হেরে যাওয়ার ‘১০১ কারণের’ কয়টা বাকি থাকল রিয়াদ?
যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর সেনাপতির ডাক পড়ল রাজ দরবারে! গর্দান যেতে পারে ভয় জড়োসড়ো প্রধান সেনাপতি। রাজা জানতে চাইলেন-যুদ্ধে হারলে কেন, ঘটনা কি? সেনাপতির উত্তর, ‘হুজুর হেরে যাওয়ার একশ একটা কারণ আছে। প্রথমত আমাদের গুলি ছিল না!’ ব্যস, দ্বিতীয় কারণ বলতে যাওয়ার আগে রাজা থামিয়ে দিলেন, ‘যখন অস্ত্রের গুলিই থাকে না, এরপর আর যুদ্ধ হারার বাকি ১০০ কারণ জানার প্রয়োজন পড়ে না!’
ঠিক তাই, অস্ত্রের গুলি না থাকলে তো সবে নিধিরাম সর্দার! এই একটা কারণেই তো যুদ্ধে হার নিশ্চিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলেরও এখন হয়েছে এই অবস্থায়-ব্যাটিং-বোলিংই তো হচ্ছে না ঠিকঠাক। তাহলে খেলবে কি? জিতবে কী করে!
বিশ্বকাপ মিশনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে কিছুই হচ্ছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং সব ফ্লপ! এখন তো এটাই মনে হচ্ছে শুরুতে কোন ব্র্যান্ডের ক্রিকেটে খেলবে বাংলাদেশ সেটা এখনো ঠিক করতে পারেনি। করে থাকলেও সেই পরিকল্পনা বাস্তাবতার ছোঁয়া পাচ্ছে না। বারবারই বলা হচ্ছে, পাওয়ার প্লেতে সমস্যা।
অনেক অপ্রিয় কথার মধ্যে নাজমুল হাসান পাপন কিছু যৌক্তিক কথাও বলেন, তিনি ওমান থেকে বলে আসছেন, পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হবে, রান তুলতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভাল একটা পুঁজি পাওয়া ম্যাচেও দল সেটা করতো পারলো কোথায়? এসব খুবই সূক্ষ্ম আলোচনা হয়ে যাবে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০০৬ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি খেলতে শুরু করলেও কিন্তু নিজেদের স্টাইলই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে তথৈবচ, পরিকল্পনাহীন একটা দল!
শুরুর ব্যাটসম্যানরা আর-যাওয়ার দায়টুকু সারতে পারলেই যেন বাঁচেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে যা একটু ৪০ রানের ওপেনিং জুটি আসলো, পরের ম্যাচে ১৪ রানেই উইকেট পতনের মিছিল শুরু। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে তো লড়াই-ই করা হলো না।
যদিও এমন দৃশ্য বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের প্রায় প্রতি ম্যাচে ইনিংস তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হয়। কিন্তু ভাল একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তো তাদের কাজ হওয়া উচিত রান বাড়িয়ে নেওয়া, প্রত্যাশার বাইরে সংগ্রহটাকে মজবুত করা। কিন্তু শুরুতে উইকেট হারিয়ে যাওয়ায় মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাজ অন্যকিছু হয়ে যায়। শেষের দিকে রান তোলার মতো কাউকে আজো কেন বাংলাদেশ খুঁজে পেল না সেটা তো নির্বাচকদেরও সমস্যা।
বাংলাদেশ দলে আরও একটা বড় সমস্যা সিনিয়রদের প্রতি নির্ভরতা। আর সাকিব আল হাসানের প্রতি আছে অতিরিক্ত নির্ভরতা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ঘিরে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা দলের জন্য বড় বিপদ হয়ে যাচ্ছে। দেখাই যাচ্ছে সাকিব নিস্প্রভ মানেই পুরো দল যেন চুপসে যাচ্ছে। এই বিশ্বকাপেও ব্যাপারগুলো চোখে পড়ছে। বাছাই পর্বে ওমানেও সাকিব হাসলেন তো বাংলাদেশও হাসল। এখানে আমিরাতে এসেও একই গল্প। সাকিব নিজেকে খুঁজে না পেলে পথ হারা দল।
মুখ চেনা কয়েকজন ক্রিকেটারকে তারা সুযোগ দিয়েই যাচ্ছেন। আস্থা রাখছেন। অথচ তারা সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারছেন না। দলের সঙ্গে যাদের আনা হয়, তাদের অনেকেই স্রেফ সফর করেই ফিরে যান। এসব তো পুরোনো আলোচনা। যার সমাধান আদৌ টিম ম্যানেজম্যান্টভাবে কীনা সেটা প্রশ্ন। শর্টকাট দুই একটা ম্যাচে সাফল্য, ঘরের মাঠে দাপট এসবেই তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠে!
