবাদতের আক্রমণ। এবার এই পেসারের শিকার গ্রাহাম হিউম। ১১৬তম ওভারের শেষ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে রেখেছিলেন এবাদত, সেখানে অফ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানা ছুয়ে বল চলে উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে। হিউমকে ১৪ রানে ফিরিয়ে আইরিশদের কফিনে শেষ পেরেকটা মারেন এই পেসার। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯২ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৯
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৮৬/৮) ১১৬ ওভারে ২৯২ (ম্যাকব্রাইন ৭২, হিউম ১৪, হোয়াইট ০*; সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৪২-১৬-৯০-৪, মিরাজ ৩০-৮-৫৮-০, ইবাদত ১৫-৩-৩৭-৩, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০, মুমিনুল ১-০-২-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩৮) ২৭.১ ওভারে ১৩৮/৩ (তামিম ৩১, লিটন ২৩, শান্ত ৪, মুশফিক ৫১*, মুমিনুল ২০*; অ্যাডায়ার ৬-০-৩০-১, ম্যাকব্রাইন ১৩.১-০-৫২-১, হোয়াইট ৭-০-৪৩-০, টেক্টর ১-০-৫-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।
এইচজেএস