মাঠে আমাদের কোচ সাকিব ভাই
বাংলাদেশ ক্রিকেটে স্বল্পভাষী যে কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন তাদের একজন শেখ মেহেদী হাসান। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে আছেন তিনি। প্রথমবারের মতো কোন বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন এই অলরাউন্ডার। অথচ নেই কোন উৎফুল্লতা। বিশ্বকাপের মতো মেগা মঞ্চে ডাক পাওয়া তার কাছে সাধারণ দু-চারটি আন্তর্জাতিক সিরিজে খেলতে পাওয়ার মতোই ব্যাপার।
শেখ মেহেদীর সঙ্গে আলাপকালে সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ উঠতেই কণ্ঠে বেশ লাজুক হাসি নিয়ে বললেন, ‘ভাই অল্পতেই সেরে ফেলবেন কিন্তু।’ পরে সেই দায়িত্ব অবশ্য নিজেই পালন করলেন মেহেদী। চিরাচরিত স্বভাবে স্বল্প কথায় গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা সারলেন তিনি। সেখানে নিজের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান এবং অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়েও নিজের ভাবনার কথা জানালেন শেখ মেহেদী।
ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য তরুণ অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসানের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন, অসাধারণ অনুভূতি নিশ্চয়ই?
শেখ মেহেদী: না, একেবারেই সাধারণ অনুভূতি। বাড়তি তেমন কোনও চিন্তা-ভাবনা নাই আসলে।
প্রশ্ন: ২০১৮ সালে অভিষেক, মাত্র একটি ম্যাচ খেলেই দল থেকে বাদ পড়লেন। পরে ফিরলেন প্রায় দুই বছর পর। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিয়মিত। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আগে?
শেখ মেহেদী: বিশ্বকাপে খেলব, এমন পরিকল্পনা সেভাবে কখনোই মাথায় ছিল না। সম্প্রতি আমরা বেশ কয়েকটি সিরিজ খেলেছি, বেশ ব্যস্ত সূচি ছিল। আমার সমস্ত ফোকাস সেদিকেই ছিল।
প্রশ্ন: কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আপনাকে বলেন, ‘ফ্রি’ ক্রিকেটার। ওপেনিং থেকে নাম্বার নাইন, সবখানেই আপনাকে খেলানো যায়। কোচের এমন ভাবনাকে কিভাবে দেখেন?
শেখ মেহেদী: সত্যি বলতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। এটা আমি খুব উপভোগ করি। কারণ, আমি এমন একজন খেলোয়াড়, আমার কাছে ভালো লাগে যে কোচ চাইলেই আমাকে যেকোনো ব্যাটিং পজিশনে খেলাতে পারেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: কখনো মনে হয় না নিজস্ব একটা ব্যাটিং পজিশন থাকলে ভালো হতো কিংবা নিয়মিত উপরের দিকে ব্যাটিং করলে ইনিংসগুলো বড় করতে পারতেন?
শেখ মেহেদী: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। নির্দিষ্ট একটি ব্যাটিং পজিশন থাকলে অবশ্যই ভালো লাগে। কিন্তু আমার কাছে দলের চাহিদাটাই গুরুত্বপূর্ণ। দলের জন্য যখন যেভাবে করা যায় তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। এত কিছু মাথায় নাই যেহেতু এটি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। এই ফরম্যাটে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করতে হতে পারে। আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এত দৃঢ়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে হবে না। অবশ্যই দলের চাহিদাটাই সর্বপ্রথম, সেটাই আগে দেখতে হবে।
প্রশ্ন: টিম ম্যানেজমেন্ট সন্তুষ্ট হলেও আপনার নিজের ব্যাটিং নিয়ে আপনার নিজেরই আক্ষেপ আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ভালো কিছু ইনিংস আছে আপনার। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন?
শেখ মেহেদী: নিজের স্কিল আরো ইম্প্রুভ করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কখনোই একইরকম নয়। আমার কাছে যেটা মনে হয়, এখানে টিকে থাকলে গেলে অনেক ইমপ্রুভমেন্ট দরকার।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ব্যাটিং পরামর্শক অ্যাশওয়েল প্রিন্সের সঙ্গে নেটে অনেক সময় কাটাতে দেখা গেছে আপনাকে। রাসেল ডমিঙ্গোর পাশাপাশি রঙ্গনা হেরাথও আপনার ব্যাটিং উন্নতির জন্য কাজ করছেন। ব্যাটিং নিয়ে কী কাজ করছেন আর এগুলো কতটা আত্মবিশ্বাসী করছে আপনাকে ছন্দে ফিরতে?
শেখ মেহেদী: তাদের সবার সাথে কাজ করতে পেরে অবশ্যই খুবই ভালো লাগে। তারা চান আমি আমার স্কিল আন্তর্জাতিক লেভেলে নিয়ে যাই। ইম্প্রুভ করতে পারলে সেটি আমার জন্য যেমন ভালো, তেমনি দলের জন্যও ভালো। ব্যাটিংয়ে আমার বেশ ভালো সক্ষমতা আছে। বর্তমান পরিস্থিতি আমি যদি ওভারকাম করতে পারি, সেটি তো অবশ্যই ভালো হবে।
প্রশ্ন: ব্যাটিং নাকি বোলিং, কোন ভূমিকায় পারদর্শী হতে চান?
