৪০ বছর রোইংয়ের বৈঠা সঙ্গী ব্রিটিশ হাইকমিশনারের
কূটনীতিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে এক দেশ থেকে আরেক দেশে আবাস গড়েন। অনেক কূটনীতিকের পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরেই কেটে যায়। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান রোইংয়ের (নৌকাবাইচ) দুটো বৈঠা নিয়ে।
একটি ১৯৮২ সালে আরেকটি ১৯৮৩ সালে কেনা। বৈঠা দুটোর বয়স প্রায় ৪০ ও কয়েকটি মহাদেশ ঘুরলেও দেখলে মনে হয় যেন এখনো নতুন। প্রিয় দুটো বৈঠা খুব সযত্নে রাখেন রবার্ট। ওই দুই বৈঠার দিকে তাকিয়ে সহজেই ফিরে যান চার দশক আগে, ‘দুটো বৈঠাতে লেখা আছে কে কে দলে ছিল। এটির দিকে তাকালে সেই প্রতিযোগিতা ও বন্ধুদের কথা মনে পড়ে।’
এই দুটো বৈঠা তার প্রায় ৪০ বছরের সঙ্গী। এখন একটা তার জীবনের অংশই হয়ে গেছে, ‘এই বৈঠা দুটো আমার সঙ্গে অনেক দেশ ঘুরছে। পেশাগত কাজে আমি যে দেশেই স্থায়ী হই। এ দুটো বহন করে নিয়ে যাই। পেশাগত দায়িত্ব পালনে ওয়াশিংটন, মেসিডোনিয়ায় ছিলাম তখনো ছিল। বাংলাদেশেও নিয়ে এসেছি। আবার সামনে কোথায় গেলে সেখানেও নিয়ে যাব।’
রোইং ব্রিটিশ হাইকমিশনারের কাছে খুব পছন্দের একটি খেলা৷ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়াবস্থাতেই মুলত তিনি রোইংয়ের প্রেমে পড়েন, ‘আমাদের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সঙ্গে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল রোইং। অনেক ছাত্র অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোইংয়ে অংশগ্রহণ করত।’
চার দশকের আগের স্মৃতি এখনো বেশ তরতাজা রবার্টের কাছে, ‘ক্যামব্রিজ ও অক্সফোর্ড উভয় প্রতিষ্ঠানই জেতার জন্য উদগ্রীব থাকত। এর জন্য ছিল নানা প্রস্তুতি। শিক্ষাজীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তও। এটা শতবর্ষ ধরে হয়ে আসায় শুধু দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় গোটা লন্ডন ও ইংল্যান্ডেরই একটা ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে। অসংখ্য লোক নদীর ধারে প্রতিযোগিতা দেখে। টেলিভিশনেও লাইভ সম্প্রচার হয়। সব মিলিয়ে অসম্ভব রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।’
শুধু ক্যামব্রিজই নয় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ডও রোইং বেশ জনপ্রিয়। এই দুই সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮২৯ সাল থেকে বার্ষিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। এই বছর হবে ১৬৭তম পুরুষ ও ৭৬তম মহিলা নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজের নৌকাবাইচের এই দ্বৈরথ ইংল্যান্ডের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে মাঝে মধ্যে। ১৯৯৮ সালে ওয়াশিংটনে অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজের এক প্রতিযোগিতায় ছিলেন রবার্টও, ‘আমি তখন পেশাগত দায়িত্বে ওয়াশিংটনে। তখন সেখানে অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আমেরিকায় অবস্থানরত ব্রিটিশরা ছাড়াও আমেরিকান ক্যামব্রিজ ও অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট অংশ নেয়। আমি ক্যামব্রিজ দলে ছিলাম। অবশ্য সেই প্রতিযোগিতায় আমরা অক্সফোর্ডের কাছে হেরে ছিলাম।’
ওয়াশিংটনের ওই প্রতিযোগিতার পর পেশাগত ও ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া হয়নি আর রবার্টের। তবে এমনি রোইং করেছেন যখন সময় পেয়েছেন, ‘আমি পেশাদার রোইয়ার ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেছি। এরপর সময় সুযোগ অনুযায়ী রোইং করেছি তবে প্রতিযোগিতায় সেই ভাবে অংশগ্রহণ করিনি।’ -বলেন রবার্ট।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নৌকা সহ আরো অনেক সীমাবদ্ধতায় বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন খুব একটা সক্রিয় নয়। বছরে দুই একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। বাংলাদেশে এসে অবশ্য এখনো রোইং করা হয়নি রবার্টের। তবে বাংলাদেশের রোইংয়ে অবদান রাখার ইচ্ছে রয়েছে রবার্টের, ‘রোইং আমার খুবই পছন্দ। বাংলাদেশের রোইংয়ে পাশে থাকব।’
নৌকাবাইচের সঙ্গে নদী ও সাঁতারের নিবিড় সম্পর্ক। রবার্ট চার বছর বয়সেই সাঁতার রপ্ত করেছেন। সুস্থ দেহ, সুস্থ মন- এই নীতিতে বিশ্বাসী রবার্ট ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় আধঘন্টা জিমে ঘাম ঝড়ান। ছুটিতে ইংল্যান্ডে গেলে নিয়ম করে দিনের কিছু সময় হাঁটেন। রবার্টের প্রিয় যেমন রোইং তার স্ত্রী তেরেসা আলবোর প্রিয় সাইক্লিং। রবার্টের কন্যা ও ভাতিজার খেলাধুলায় খুব আগ্রহ।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া। ব্রিটিশ হাইকমিশনার অবশ্য ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কোনো ক্লাবের বিশেষ ভক্ত নন, ‘আমি সেই অর্থে কোনো দলের সমর্থক নই। আমার ছোট ভাই ফুটবল ও ক্রিকেট দুটোই ভালো খেলত। সে ক্রিস্টাল প্যালেসের সমর্থক। তাকে দেখে আমিও ক্রিস্টাল প্যালেসকে অনুসরণ করি।’
এজেড/এটি