ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ফুটবল অ্যানালিস্ট
বাংলাদেশের ফুটবলে আগের সেই জনপ্রিয়তা নেই। বর্তমান প্রজন্ম আবাহনী-মোহামেডানের চেয়ে বার্সা-রিয়াল উন্মাদনায় মাতোয়ারা। দেশের ফুটবলের তেমন খোঁজ খবরও রাখেন না অনেকে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষিত তরুণরা দেশের ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন না সেভাবে। এক্ষেত্রে একেবারে ব্যতিক্রম নাসিফ ইসলাম।
দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই বুয়েটে নিজেদের জায়গা করে নেন। বুয়েটের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন নাসিফ। এমন শীর্ষ বিষয়ে পড়ার পরও নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফুটবল ভিডিও অ্যানালাইসিসকে। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে এক বছরের বেশি সময় ভিডিও এবং ম্যাচ পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। এখন তিনি কুয়েতে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় অ-২৩ দলের সঙ্গে।
নাসিফ বুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেও অনেক সময় দিয়েছেন বুয়েট মাঠে। বুয়েটে থাকাকালীন ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল সহ অনেক খেলাই খেলেছেন। বুয়েট সেন্ট্রাল টিমের হয়ে খেলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে। অনেক খেলা খেললেও নাসিফ ফুটবলের দিকে বেশি ঝোকেন এক পর্যায়ে। বুয়েটের উপ ক্রীড়া পরিচালক মারুফুল হক দ্বারা তিনি অনেকটা প্রভাবিত হয়েছেন। দেশের ফুটবলে প্রথম উয়েফা এ লাইসেন্সধারী কোচের কর্মকাণ্ডই তাকে ফুটবল কোচিংয়ের দিকে ধাবিত করে।
জাতীয় দলে এবারই প্রথম বিশেষভাবে ভিডিও অ্যানালিস্ট কাজ করছে। নাসিফের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে দেশের ফুটবলে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো ফুটবল ভিডিও অ্যানালিস্ট হিসেবে যাওয়ায় রোমাঞ্চিত নাসিফ, ‘বুয়েটে পড়াশোনার পর এদিকে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছি। সেই পথে অনেকটা এগিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই অবস্থান। সামনে আরো কিছু করতে চাই।’
নাসিফ বুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেও অনেক সময় দিয়েছেন বুয়েট মাঠে। বুয়েটে থাকাকালীন ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল সহ অনেক খেলাই খেলেছেন। বুয়েট সেন্ট্রাল টিমের হয়ে খেলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে। অনেক খেলা খেললেও নাসিফ ফুটবলের দিকে বেশি ঝোকেন এক পর্যায়ে। বুয়েটের উপ ক্রীড়া পরিচালক মারুফুল হক দ্বারা তিনি অনেকটা প্রভাবিত হয়েছেন। দেশের ফুটবলে প্রথম উয়েফা এ লাইসেন্সধারী কোচের কর্মকাণ্ডই তাকে ফুটবল কোচিংয়ের দিকে ধাবিত করে।
বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর কিছুদিন একটা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলেও পরবর্তীতে ফুটবলকেই বেছে নেন ধ্যানজ্ঞান হিসেবে। ২০১৭ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে জিআরই প্রস্তুতি নেন। জিআরই দিয়ে আমেরিকায় স্পোর্টস সায়েন্সের উপর পড়তে যান। প্রকৌশলী থেকে ক্রীড়া বিজ্ঞানে পড়েছেন তাও আবার স্কলারশিপে। বিষয়টি বিস্মিত করেছে তার বাবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল বাকীকেও, ‘বুয়েটে সে মেকানিকালে ছিল, নিজ ব্যাকগ্রাউন্ডের একদম বাইরে গিয়ে আমেরিকার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য সে ক্রীড়া বিষয়ে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিয়েছে অনেক যা সেভাবে প্রকাশ করেনি আগে আমাদের।’
