কেন এমন সিদ্ধান্ত মুশফিকের?
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দুটো পথ খোলা থাকে সামনে- এক. আত্মসমর্পণ করা। দুই. ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করা। দুটোর প্রথমটা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হলো কোথায়? হাতের মুঠো গলে যখন সেরা সময়টা চলে যায় তখন সব কিছুই বেসুরো হয়ে উঠে। চেষ্টা করছিলেন গত বছরের শেষ সময় থেকেই। এরপর শুধু ব্যর্থতার পাহাড়টাই উঁচু হয়েছে। সবশেষ এশিয়া কাপেও যখন একই আসা-যাওয়ার খেলা, তখন মুশফিকুর রহিমের মতো বিচক্ষণের কাছে ‘ইশারাই কাফি!’
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন মুশফিকুর রহিম। বলা ভালো, বিদায় বলতে বাধ্যই হলেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। ১৬ বছর কাটিয়ে ১০২টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের হয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা দিয়ে দিলেন। পরিস্থিতি মুশফিকের এতোটাই অনুকূলে যে তার বিদায়ে আক্ষেপ নয়, উচ্ছ্বাসের রেণু ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও পড়ুন>> বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন মুশফিক?
ব্যাপারটা এমন-মুশফিক কখন এই ঘোষণা দেবেন তার অপেক্ষাতেই যেন ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। যে ব্যাটসম্যানের শেষ সাতটা টি-টোয়েন্টি ইনিংস ২৯, ৮, ০, ১, ৩০, ১, ৪ মানে টেলিফোন নম্বরের মতো, তাকে ঘিরে সমালোচনার প্রবল স্রোত বয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে ১০০-এর বেশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারটি কান পেতে সেই শব্দ শুনতে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন।
যখন ব্যাটে রান নেই, তখনও তার অভিজ্ঞতাতেই আস্থা রেখে খোদ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছিলেন-তার ক্রিকেট মাঠের জীবনটা সহজ করে দিচ্ছেন মুশফিক। আর টিম ম্যানেজমেন্টও অন্তত শেষ একটা সুযোগ দিয়েছিল টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে। অথচ সেই আস্থার প্রতিদানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এশিয়া কাপে মিলল না কিছুই!
আরও পড়ুন>> টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেন মুশফিক
দীর্ঘদিন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফর্মের বাইরে তাকেই কি-না শেষ সুযোগটা দেওয়া হলো এশিয়া কাপে। তিনি নিশ্চয়ই আঁচ করতে পেরেছিলেন এটাই শেষ সুযোগ।
আর প্রচণ্ড পরিশ্রম করা ক্রিকেটারটি যে কি-না অন্যরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ছুটে যান মাঠে তিনিই সুযোগটা হারালেন হেলায়! ৬টি ফিফটি, ৩৭টি ছয়, ৪টি ম্যাচ-সেরার পুরস্কার, উইকেটকিপিংয়ে ৪২টি ক্যাচ আর ৩০টি স্টাম্পিং, দিল্লিতে ভারত জয়ের ম্যাচে ৪৩ বলে ৬০ অপরাজিত কিংবা নিদহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ বলে তার অপরাজিত ৭২- সবই সোনালী অতীত!
আরও পড়ুন>> মুশফিকের অবসর ঘোষণায় হৃদয় ভেঙে গেছে মাহমুদউল্লাহর
এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছে যথাক্রমে ১ ও ৪। ব্যর্থতা এখানেই শেষ হলে হয়তো কিছুটা রক্ষা হতো, সঙ্গে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে যা করলেন তাতে নবীশ ক্রিকেটারটিও আঁতকে উঠবেন। শ্রীলঙ্কার ম্যাচে ক্যাচ মিস, ক্যাচ নিয়েও রিভিউ না নিতে পারা, এসব সঙ্গী করে দল ছিটকে গেলে এশিয়া কাপ থেকে। আর মুশফিকও টি-টোয়েন্টিতে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার গৌরবের ভাগীদার হতে পারলেন না।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত জাতীয় দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটারটি ২০ ওভারের ক্রিকেট থেকে এভাবে মাথা নিচু করে বিদায় নেবেন-মানা যায় না। তারও আগে মানা যায় না মুশফিকের মতো এমন কিংবদন্তির মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকাটাও। স্ট্রাইক রেট আর টি-টোয়েন্টিতে ছন্দহীনতা দুটোর সঙ্গে কিপিংয়ে তথৈবচ!
আরও পড়ুন>> সাকিবের জীবন সহজ করে দিচ্ছেন মুশফিক
মুশফিকের কেন এমন সিদ্ধান্ত? শিরোনামের মীমাংসা লুকিয়ে আছে ওপার বাংলার জনপ্রিয় গায়ক কবীর সুমনের গানের কথায়- ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা...!’
এটি