বাংলাদেশের প্রাপ্তি নাকি সমাপ্তি?
নেই... নেই, সুড়ঙ্গের শেষ মুখেও কোনো আলো নেই। পেছনে অন্ধকার, সামনে আরও বেশি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আক্ষরিক অর্থেই মহা বিপাকে। এমনিতেই দল মরুর দেশে চোরাবালিতে আটকে আছে। টানা তিন হারে সেমি-ফাইনালের স্বপ্নটাও বিলীন। তারমধ্যেই কি না দল হারাল সেরা ক্রিকেটারকেও। সাকিব আল হাসানবিহীন বাংলাদেশ দল আজ মঙ্গলবার আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকার।
আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় শুরু (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা) ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য সম্মানের লড়াই। লড়াই হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ারও। সব হারানোর পর কিছু একটা করতে মরিয়া দল। জয়ের খাতা খুলতে চায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা।
অবশ্য কত কিছুই তো চেয়েছে বাংলাদেশ। দেশ ছাড়ার আগে সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্নও দেখিয়েছে। কিন্তু টেনেটুনে বাছাই পর্ব পেরোনোর পর আসল লড়াইয়ে একের পর এক ব্যর্থতা টাইগারদের। তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই হার। এরমধ্যে দুটো ম্যাচে জয়ের পথ তৈরি হলেও নিজেদের ভুলেই সর্বনাশ। ম্যাচে উত্থান-পতনে জিততে জিততে হার দেখেছে দল। অন্য দলগুলো যেখানে ম্যাচে হারতে হারতে জয়ের দেখা পেয়ে যায়, সেখানে বাংলাদেশ কিছুই করতে পারছে না। ক্রিকেটাররাই বলছেন, ‘হচ্ছে না!’
সেই হারের বৃত্ত থেকে এবার বেরিয়ে আসতে চায় বাংলাদেশ দল। একটা জয়ের জন্য মুখিয়ে সবাই। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়ে দিলেন, ‘আমরা তো সব ম্যাচই জিততে চাই, জানি জয়ের তাড়নাটা অনেক, সেই সঙ্গে হারলে হাতাশাটাও অনেক। আমাদের ফোকাসটা হলো ওই ব্যাপারটায়, যে পথে এগিয়ে আমরা জয়টা পেতে পারি। আমরা সবাই জেতার চেষ্টা করছি।’
তবে এমন কথার পরই একটা কিন্তু যোগ করে ফেললেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচ। বললেন, ‘যখন শুধু জয় নিয়েই ভাবি তখন কী করা লাগবে তা অনেক সময় গুলিয়ে যায়। আমাদের ওই ব্যাপারটা হচ্ছে। আমাদের স্কিল ও প্রসেসের ওপর নজর দিতে হবে। কালকের (মঙ্গলবার) ম্যাচে সেই কাজটা করলে হয়ত ফল আমাদের দিকে আসবে।’
কথা আর লক্ষ্য তো স্থির করাই যায়, কিন্তু জয় তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয়। জয়ে তো চোখ সেই শুরু থেকেই ছিল। এই বিশ্বকাপেই তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে একের পর এক ভুলে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছে দল। লিটন দাসের দুটো ক্যাচ মিস বিপাকে ফেলে দেয় দলকে। ভুল সিদ্ধান্ত ছিল মাহমুদউল্লাহরও। তারপর আর মাথা তুলে দাঁড়ানো হয়নি! পরের ম্যাচে ইংল্যান্ড অবশ্য দাপটেই জিতেছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটাও হেরে গেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ব্যাটসম্যানদের ভুলে আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ম্যাচটাতে একাদশেও পরিবর্তন আসছে। সঙ্গতভাবেই বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে সাকিব আল হাসানের। ইনজুরিতে যিনি ছিটকে গেছেন বিশ্বকাপ থেকে। বিশ্বকাপে অভিষেক হয়ে যাচ্ছে শামীম হোসেন পাটোয়ারির। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে কপাল খুলছে চাঁদপুরের এই তরুণের। সাকিবের জায়গায় মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একাদশে তার থাকার খবরটি নিশ্চিত করেছেন কোচ ডমিঙ্গো।
পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, একাদশে সৌম্য সরকার আর লিটন কুমার দাস টিকে যাচ্ছেন। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে প্রোটিয়া পরীক্ষার আগে ডমিঙ্গো জানিয়ে দিলেন, ‘সাকিব না থাকা আমাদের জন্য অবশ্যই বড় এক ধাক্কা। সাকিব না খেললে একজন বোলার বা ব্যাটসম্যান কম নিয়ে খেলতে হয় আমাদের। দলের ভারসাম্যের কথা ভাবলে ওর না থাকাটা বড় ক্ষতি। ও না থাকায় নতুন কারও বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নামার হয়তো সুযোগ হচ্ছে। জানিয়ে রাখছি, আগামীকালকের ম্যাচ খেলার মতো ফিট হবে না সোহান। শামীম ও সৌম্য সরকার, আমাদের দুই ব্যাকআপ ব্যাটসম্যান, একাদশে ওরা থাকবে।’
সব মিলিয়ে ডমিঙ্গোর কথায় আত্মবিশ্বাস দেখা গেল। যদিও পরিসংখ্যান খুব বেশি আশাবাদী করছে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। আর হেরেছে প্রতিবারই। সবশেষ ২০১৭ পচেফস্ট্রমে ৮৩ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে দল। পরের চার বছর অবশ্য ২০ ওভারের ক্রিকেটে দেখা হয়নি দুই দেশের।
ডমিঙ্গো তার দেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে বেশ চনমনেই আছেন। আগের দিন দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠেও বেশ প্রাণবন্ত দেখাল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। ফিল্ডিং ভাল হচ্ছে না- এ কারণে অনেকক্ষণ ধরে ক্যাচ প্র্যাকটিসটাও করল দল। ওয়ার্ম আপ, ক্যাচিংয়ের পর ব্যাট-বল হাতে অনুশীলন চলল লম্বা সময় ধরে। মাঠ ও মাঠের বাইরে দল যখন তুমুল সমালোচনার মুখে, তখন একটা জয় পেতে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না অনুশীলনে।
যদিও মাঠের লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে দেওয়া বেশ কঠিন। চলতি বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে ২ জয়ে এখন সেমির পথে তারা। বাংলাদেশকে হারাতে পারলে শেষ চারের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে প্রোটিয়ারা। মাহমুদউল্লাহরা তাদের সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারবেন কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে তার আগে কঠিন একটা সত্য মনে করিয়ে দিলেন রাসেল ডমিঙ্গো।
বাংলাদেশ কোচ প্রত্যাশার লাগাম টেনে মনে করিয়ে দিলেন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তিক্ত অতীত, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে।’ ঠিক তাই, এখন পর্যন্ত ইতিহাসে অর্জন বলতে এটুকুই। তবে কথায় আছে যখন কিছুই হারানোর থাকে না, তখন অনেক কিছুই পাওয়ার হাতছানি থাকে। বাংলাদেশ কি আজ কিছু পেতে চলেছে? না পেলে যে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন। আর পেলে? দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম জয় পাওয়ার প্রাপ্তি।
এটি/এমএইচ/জেএস