গালির ভয়ে বাবাকে মাঠে আসতে নিষেধ করেন তানভীর
সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালের মঞ্চে আলো ছড়িয়েছেন তানভীর ইসলাম। কেবল ফাইনালই নয়, পুরো টুর্নামেন্টেই এ স্পিনার ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন। তার অসাধারণ নৈপুণ্য ভূমিকা রেখেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শিরোপা জয়েও। আগের আসরেও শিরোপাধারী দলে ছিলেন তানভীর। প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ না মিললেও সর্বোচ্চ উইকেট (১৭) শিকারি হিসেবেই তিনি টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কল্যাণে তানভীর হয়ে উঠেছিলেন কুমিল্লার ভরসার প্রতীক। কেবল এবারের বিপিএলই নয়, গত আসরেও তানভীর কুমিল্লার জার্সিতে ১৬ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়াও, কয়েক বছর ধরেই তানভীর ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ। ধারাবাহিকভাবে সেখানেও পারফর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। তবে এখনো জাতীয় দলে ডাক পাননি তানভীর। তাই বিপিএলের আসর শেষে ফাঁকা সময় পার করছেন তানভীর।
বিপিএল জার্নি নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করেছে ঢাকা পোস্ট। সেখানে বিপিএলের টিম, ড্রেসিংরুম, সতীর্থদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত এবং পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় তানভীরের। নিচে বাঁ-হাতি এই স্পিনারের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো...
কেমন গেল এবারের বিপিএল?
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো উপভোগ করেছি। সবসময় চেষ্টা করি খেলাটাকে উপভোগ করতে।
গেল মৌসুমে ১৬ উইকেটের পর এবার পেয়েছেন ১৭ উইকেট; এবারের বিপিএল কি ভাবনা নিয়ে শুরু করেছিলেন?
তানভীর : ভালো খেলার চেষ্টা সবসময় ছিল। হয়ে গেছে এখন আলহামদুলিল্লাহ। তবে উইকেটে এসব নিয়ে না ভেবে মাঠে নিজের সেরাটা দিয়েই খেলার চেষ্টা থাকে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই পারফর্ম করছেন, তবে এখনো জাতীয় দলের সুযোগ মেলেনি। পরিবার থেকে এ নিয়ে কোনো কথা হয় কি-না?
তানভীর : না, না এরকম আসলে কখনো কথা হয় না। পরিবার সবসময় আমাকে সাপোর্ট দেয়, খারাপ কিংবা ভালো সময়ে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জাতীয় দলে নিজের সুযোগ কতটা দেখছেন?
তানভীর : এটা তো এখন আর আমার হাতে নেই ভাই। বিষয়টা এখন সম্পূর্ণ সিলেক্টরদের ওপর। তারা যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই হবে।
কুমিল্লার হয়ে খেলার সময় কোচ বা অধিনায়কের থেকে কতটা সাপোর্ট পান?
তানভীর : স্যার (কোচ সালাউদ্দিন) সবসময় ম্যাচের আগে আমাকে একটা প্ল্যান দেন। বলে দেন ম্যাচের কোন সময়ে কী করতে হবে। পাওয়ারপ্লের ওভারে কীভাবে বল করব, ঠিক সেইভাবেই অনুশীলনে আমাকে বল করান স্যার। এছাড়া কায়েস ভাই স্যারের প্ল্যানটাই বাস্তবায়ন করার কথা বলেন। সবসময় তাদের থেকে অন্যরকম একটা সাপোর্ট পেয়ে থাকি।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কুমিল্লার মালিক নাফিসা কামালের থেকে কেমন অনুপ্রেরণা পেলেন?
তানভীর : শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই নয়, সবসময়ই তিনি আমাকে ভালো বলেন। আমাকে পছন্দ করেন এবং সবসময়ই প্রেরণা যোগান। লোকাল খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা তরুণ, তাদের সবসময় প্রাধান্য দেন তিনি। আমাকে কিংবা পুরো দলকেই তিনি সবসময় ভালো উপদেশ দিয়ে থাকেন।
বিপিএলে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বোলিং নিয়ে কি কোনো কথা হয়েছে?