বাংলাদেশ দলে আরও একটা বড় সমস্যা সিনিয়রদের প্রতি নির্ভরতা। আর সাকিব আল হাসানের প্রতি আছে অতিরিক্ত নির্ভরতা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ঘিরে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা দলের জন্য বড় বিপদ হয়ে যাচ্ছে। দেখাই যাচ্ছে সাকিব নিস্প্রভ মানেই পুরো দল যেন চুপসে যাচ্ছে। এই বিশ্বকাপেও ব্যাপারগুলো চোখে পড়ছে। বাছাই পর্বে ওমানেও সাকিব হাসলেন তো বাংলাদেশও হাসল। এখানে আমিরাতে এসেও একই গল্প। সাকিব নিজেকে খুঁজে না পেলে পথ হারা দল।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই উইকেট নিয়ে একটা মোমেন্টাম এনে দিয়েছিলেন তিনি। যেটা দল ধরে রাখতে পারেনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাপ্টেন্সিও অবশ্য এর জন্য দায়ী! সব মিলিয়ে এগার জনের একটা দল যে বাংলাদেশ সেটা বোঝাই যাচ্ছে না। সিনিয়র দুই একজন আর কতো দিন টেনে নেবেন দলকে। যারা প্রায় অর্ধ যুগ ধরে খেলছেন, দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা স্রেফ শিক্ষনবীশ হয়ে, শিক্ষা সফরে ব্যস্ত।
নেতৃত্ব বিষয়টাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আবুধাবির মাঠে ইংল্যান্ডের ম্যাচ কাভার করতে গিয়ে প্রবাসী ক্রিকেট ভক্তদের মুখে বারবার শুনতে হলো-এই দলের নেতা যদি থাকতেন মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো কেউ, তবে দৃশ্যপট ভিন্নও হতে পারতো। যিনি গোটা একটা দলকে উজ্জীবিত করার ম্যাজিকটা জানেন। বিশ্বকাপ ম্যাচে দেখে মনে হচ্ছে অধিনায়ক খেলা শেষ হওয়ার আগেই যেন হেরে যাচ্ছেন। মাঠে মাথা চেপে বসে পড়ছেন। চিৎকার করছেন। নার্ভাস হয়ে পড়ছেন। হতাশ হচ্ছেন। আবার মুখ শুকিয়ে চুন!
ক্রিকেটের সহজ ধারাপাত বলছে, মাঠে যদি অধিনায়ককে আত্মবিশ্বাসী না দেখায় তাহলে দল তো আরও নেতিয়ে যাবে। এই মিশনে হচ্ছেও ঠিক তাই। রিয়াদের বিধ্বস্ত মুখ আরও বেশি যেন হতাশ করে দিচ্ছে দলকে।
নেতৃত্ব বিষয়টাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আবুধাবির মাঠে ইংল্যান্ডের ম্যাচ কাভার করতে গিয়ে প্রবাসী ক্রিকেট ভক্তদের মুখে বারবার শুনতে হলো-এই দলের নেতা যদি থাকতেন মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো কেউ, তবে দৃশ্যপট ভিন্নও হতে পারতো। যিনি গোটা একটা দলকে উজ্জীবিত করার ম্যাজিকটা জানেন। বিশ্বকাপ ম্যাচে দেখে মনে হচ্ছে অধিনায়ক খেলা শেষ হওয়ার আগেই যেন হেরে যাচ্ছেন। মাঠে মাথা চেপে বসে পড়ছেন। চিৎকার করছেন। নার্ভাস হয়ে পড়ছেন। হতাশ হচ্ছেন। আবার মুখ শুকিয়ে চুন!
একইসঙ্গে গোটা বাংলাদেশ দল শুধু মাঠে নয় এই দল মাঠের বাইরে অনেক প্রতিপক্ষ তৈরি করে ফেলেছে! সেটা কথার ঝড়ে। চক্ষু-লজ্জার মাথা খেয়ে একে অপরের প্রতি যেভাবে ‘শব্দ বোমা’ ছুড়ে দিচ্ছেন ব্যাপারটা আদৌ ভাল কিছু হচ্ছে না। বিষয়টা কতোটা হাস্যকর যে সংবাদ সম্মেলনে এসে ক্রিকেটাররা জানিয়ে দিচ্ছেন, তারা রক্ত মাংসের মানুষ। কেউ পেইন কিলার খেয়ে মাঠে নামার অজুহাতটাও দাঁড় করাচ্ছেন। সমালোচকদের আয়নার সামনে দাঁড়াতেও বলছেন!
পরিস্থিতি এতোটাই টালমাটাল যে সমস্যার এখন শুধু একজন লিটন দাস কিংবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নয়, গোটা বাংলাদেশ দলই পথ হারা পথিক। মাঠের যুদ্ধে হারের একশ একটা কারণের প্রথমটা হলো-ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারছেন না, বোলাররাও ছন্দে নেই! একদিন বাদে, শুক্রবার বিশ্বকাপ অভিযানে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার আগে সমস্যার এই পাহাড় সরাতে পারবে তো বাংলাদেশ?
এটি/এনইউ