ক্রীড়াজগতে দুলাল মাহমুদের ২৫
২ নভেম্বর ১৯৯৬ সাল। সেই দিন দেশের ক্রীড়া পাক্ষিক ম্যাগাজিন ক্রীড়াজগত এর সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছিলেন মাহমুদ হোসেন খান দুলাল । যিনি ক্রীড়াঙ্গন ও গণমাধ্যমে দুলাল মাহমুদ হিসেবে পরিচিত।
আজ ২ নভেম্বর ২০২১ সাল। ক্রীড়াজগতের সম্পাদক হিসেবে ২৫ বছর পূর্ণ হলো দেশের শীর্ষ এই ক্রীড়া লেখক ও গবেষকের। দুলাল মাহমুদ অনেকটা মৃদুভাষী। ক্রীড়াজগতে নিজের রজতজয়ন্তীতে পেছনে ফিরে তাকালেন সেই দিনগুলোতে, ‘ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা ভালোবাসতাম। ১৯৮২ সালে ক্রীড়াজগতে প্রথম আমার লেখা প্রকাশ হয়। এরপর ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেই। বাংলার বাণী, দৈনিক আজাদে কাজ করেছি। ১৯৯৬ সালের ২ নভেম্বর সম্পাদক হিসেবে ক্রীড়াজগতে যোগদান করি।’
দেশের গণমাধ্যম ও ক্রীড়াঙ্গনে অত্যন্ত মেধাবী হিসেবে স্বীকৃত দুলাল মাহমুদ। অনেক গণমাধ্যমে তার কাজের প্রস্তাব থাকলেও এই পাক্ষিক ক্রীড়াজগতেই নিজের সুখ বেছে নিয়েছেন, ‘এখানে সুযোগ সুবিধা খুব বেশি নেই। ক্রীড়াজগতের সঙ্গে আমার সুযোগ-সুবিধার সম্পর্ক নেই এখন আর নেই। আত্মিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। খণ্ডকালীন সময় কিছু গণমাধ্যমে কাজ করলেও ক্রীড়াজগতই আমার মূল পরিচয়।’
১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে প্রকাশিত হচ্ছে পাক্ষিক ক্রীড়া ম্যাগাজিন ক্রীড়াজগত। তৌফিক আজিজ খান, বদিউজ্জামান, শামসুদ্দিন মেহেদীর পর চতুর্থ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন দুলাল মাহমুদ। বিগত তিন সম্পাদক মিলে ১৯ বছর সম্পাদনা করেছেন। দুলাল একাই ২৫ বছরের সম্পাদক।
ক্রীড়াজগতে ২৫ বছরের পথচলা নিয়ে তার বক্তব্য, ‘আগে ক্রীড়াজগত ছিল ৪৮ পাতা। সেটি এখন ৬৪ পাতা হয়েছে। আমার সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টির জায়গা অনেক দুর্যোগ, সীমিত জনবল এবং বিশেষ সংখ্যাও নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময়ে পত্রিকা প্রকাশ করা। করোনার সময় শুধু এখানে ব্যতয় ঘটেছে।’
এখন মানুষ তৎক্ষণাৎ খবর জানতে চায়। পরের দিন পত্রিকায় বিশ্লেষণ পড়তে চায়। পনের দিন পর পাক্ষিকের প্রয়োজনীয়তা ধরে রাখছে ক্রীড়াজগত ভিন্নভাবে, ‘দৈনিক পত্রিকাগুলো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্ণ ফলাফল করতে পারে না জায়গা সংকুলানের জন্য। আমরা সেটা প্রায় পুরোটাই প্রকাশ করি ইতিহাসের রেকর্ডেও জন্য। প্রায় সব জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফলাফল আমরা দেয়ার চেষ্টা করি। পাঠকদের জন্য রয়েছে বিশেষ পাতা, কুইজ’-বলেন দুলাল মাহমুদ।
দেশের অনেক ক্রীড়া সাংবাদিকের হাতেখড়ি ক্রীড়াজগতে লেখালেখির মধ্য দিয়ে। যারা এখনো অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। অনেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতা থেকে অন্য পেশা, অন্য বিটের রিপোর্টিংয়ে গেলেও ক্রীড়াজগতে লেখালেখির মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। নতুন ক্রীড়া লেখক ও সাংবাদিক তৈরির পাশাপাশি পুরোনোদের ধরে রাখাটাও দুলাল মাহমুদের অনন্য গুণ। শুধু ক্রীড়া লেখক নয় ক্রীড়াবিদদেরও তিনি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদ বশির আহমেদ, রণজিৎ দাস সহ আরো অনেকে ধারাবাহিকভাবে ক্রীড়াজগতে লিখেছেন।
ক্রীড়াজগতের ‘মাঠ-গ্যালারী-স্টেডিয়াম’ কলাম ক্রীড়াঙ্গনে বেশ সমাদৃত। বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান দুই দশকের বেশি সময় ধরে লিখছেন। এটিও অনন্য এক বিষয় মনে করেন পত্রিকাটির সম্পাদক দুলাল মাহমুদ, ‘কোনো পত্রিকায় একটানা প্রায় ২৫ বছর একজন লেখক এক বিষয়ে কলাম লেখার ঘটনা বাংলাদেশে বোধ হয় আর নেই।’ কামরুজ্জামান গত মাসে অসুস্থ থাকায় সেই ধারায় খানিকটা ছেদ পড়ে।
দেশের অনেক ক্রীড়া সাংবাদিকের হাতেখড়ি ক্রীড়াজগতে লেখালেখির মধ্য দিয়ে। যারা এখনো অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। অনেকে ক্রীড়া সাংবাদিকতা থেকে অন্য পেশা, অন্য বিটের রিপোর্টিংয়ে গেলেও ক্রীড়াজগতে লেখালেখির মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। নতুন ক্রীড়া লেখক ও সাংবাদিক তৈরির পাশাপাশি পুরোনোদের ধরে রাখাটাও দুলাল মাহমুদের অনন্য গুণ। শুধু ক্রীড়া লেখক নয় ক্রীড়াবিদদেরও তিনি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদ বশির আহমেদ, রণজিৎ দাস সহ আরো অনেকে ধারাবাহিকভাবে ক্রীড়াজগতে লিখেছেন।
৬৪ পাতার ম্যাগাজিন প্রকাশনায় এখন কাজ করছেন সম্পাদকসহ মাত্র ৬ জন। পত্রিকা প্রকাশনায় ফটোসাংবাদিক, প্রুফ রিডার থাকা বাধ্যতামূলক। কয়েক বছর যাবৎ এই পদগুলো শূন্য। জনবল ছাড়াও কারিগরি-যান্ত্রিক সংকটও রয়েছে। এরপরও নির্ভুলভাবে ক্রীড়াজগত প্রকাশে সদা সচেষ্ট দুলাল মাহমুদ। ক্যারিয়ার সায়াহ্নে দুলালের একটাই চাওয়া, ‘কর্তৃপক্ষ ক্রীড়াজগতের দিকে আরো একটু নজর দিলে ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস, রেকর্ড,ঐতিহ্য সংরক্ষণ আরো সুদৃঢ় হবে।’
এজেড/এনইউ