নাঈম-মুশফিকের ফিফটিতে শ্রীলঙ্কাকে বড় লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ব্যাট-বলের যুদ্ধ হয় না দীর্ঘদিন। প্রায় ৫ বছর পর ঐতিহ্যের লড়াইয়ে আবার মাঠে নামবে দুই দল। মরুর বুকে ম্যাচটি শুরু হবে আজ (রোববার) রাত ৮টায়। এ ম্যাচের আগে নিজদের সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ঐতিহ্যের লড়াইয়ে এই ম্যাচটিও পিছিয়ে নেই কোনো অংশে। মাঠ ও মাঠের বাইরের নানা ঘটনা আর কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার লড়াই মানেই বাড়তি উন্মাদনা। তার রেশ দেখা গেল বিশ্বকাপের মঞ্চেও।
শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির পর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ থাকে দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। লিটন দাসের আউটের পর লাহিরু কুমারার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর এশিয়ার এই দুই ক্রিকেট পরাশক্তির ব্যাট-বলের লড়াই ফের পেল ভিন্ন মাত্রা। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের লড়াইয়ে প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়েই রাখতে হবে বাংলাদেশ দলকে। শারজাহর মন্থর উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে বড় সংগ্রহ টাইগারদের। ওপেনার নাঈম শেখ আর মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
ম্যাচের শুরুতে টস ভাগ্য কথা বলেনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হয়ে। লঙ্কানদের নেওয়া সিদ্ধান্তে আগে ব্যাট করতে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। কন্ডিশন বিবেচনায় তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে একাদশে ফেরেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ইনিংস শুরু করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন দাস ও নাঈম শেখ। ব্যাট হাতে ভালোই এগোচ্ছিলেন দুজন। যখন মনে হচ্ছিল পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে কোনো উইকেট হারাচ্ছে না টাইগাররা, তখনই বাধে বিপত্তি। কুমারার করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের পাঁচ নম্বর বলটি মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শানাকার হাতে ধরা পড়েন লিটন।
১৬ বলে ১৬ রান করে যখন লিটন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন, তখনই তার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে বসলেন কুমারা। জবাব এলো লিটনের পক্ষ থেকেও। এরপর লেগে গেলো ধাক্কাধাক্কি। নাঈম শেখ পেছন থেকে এসে কুমারাকে ধাক্কা দিয়ে সরালেন লিটনের কাছ থেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখে শেষমেশ আম্পায়ারই ছুটে এসে থামালেন তিনজনকে। দুই দলের মাঠের লড়াইয়ে এমন চিত্র যেন ইদানীং নিয়মিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে।
লিটনের আউটের পর ব্যাট হাতে নেমেই আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। তবে মরুর দেশে সে ঝড় চলল না বেশিক্ষণ। ইনিংসের অষ্টম ওভারে করুণারত্নের লেগ স্টাম্পের উপর করা বলের লাইন মিস করেন সাকিব। বল সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে। ফেরেন ৭ বলে ১০ রান করে।
দুই উইকেট হারানোর পর ব্যাট হাতে স্বরূপে ফেরেন নাঈম শেখ, সঙ্গে যোগ দেন মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘদিন রান খরায় ভোগা মুশফিক আজ বিধ্বংসী রূপ নেন, অপরপ্রান্তে নাইমের ব্যাটেও রান আসে। তাতে স্কোর বোর্ডে রান উঠতে থাকে টি-টোয়েন্টির গতিতেই। নিজের মতো খেলে, নিজের গতিতে ব্যাট করে চলতি বিশ্বকাপে আরেকটি ফিফটির দেখা পান নাঈম। কুমারাকে মাথার ওপর দিয়ে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৪ বলে, ৪টি চারে। টি-টোয়েন্টিতে ২৫ ম্যাচে তার চতুর্থ ফিফটি এটি।
তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংটি বেশিদূর আর টানতে পারেননি নাঈম। বিনুরা ফার্নান্দোকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬২ রানে। ৫২ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। নাঈমের আউটে ভাঙে তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ৭৩ রানের পার্টনারশিপ। নাঈম সাজঘরে ফেরার পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক। দুজনের চতুর্থ উইকেট পার্টনারশিপের মধ্যে ব্যক্তিগত ফিফটির স্বাদ পান মুশফিক। মাত্র ৩২ বলে আসে তার এই অর্ধশতক। ১১ ইনিংস ও প্রায় ২ বছর পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পঞ্চাশ ছুঁলেন মুশফিক।
টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকের ষষ্ঠ ফিফটির উদযাপনের পরেই রান আউটে কাটা পড়েন আফিফ হোসেন। সতীর্থরা যেখানে ব্যাট হাতে রানে ফেরার বার্তা দিয়েছেন, সেখানে ব্যর্থই বলতে হবে আফিফকে। ৬ বলে ৭ রান করে আউট হন এই তরুণ। মুশফিক অবশ্য ফিফটির ইনিংসটি বড় করতে পারেননি বলের অভাবে। ৩৭ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। যেখানে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান মুশফিক। সঙ্গে শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৫ বলে ১০ রানের ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ১৭২ রান।
ম্যাচে লঙ্কানদের হয়ে চামিকা করুণারত্নে, বিনুয়া ফানান্দো ও লাহিরু কুমারা ১টি করে উইকেট নেন।
টিআইএস/এনইউ/জেএস