ডু প্লেসি-মঈন-নারাইনদের ম্যাচে নায়ক মুস্তাফিজ
এবারের বিপিএলে খুব বেশি বিদেশি তারকা ক্রিকেটারের উপস্থিতি নেই। তবে নিজেদের দলে রীতিমতো তারার হাট বসিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টরিয়ান্স। ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে মঈন আলি আর সুনীল নারাইনকে নিয়ে সাজিয়েছে একাদশ। এই ত্রয়ী একসঙ্গে খেলতে নামার পরেও চট্টগ্রামের বিপক্ষে ম্যাচে আলো ছড়ালেন মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার-স্লোয়ারে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ‘অসহায়’ বানিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান তিনি।
ফাফ, মঈন, নারিনদের উপস্থিতিতে মুস্তাফিজ নায়ক বনে যাওয়ার ম্যাচে জয়ে ফিরেছে কুমিল্লা। আগে ব্যাট করে ডাকওয়ার্থ-লুইস স্টার্ন মেথডে ১৪৩ রানের পুঁজি পাওয়া চট্টগ্রামকে ৯ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে কুমিল্লা। ম্যাচে মাত্র ২৭ রান নিয়ে পাঁচ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। সঙ্গে ব্যাট হাতে ফিফটির দেখা পেয়েছেন ইমরুল কায়েস আর লিটন দাস। এতে টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিক জয়ের পর নিজেদের সবশেষ ম্যাচে হেরে যাওয়া কুমিল্লা আবার জয়ের দেখা পেয়েছে। অন্যদিকে ৮ ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি পঞ্চম পরাজয়। দুই দলের মুখোমুখি দেখায় আগের ম্যাচে ৫২ রানে জিতেছিল কুমিল্লা।
মুস্তাফিজের আগুনে বোলিংয়ের পরেও ১৮ ওভারে লক্ষ্য ১৪৪ রান। মিরপুরের উইকেটে কাজটি সহজ নয় একেবারে। তবে সে লক্ষ্য মামুলি বানিয়ে ছাড়লেন কুমিল্লার দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস আর লিটন দাস। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ৩৬ রান যোগ করেন দুজন। স্টেডিয়ামে সাবেক গুরু জেমি সিডন্সের উপস্থিতিতে যেন জ্বলে উঠলেন অধিনায়ক ইমরুল। এদিন সেভাবেই ব্যাট চালিয়েছেন, সেভাবেই পেয়েছেন রানের দেখা। উইকেটের চারপাশ থেকে রান বের করেন ইমরুল।
আগের চার ইনিংসে ব্যাট করে ত্রিশ রানের কোটা পার করতে না পারা এই বাঁহাতি পেয়েছেন ফিফটির দেখা। মাত্র ৪২ বলে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের ১৩তম অর্ধশতক। পরে একই পথে হেঁটে ফিফটি ছুঁয়েছেন লিটন। ৩৫ বলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। শেষ ৪ ইনিংসে এটি তার দ্বিতীয় অর্ধশতক ছোঁয়া ইনিংস। পরে অবশ্য মৃত্যুঞ্জয়ের বলে লিটন আউট হন ৫৩ রান করে। ৩৭ বলের ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
৯ উইকেট ও ৯ বল হাতে রেখে পাওয়া জয়ে ইমরুল ৬২ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন। যেখানে ৬টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকান ৫টি।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে সুবিধা করতে পারেননি ওপেনার চ্যাডউইক ওয়ালটন। রানের খাতা খোলার আগেই নাহিদুল ইসলামের শিকার হন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলকে টেনে তোলেন উইল জ্যাকস আর আফিফ হোসেন। ৪০ বলে ৬২ রান যোগ করেন দুজন। আফিফ ২১ বলে ২৭ রান করে তানভীর ইসলামের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হলে ভাঙে তাদের এই পার্টনারশিপ। তৃতীয় উইকেটে শামীম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট চালিয়ে খেলতে থাকেন জ্যাকস। বিপিএলের এই আসরের তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেন তিনি।
চট্টগ্রাম ১২.৫ ওভারে ১০৭ রান তুলতেই মিরপুরের আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। বৃষ্টির বাগড়ার কারণে চট্টগ্রামের ইনিংস কমে দাঁড়ায় ১৮ ওভারে। এর পরের গল্পটা মুস্তাফিজুর রহমানের। বল হাতে নিয়েই ইনিংসের ১৪তম ওভারে ফেরান শামীম-জ্যাকস দুজনকেই। শামীম আউট হন ২২ বলে ২৬ রান করে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা জ্যাকস করেন ৩৭ বলে ৫৭ রান। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা।
নিজের পরের ওভারে ফিরেই মুস্তাফিজ শিকার করেন নাঈম ইসলাম ও বেনি হাওয়েলকে। এই দুই ব্যাটসম্যানকে স্লোয়ারে বোকা বানান বাঁহাতি কাটার স্পেশালিস্ট। ৩ রানে থাকা নাঈমকে ফেরান দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে। হাওয়েলের ব্যাট থেকেও আসে সমান ৩ রান। মুস্তাফিজ নিজের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে শিকার করে প্রথমবারের মতো বিপিএলে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান। এতে নির্ধারিত ১৮ ওভারে চট্টগ্রাম সংগ্রহ করে ১৩৮ রান। ডিএলএস মেথডে কুমিল্লার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮ ওভারে ১৪৪ রান। ইমরুল-লিটনের কল্যাণে যা দলটা পেরিয়ে যায় অনায়াসেই।
টিআইএস/এনইউ