পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পেল না ভারত
বিশ্বকাপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে এর আগে কখনোই জিততে পারেনি পাকিস্তান। এবার পারল, তাও কি দারুণভাবে! বিরাট কোহলির দলকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়েই দশ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে বাবর আজমের পাকিস্তান। গড়ে ফেলেছে নতুন ইতিহাস।
পাক অধিনায়ক বাবর আজম ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন ভারতকে হারাতে হলে পাকিস্তানকে খেলতে হবে সেরা খেলাটাই। তার দল সেরা খেলাটাই খেলেছে। একেবারে ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই। পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে সময়ের সেরাদের ছোট্ট তালিকায় রাখা হয়। সেই শাহিনই হানলেন প্রথম আঘাতটা।
শাহিনের মুখোমুখি হয়ে প্রথম বলেই শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। সুবিধা করতে পারেননি ইনফর্ম ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুলও। আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হন ৩ রান করে।
সূর্যকুমার যাদব ১১ রান করে আউট হলে দলীয় ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও ঋষভ পান্ত। চতুর্থ উইকেটে দুজন যোগ করেন ৫৩ রান। শাদাব খানের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে পান্ত ৩৯ রানে আউট হলে ভাঙে তাদের জুটি। সমান ২টি করে চার-ছক্কায় ৩০ বলের ইনিংসটি সাজান পান্ত।
পরে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন কোহলি। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে ৪৫ বলে ফিফটির স্বাদ পান ভারতীয় অধিনায়ক। এতে রেকর্ড বুকে জায়গা করেন নেন তিনি। মাহেলা জয়াবর্ধনেকে (৯) ছাড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে এখন সর্বাধিক ১০টি ফিফটি কোহলির দখলে। সে ইনিংসটি অবশ্য আর বড় করতে পারেননি কোহলি। আফ্রিদির তৃতীয় শিকার হন ৫৭ রানে। ৪৯ বল খেলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
সুবিধা করতে পারেননি জাদেজা, হাসান আলীর দ্বিতীয় শিকার হন ১৩ রান করে। পরে হার্দিক পান্ডিয়া ১১ রান করে ফিরলে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানের পুঁজি পায় ভারত। ইতিহাস গড়তে পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ১৫২ রান।
শাহিন হেনেছেন প্রথম আঘাত, ইমাদ ওয়াসিম এসে কিপটে বোলিংয়ে বাড়িয়েছেন চাপ। শুরুর দশ ওভারে হাসান আলি এসে করে গেলেন দারুণ একটা ওভার, যা ভারতকে করে দিল আরেকটু নড়বড়ে। এরপর বাঁহাতি চলে আসায় ম্যাচ আপে এলেন মোহাম্মদ হাফিজ, করলেন দারুণ মিতব্যয়ী বোলিং। পাকিস্তান যা চাইতে পারতো, তার সবকটাই হয়েছে প্রথমার্ধে, এবার ছিল ব্যাটারদের পালা।
'ব্যাটারদের' শব্দটাও ঠিক যাচ্ছে না এখানে। বাবর আজম, আর মোহাম্মদ রিজওয়ান মিলেই যে করে দিয়েছেন কাজটা! ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরাহদের মতো সময়ের সেরাদের শাসিয়েছেন একেবারে শুরু থেকে। উড়ন্ত সূচনার পর সে সুতোয় ঢিল পড়তে দেননি একটুও। তাতেই ধরা দিল অবিস্মরণীয় এ জয়।
লাকি থার্টিন বলে একটা কথা আছে, পাকিস্তানের জন্য বাস্তব হয়ে দেখা দিল সেটাই। ওয়ানডে হোক, বা টি-টোয়েন্টি, বিশ্বকাপের আগের ১২ দেখায় জয় নেই। সে অধরা জয়টাই ধরা দিলো ১৩তম ম্যাচে এসে। এ জয় ঐতিহাসিক নিঃসন্দেহেই, তবে যে ঢঙয়ে জিতেছে পাকিস্তান, সেটাও নিশ্চিতভাবেই দেশটির ক্রিকেটে ইতিহাসে লেখা থাকবে সোনার হরফে।
এনইউ/এমএইচএস