আফগান স্পিন ভেলকি সামলে বাংলাদেশের ১২৭
নতুন কোনো আবিস্কারের প্রয়োজন পড়েনি, চেনা 'অস্ত্র' দিয়েই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করল আফগানিস্তান। রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে নামগুলো খুবই পরিচিত। আফগানিস্তানের স্পিন বোলিংয়ের পুরোধা তারা। বেশ কয়েক বছর ধরেই আফগানিস্তানের বোলিং বিভাগের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন এই দুইজন। যাদের বোলিং সামলানোর উপায় খুঁজতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে কাটিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, তাদের স্পিন বিষেই নাকাল হয়েছেন। এশিয়া কাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানদের স্পিন বিষে নীল হয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন এই ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বে ফেরা সাকিব আল হাসান। নিশ্চয়ই ব্যাটসম্যানদের প্রতি আস্থা রেখেই আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাটসম্যানরা যেন সেটার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মুজিব বোলিংয়ে আসতেই ঘাম ছুটে যায় বাংলাদেশের দুই ওপেনারের। সেই ওভারের শেষ বলে তার ক্যারম বল বুঝতে না পেরে লাইন মিস করে বোল্ড হন নাঈম (৮ বলে ৬)।
তার পরের ওভারের শেষ বলে আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে ব্যাটের সঙ্গে বলের সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন বিজয়, বল গিয়ে আঘাত হানে পায়ে। রিভিউ নিয়ে বিজয়ের ধীরগতির ইনিংসের সমাপ্তি নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে মোটে ৫ রান করেছেন তিনি।
দুই ওপেনারকে ফিরিয়েই ক্ষান্ত হননি মুজিব। নিজের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবকেও ধরাশায়ী করেছেন তিনি। আগের ওভারে পেসার নাভিন-উল-হকের টানা দুই বলে দুই চার মেরে শুরুতে উইকেট হারানোর চাপ হালকা করার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। তবে মুজিবের ঘূর্ণিতে তাকেও হার মানতে হয়। মুজিবের বলে জায়গা করে নিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প বাঁচাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। দলের বিপদ বাড়িয়ে ফিরেছেন ৯ বলে ১১ রান করে।
এরপর বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় বলেই মুশফিকুর রহিমের (১) উইকেট তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিন জাদুকর রশিদ খান। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাওয়া আফিফ হোসেনও (১২) কাটা পড়েছেন তার বলেই। মুশফিক-আফিফ দুজনকেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরের পথ চিনিয়েছেন রশিদ। মাত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে এর আগে কখনো এত কম রানে ব্যাটিং লাইনআপের অর্ধেক হারায়নি টাইগাররা।
রশিদের বলে সাজঘরের পথ ধরার আগে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২৫ বলে ২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন আফিফ। এরপর ষষ্ঠ উইকেট মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের ৩১ বলে ৩৬ এবং সপ্তম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেক-মেহেদী হাসানের ২৪ বলে ৩৮ রানের জুটিতে ১২৭ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
২৭ বলে ২৫ রান করে রশিদ খানের বলে হাঁটু গেঁড়ে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে তালুবন্দি হন মাহমুদউল্লাহ। ১২ বলে ২ চারে ১৪ রান করে শেষ ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন মেহেদী হাসান। আর ৩১ বলে ৪ চার এবং ১ ছয় সহযোগে দলীয় সর্বোচ্চ ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন।
গত ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছিলেন আফগান স্পিনার মুজিব। বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও ভয়ঙ্কর রূপে হাজির হন এই স্পিনার, ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৬ রান খরচায় ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। অন্য স্পিনার রশিদ খান ৪ ওভার বোলিং করে সমান ৩ উইকেট পেয়েছেন ২২ রান খরচ করে।
সুপার ফোরে এক পা দিয়ে রাখা আফগানদের গ্রুপ 'বি'র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য নির্ধারিত ২০ ওভারে তুলতে হবে ১২৮ রান।
এইচএমএ