ব্যাটিংই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা
বিশ্ব ক্রিকেটে ‘আন্ডারডগের’ তকমাটা এখন আর যায় না বাংলাদেশ দলের সাথে। বিগত বছরগুলোতে বারবারই ঘরের মাঠে নিজেদের অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ করেছে টিম টাইগার। মূলত ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকেই শুরু হয় এই দিন বদলের গল্প। একটা সময় ঘরের মাঠে হোক কিংবা বাইরে সবজায়গায়তেই অসহায় আত্মসমর্পন করা টাইগাররা এখন চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিদেরও।
এবারের বিশ্বকাপ মিশন অতীতের যে কোন আসরের চেয়ে শক্ত অবস্থানে থেকেই শুরু করবে বাংলাদেশ। চলতি বছরে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই (১২) বেশি জয় পেয়েছে বাংলাদেশের (৯) চেয়ে। ঘরের মাঠে সর্বশেষ তিনটি সিরিজে জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে তারা। এমন ফর্মে নিশ্চিতভাবেই বি গ্রুপের ফেভারিট বাংলাদেশ। তবে জয়ের দারুণ রেকর্ড নিয়ে ওমানে পাড়ি দিলেও দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের ফর্ম ও বড় রান করার সক্ষমতা নিয়ে।
অতীতের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতাগুলো অবশ্য তেমন একটা সুখকর নয় বাংলাদেশের জন্য। ২০০৭ সালের উদ্বোধনী আসরে সুপার এইটে পাড়ি দিলেও ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১২ এর আসরগুলোতে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি লাল সবুজের দল।
২০১৪ সালে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৬ করার সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। প্রথম রাউন্ডের শীর্ষ দল হয়ে সুপার টেনে উঠলেও এই পর্বের চারটি ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। ২০১৬তেও একই ব্যর্থতার গল্প লিখে টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে সেই এক রানের হার আজও দুঃসপ্ন হয়ে দেখা দেয়। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গেলে আরও একবার দ্বিতীয় পর্বের সবকটি খেলায় পরাজিত হয় বাংলাদেশ।
সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি-বিন-মর্তুজাসহ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা বারবারই বলে এসেছেন নিজেদের দিনে যে কাউকেই হারাতে পারে বাংলাদেশ। সর্বশেষ সিরিজগুলোতে দারুণ পারফর্ম করে টি টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ের ছয়ে উঠে এসেছে রিয়াদ বাহিনী। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত দলগুলোও তাই এখন আর সহজ প্রতিপক্ষ মনে করে না বাংলাদেশকে।
তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার দারুণ মিশেল রেখে এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি ও তামিম বাদে রয়েছেন ‘পঞ্চপান্ডবের’ বাকি তিন সদস্য। বিপদ থেকে দলকে টেনে তুলতে তাদের দিকেই চেয়ে থাকে পুরো জাতি। বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। স্লো উইকেটে দারুণ কার্যকর মুস্তাফিজুর শারজাহ ও আবুধাবির উইকেটে ধারণ করতে পারেন রুদ্রমূর্তি। গত কয়েক বছরে আইপিএলসহ অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে এখন বেশ পরিপক্ক তিনি।
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া তরুণ দুই তুর্কি নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদি সম্প্রতি দারুণ করলেও এমন বড় মঞ্চে নিজেদের নার্ভ নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য। তবে বৈচিত্র্যের অভাব ভোগান্তির কারণ হতে পারে তাদের জন্য। আরও আছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে মারমুখী ইনিংস খেলতে পারেন তিনি। ফেনীর এই অল-রাউন্ডার একাদশে থাকলে নিশ্চিতভাবেই বাড়বে লোয়ার অর্ডারের শক্তি।
নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারলে তাসকিন আহমেদও গড়ে দিতে পারেন পার্থক্য। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বোলারদের। সেই ম্যাচের ভুলগুলো শুধরেই কাল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামতে চাইবে বাংলাদেশ।
বোলিংয়ের চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা এখন টাইগারদের ব্যাটিং। দুর্বিষহ উইকেট বানিয়ে কিউই ও অজিদের বধ করলেও এতে আত্মবিশ্বাস শূণ্যের কোঠায় নেমে গেছে ‘উইলো’ সৈনিকদের। এর প্রমাণ মিলেছে শ্রীলংকা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেই। অপেক্ষাকৃত দূর্বল বোলিং আক্রমণের এই দুই দলের বিপক্ষে বড় রান করতে ব্যর্থ হয়েছেন লিটন দাস, নাইম শেখরা। সেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত দলগুলোর বিপক্ষে বড় রান করাটা যে বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে তাদের জন্য তা বলাই যায়।
আফিফ হোসেন ধ্রুব কিছুটা আস্থার প্রতিদান দিলেও দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ পেয়েও এখনো নিজেদের প্রতিভার সর্বোচ্চটা দিতে পারেননি লিটন দাস, সৌম্য সরকাররা। শট নির্বাচনের ক্ষেত্রে লিটনের দূর্বলতা চোখে পড়েছে অনেকেরই। এদিকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বাজে ফুটওয়ার্কের কারণে অনেকবারই নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন সৌম্য। অফ স্ট্যাম্প লাইন ও এর বাইরের বলগুলোতে বেশ নড়বড়ে তিনি। তবে দারুণ বল হিটিং সক্ষমতার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেটে কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন এই ওপেনার।
টাইগার ব্যাটিংয়ে আরও একটি চিন্তার জায়গা ওপেনিং। ২০০৭ সালে অভিষেক হওয়া তামিম ইকবালের কোন যোগ্য সঙ্গী আজ পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারেননি নির্বাচকরা। এবার তামিম না থাকায় দায়িত্বটা সামলাতে হবে লিটন, নাইম, সৌম্যদেরই। লিটন সৌম্যের যে ঝড়ো ইনিংস খেলার ক্ষমতা রয়েছে তা আগেই দেখিয়েছেন তারা। কিন্তু আরেক ওপেনার নাইম শেখের টি টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০৫.৯৪। এই ফরম্যাটে যা বড্ড বেমানান। সব মিলিয়ে আরও একটি বিশ্বকাপ মিশনের প্রাক্কালে টাইগার শিবিরে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম ব্যাটিং।
১ম রাউন্ডে বাংলাদেশের সূচি
১৭ অক্টোবর
বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ড
১৯ অক্টোবর
বাংলাদেশ বনাম ওমান
২১ অক্টোবর
বাংলাদেশ বনাম পাপুয়া নিউগিনি
এআইএ/এনইউ