শেখ মেহেদী: ব্যাটিং-বোলিং দুটোই ভাল লাগে আমার। দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটাই মুখ্য। দলকে কিছু দিতে পারলেই ভালো লাগে। যখন যেরকম পরিস্থিতি আসে, সেই পরিস্থিতিতে ব্যাটিংয়ে হোক বা বোলিংয়ে, দলকে কিছু দিতে পারলে সেটি তৃপ্তিদায়ক এবং ভালো লাগার বিষয়।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও আপনাকে সবখানে ব্যবহার করা যায়। নতুন বলে নিয়মিত হাত ঘোরাচ্ছেন। কিছুদিন আগে জানিয়েছেন এই দায়িত্ব বেশ উপভোগ করছেন আপনি। ঘরের মাঠে স্লো উইকেটে বাজিমাত করলেও বিশ্বকাপের স্পোর্টিং উইকেটে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কতটা সহজ হবে বলে মনে করছেন?
শেখ মেহেদী: দেশের মাটিতে স্লো উইকেট হোক বা দেশের বাইরে ভালো উইকেট হোক, আন্তর্জাতিক ম্যাচ সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জটি নিজের সঙ্গে নিজের। যে পরিস্থিতিতেই খেলেন না কেন, যে আবহাওয়া, যে কন্ডিশনে খেলেন না কেন, চ্যালেঞ্জ সবসময় নিজের সাথে নিজেরই নিতে হবে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো করা খুব কঠিন। কারণ, এটা ছোট ফরম্যাট, স্বল্পসময়ের খেলা। এখানে অল্প সময়ে চিন্তা করে সবকিছু করতে হয়। এর মধ্যেই এখানে মেধা খাঁটিয়ে আপনাকে সবকিছু করতে হবে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ অবশ্যই বড় মঞ্চ। সেখানে আপনার বোলিংয়ে কোন বৈচিত্র্য দেখা যাবে?
শেখ মেহেদী: বোলিংয়ে কোন বৈচিত্র নেই। তবে স্কিলে দক্ষতা তো অবশ্যই লাগবে। আমার কাছে মনে হয় এখানে বুদ্ধিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী করতে চাচ্ছেন, কী করলে ভালো হবে সেটি ঠিকঠাক এক্সিকিউট করতে পারলে আপনি সফল হবেন।
প্রশ্ন: স্পিন বিভাগে আপনার সঙ্গে আছেন সাকিব আল হাসান। তার মতো বিশ্ব নন্দিত একজনের পরামর্শ ম্যাচে কতটা আত্মবিশ্বাস যোগায়?
শেখ মেহেদী: সাকিব ভাই এমন একজন ক্রিকেটার যিনি মাঠে থাকলে আমাদের দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বড় লেভেলে চলে যায়। এটা আসলে বলে প্রকাশ করা যাবে না। সাকিব ভাই মাঠের মধ্যে কোচের ভূমিকা পালন করেন। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কী করলে কী হবে তিনি সবই বুঝতে পারেন। সাকিব ভাই থাকাতে আমাদের স্পিন বিভাগ অনেক শক্তিশালী হবে। সম্প্রতি আমরা যে সিরিজগুলোতে সাফল্য পেয়েছি, সেখানে সাকিব ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি ছিল।
প্রশ্ন: মুস্তাফিজুর রহমান ছন্দে ফিরেছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি কতটা ভূমিকা রাখতে পারেন বা আপনাদের কাজ সহজ করে দিতে পারেন বলে মনে করেন?
শেখ মেহেদী: দেখেন মুস্তাফিজকে আমরা সবাই চিনি। আমরা সবাই জানি মুস্তাফিজ কী টাইপের বোলার। মুস্তাফিজ এমন একজন বোলার যাকে বিশ্বের প্রত্যেকটি ব্যাটসম্যান সমীহ করে খেলেন। মুস্তাফিজ আমাদের দলে এমন একটি ঘোড়া, যে ঘোড়ার মাধ্যমেই আমরা অনেক দূর যেতে পারব।
প্রশ্ন: অধিনায়ক আপনারা জুনিয়ররা খারাপ করলেও আপনাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তার নেতৃত্ব কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শেখ মেহেদী: রিয়াদ ভাই অসাধারণ একজন অধিনায়ক। রিয়াদ ভাইয়ের সমর্থন আমরা সবসময় উপভোগ করি। রিয়াদ ভাই শুধু জুনিয়রদেরই নয়, জুনিয়রদের পাশাপাশি সিনিয়রদেরও অনেক সমর্থন করেন। এই জিনিসটি অনেক ভালো লাগে। অধিনায়কের সমর্থন পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটাররা ভালো-মন্দ সময়ের মধ্য দিয়েই যাবে। সে সময় অধিনায়কের সমর্থন পাওয়ারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ নিশ্চয়ই নিজেকে প্রমাণ করার বড় মঞ্চ। কি পরিকল্পনা সাজিয়েছেন?
শেখ মেহেদী: হ্যাঁ, এটা ঠিক বিশ্বকাপ অনেক বড় মঞ্চ। কিন্তু আমার কাছে প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপ বলে আমার কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচেই আমার প্রাপ্তির অনেক কিছু আছে। যদি সুযোগ হয়, সাধারণত আন্তর্জাতিক ম্যাচে যেভাবে এফোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করি বিশ্বকাপেও সেটিই ভাবনা থাকবে।
টিআইএস/এটি