আমেরিকায় ইন্ডিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর মাস্টার্সে মেজর করেছিলেন ফুটবল কোচিংয়ে। কোচিংয়ে মেজর থাকলেও তিনি এখন সরাসরি কোচিংয়ে নেই। ভিডিও অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কোচিং থেকে ভিডিও অ্যানালিস্টে আসার গল্পটা নাসিফ জানালেন এভাবে, ‘করোনার সময় আমি বার্সেলোনা ক্লাবের অধীনে দুটো কোর্স করি। সেই দুটো কোর্স মূলত আমাকে অ্যানালিস্টর দিকে নিয়েছে।’
দুই বছর আমেরিকা থেকে কোর্স করে আসার পর বাফুফের কোচিং এডুকেশন বিভাগে ইন্টারপ্রেটার হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকে দেশের শীর্ষ ক্লাব সাইফ স্পোর্টিংয়ে ভিডিও ও ম্যাচ অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোতে আলাদাভাবে ভিডিও অ্যানালিস্ট রাখা হয় না। প্রধান কোচরাই মূলত এই কাজ করেন।
সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরউদ্দিন চৌধুরি নাসিফকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা পেশাদার ক্লাব। সেই আঙ্গিকে ভিডিও অ্যানালিস্ট থাকা প্রয়োজন। নাসিফের মতো উচ্চ শিক্ষিত তরুণের আগ্রহ আমরা সানন্দে গ্রহণ করি। তার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডে সে অনায়াসে প্রকৌশলীর যে কোনো ক্ষেত্রে কিছু করার সামর্থ্য রাখে। এরপরও ভালোবেসে ফুটবলকে বেছে নিয়েছে। সে ফুটবলের সঙ্গে যেন থাকে এজন্য সব সহায়তা তাকে ক্লাব থেকে দেয়া হয়। সে এখন জাতীয় দলে কাজ করছে এটা আমাদের ক্লাব ও বুয়েটের জন্যও গর্ব বলে মনে করি।’
নাসিফের জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পেছনে মূল অবদান মারুফুল হকের। জাতীয় অ-২৩ দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি নাসিফকে কোচিং স্টাফের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হকও নাসিফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘বুয়েট থেকে তাকে আমি চিনি। নাসিফ অত্যন্ত মেধাবী। ভিডিও অ্যানালিস্ট কাজে এখন অনেক দক্ষ সে। ফুটবলের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বিকশিত হবে। নাসিফকে দেখে অনেকে আসতে পারেন এক্ষেত্রে। আবার নাসিফেরও সুযোগ থাকবে দেশের বাইরে এ নিয়ে কাজ করার।’
প্রকৌশলী থেকে সন্তানের ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছেন নাসিফের বাবা অধ্যাপক বাকী, ‘আসলে আমাদের পরিবারের কেউ খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এই ক্ষেত্রের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের ধারণাও কম। কিন্তু সে খুব আত্নবিশ্বাসী, তার আত্মবিশ্বাসের উপর আমার ও পরিবারের আস্থা রয়েছে।’
বাবা জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক হওয়ায় নাসিফের ছোটবেলা ও স্কুল, কলেজ ছিল জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজে নাসিফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু হানিফ ছাত্র ও ক্রীড়াপ্রেমী নাসিফকে তুলে ধরলেন বিশেষভাবে, ‘প্রথম শ্রেণি থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছি। ও ছিলো আমাদের জাবি স্কুল এন্ড কলেজের সব সময় ফাস্ট বয়। আমাদের ব্যাচ থেকে সে একমাত্র বুয়েটে চান্স পেয়েছে। পড়াশোনায় এতো ভালো হওয়া সত্যেও টিফিনের ফাঁকে, ক্লাস শেষে আবার অবসরে বিকেল বেলায় বন্ধুদের সাথে মেতে উঠতো ক্রিকেট আর ফুটবল খেলায়। খেলতে যেমন ভালোবাসতো, খেলাও দারুণ বুঝতো ও।’
এজেড/এনইউ