উরুগুয়েকে কষ্টেসৃষ্টে হারালো আর্জেন্টিনা
লিওনেল মেসিকে রাখা হয়নি শুরুর একাদশে। তার ফলটাও যেন আর্জেন্টিনা টের পাচ্ছিল হাড়ে হাড়েই। শুরু থেকে আলবিসেলেস্তেদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে উরুগুয়ে। তবে আনহেল ডি মারিয়ার গোল আর এমিলিয়ানো মার্টিনেজের গোটা কয়েক সেভে কষ্টার্জিত হলেও জয়টা ঠিকই তুলে নিয়েছে কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির দল।
পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনা ছোট-বড় সুযোগ পেয়েছে মোটে পাঁচটা। শট নিয়েছে সাতটি, লক্ষ্যে ছিল তিনটি মাত্র শট। অন্যদিকে উরুগুয়ের এমন সুযোগ এসেছিল কমপক্ষে আটবার। আর শট করেছে ১৯টি, যদিও তার চারটাই কেবল ছিল লক্ষ্যে। প্রতিপক্ষের মাঠ এস্তাদিও কাম্পেওন দেল সিলোতে যে কোচ স্ক্যালোনির দল ম্যাচটা জিতেই বেরোতে পেরেছে তাতে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কৃতিত্ব অনেকটা। আর্জেন্টাইন রক্ষণ এদিন ছিল বেশ নড়বড়ে। সেটা সামলে কোনো গোল হজম না করেই জয়, অ্যাস্টন ভিলা গোলরক্ষকের তো তারিফটা পাওনাই!
উঠন্তি মুলো নাকি পত্তনেই চেনা যায়। প্রতিপক্ষের মাঠে আর্জেন্টিনার দিনের শুরুটাও তাই বলে দিয়েছিল, ম্যাচটা জেতা মোটেও সহজ হবে না কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নদের। শুরুটাই হয়েছিল গোলরক্ষক মার্টিনেজের ব্যস্ততা দিয়ে। চতুর্থ মিনিটে নাহিতান নান্দেজের শটটা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দারুণ এক সেভে ফেরান তিনি।
আরও পড়ুন : সার্বিয়ার কাছে হেরে রোনালদোর পর্তুগালের বিশ্বকাপ অনিশ্চিত
এর মিনিট দুয়েক পর রদ্রিগো ডি পলের ক্রসে ঠিকঠাক মাথাই ছোঁয়াতে পারেননি লাওতারো মার্টিনেজ। এর একটু পরই অবশ্য আফসোস শেষ হয় দলটির। লিওনেল মেসি এদিন ছিলেন না শুরুর একাদশে। তার বদলে এদিন মাঠে নেমেছিলেন পাওলো দিবালা। আর অধিনায়কের বাহুবন্ধনী ছিল আনহেল ডি মারিয়ার হাতে। গোলটাও এলো দুজনের যুগলবন্দীতেই।
উরুগুয়ে বিপদসীমার একটু সামনে থেকে বল কেড়ে নেন দিবালা। একটু এগিয়ে বলটা ছাড়েন ডি মারিয়াকে। কোপা ফাইনালের গোলদাতা এরপর প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বক্সের জটলা থেকেই দৃষ্টিনন্দন এক বাঁকানো শট করে বসেন, সেটাই উরুগুয়ে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরাকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
গোলের পর বিরতির আগ পর্যন্ত উরুগুয়ে চেষ্টা করে গেছে বেশ। নবম মিনিটে লুই সুয়ারেজের ফ্রি কিক বেরিয়ে গেছে ক্রসবারের একটু বাইরে দিয়ে। এর মিনিট চারেক পর আবারও দৃশ্যপটে সুয়ারেজ। তার শটটা এবারও হলো লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৩০ মিনিটে দলটা সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল ম্যাচে। বক্সের কোণা থেকে সুয়ারেজের শটটা এবার প্রতিহত হয় গোলপোস্টে। ৪১ মিনিটে আরও একটা সুযোগ আসে লা সেলেস্তেদের কাছে। সে যাত্রায় উরুগুয়ের মিডফিল্ডার ভেসিনোকে গোলবঞ্চিত রাখেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষ মার্টিনেজ। তাতে এক গোলের অগ্রগামিতা ধরে রেখেই বিরতিতে যায় আলবিসেলেস্তেরা।
আরও পড়ুন : বিশ্বকাপে যেতে আর্জেন্টিনার আর কত পয়েন্ট চাই?
বিরতির পরও ম্যাচটা দেখেছে একই দৃশ্য। নড়বড়ে রক্ষণ ভেঙে উরুগুয়ে বারবার ঢুকছিল আর্জেন্টিনা বিপদসীমায়। আর এমিলিয়ানো দারুণ সব সেভ দিয়ে রক্ষা করে গেছেন দলকে।
কিছু সুযোগ আর্জেন্টিনাও পেয়েছে বটে। ৭৩ মিনিটে জিওভানি লো চেলসোর পাস থেকে প্রতি আক্রমণে দারুণভাবেই উঠে এসেছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হোয়াকিন কোরেয়া। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ট্যাকলে আর্জেন্টিনাকে গোলবঞ্চিত রাখেন রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুর। এর মিনিট দুয়েক পর আরও একটা সুযোগ এসেছিল হোয়াকিনের সামনে। তবে সে যাত্রায় আর্জেন্টিনা গোলবঞ্চিত থাকে মুসলেরার কারণে। এর কিছু আগে আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজও একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তার শটও বেরিয়ে যায় লক্ষ্যের একটু বাইরে দিয়ে।
শুরুর একাদশে না থাকা মেসি মাঠে আসেন ৭৫ মিনিটে। তবে দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নেমে অবশ্য তিনি ছিলেন না তার চেনা ছন্দে। শেষ মুহূর্তে একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, তবে মার্কোস আকুনইয়ার নিচু ক্রসটা তিনি পাঠাতে পারেননি জালে।
আরও পড়ুন : ‘মেসির সঙ্গে দেখা করে রাতে ঘুমাতে পারেনি বাচ্চারা’
উল্টো উরুগুয়েই দুটো সুযোগ পেয়েছিল ম্যাচে সমতা ফেরানোর। বদলি হিসেবে মাঠে আসা আগুস্তিন অ্যালভারেজের একটা হেডার পথভ্রষ্ট হয়, শেষের একটু আগে তার আরও একটা শট বিপদেই ফেলেছিল গোলরক্ষক মার্টিনেজকে। হাত ফসকে বলটা জড়িয়েই যাচ্ছিল জালে। তবে পরমুহূর্তেই তা সামলে নেন তিনি। ফলে গোলবঞ্চিত থাকে উরুগুয়ে। আর আর্জেন্টিনা পেয়ে যায় ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয়টা।
এনইউ