তানভীর : আসলে আমার বলের গতি একটু বেশি। একটু জোরেই বল করি আমি। অনেকে বলত আমাকে যে জোরে বল করি একটু আস্তে বল করো। তারপর সাকিব ভাইকে বিষয়টি জানাই। এরপর তিনি আমাকে বললেন যে, বর্তমান ক্রিকেটে আস্তে বল থেকে জোরে বলটাই গুরুত্বপূর্ণ। গতি বলের ওপর যত কাজ করতে পারব, ততই আমার জন্য ভালো। এর মাধ্যমে সফল হতে পারব বলে জানান সাকিব ভাই। ভ্যারিয়েশন তো অবশ্যই থাকবে, গতির বলেও সেটি ধরে রাখতে পারলেই ভালো।
ফাইনালে জয়ের পর পরিবারের অনুভূতি কী?
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ বাবা-মা অনেক খুশি হয়েছেন।
আপনার বাবা-মা মাঠে এসে কখনো আপনার খেলা দেখেছেন?
তানভীর : না এখন পর্যন্ত দেখেননি, তবে অবশ্যই দেখার ইচ্ছা আছে। আব্বু ফাইনাল খেলা দেখতে চেয়েছিলেন, আমিই আসতে বারণ করেছিলাম।
কেন বারণ করলেন, একবারে জাতীয় দলের জার্সি পরিহিত অবস্থায় পরিবারকে মাঠে আনবেন এমন প্ল্যান কি-না?
তানভীর : না, না এরকম কিছু না, এখন ভাই ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সমস্যা একটাই। ভালো খেললেও গালি, খারাপ খেললেও গালি শুনতে হয়। এখন আব্বু মাঠে থাকা অবস্থায় এমনটা যদি হয় তার অবশ্যই খারাপ লাগবে। এ কারণেই মূলত আব্বুকে আসতে না করেছিলাম। বাসায় বসেই খেলা দেখুক।
উইকেট পেলে মুখে আঙুল দিয়ে রাখেন এই উদযাপনটা সাড়া ফেলেছে ক্রিকেট পাড়ায়, এর পেছনের রহস্য কি?
তানভীর : এটার পেছনে উদ্দেশ্য তেমন কিছু না আসলে। কে কী ভাবে জানি না, তবে আমি এটা ভেবে করি যে, সবাই চুপ করো। আমরা কিছুই না। যা করার আল্লাহ্ করছেন। এজন্যই আঙুলটা ওপরের দিকে দেই। অনেকে মনে করে আউটের ইঙ্গিত দিচ্ছি। কিন্তু আমি আসলে ওপরওয়ালার দিকে ইঙ্গিত করি।
বিদেশি অনেক ক্রিকেটারদের পেয়েছিলেন এ বছর, এমন কোনো ক্রিকেটার রয়েছে কি- যার থেকে নিজেকে বদলে ফেলার মতো পরামর্শ পেয়েছেন?
তানভীর : শেষ মুহূর্তে ওভার স্পিন নিয়ে মঈন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগে আমার ওভার স্পিন ছিল এখন আস্তে আস্তে সাইড স্পিন, আর সেমি-সাইড স্পিন হয়ে গিয়েছে। উনি বলেছেন যে অনেক ওয়ানডে খেলেছি, তাই এমন হচ্ছে। তারপরও উনি বললেন, ওভার স্পিনের গ্রিপ তো যার যার ন্যাচারাল, ওভাবে কাজে আসে না। পরে হাতের এঙ্গেলটা একটু দেখিয়ে দেন। ওটা নিয়ে যদিও এখন পর্যন্ত কাজ করিনি, পরে হয়তোবা করব। মাত্র তো বিপিএল শেষ হল।
এসএইচ/এএইচএস