পেলে-নেইমারের ব্রাজিলে ক্রিকেট বিপ্লব!
ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। বিশ্বকে পেলে, রোনালদো, রোনালদিনহো, নেইমারদের মত শৈল্পিক ফুটবলার উপহার দিয়েছে এই ব্রাজিল। ফুটবলের জনপ্রিয়তা অন্য যে কোন খেলাকে হার মানায় সেখানে। তবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় ক্রিকেট হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্রাজিলে।
ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান শহর রিও ডি জেনিরো থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত শহর পোকোস দে কালদাস। সেখানকার মেয়র দাবি করেন, তার শহরের শিশু-কিশোরদের কাছে ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়!
যদিও ব্রাজিলের অধিকাংশ মানুষ ক্রিকেট সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণাই রাখেন না। এমন একটি দেশে ক্রিকেটের উত্থান ও পথচলা একদমই সহজ ছিল না। দেশটির জাতীয় ক্রিকেট সংস্থা ‘ক্রিকেট ব্রাজিল’ ২০১০ সালে সর্বপ্রথম একটি অনাথাশ্রমের ২৪টি শিশুকে ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা দেয়। আজ ৫০০০ এরও অধিক শিশু বোর্ডের ক্রিকেট প্রকল্পের অংশ।
মজার বিষয় এসকল শিশু-কিশোরদের মাঝে অধিকাংশই নারী। দেশটির নারী ক্রিকেট দলের সাফল্য ও বেশ ঈর্ষণীয়। সাউথ আমেরিকান উইমেন চ্যাম্পিয়নশিপের এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া ৫টি আসরের ৪টিতেই চ্যাম্পিয়ন তারা। এখন ব্রাজিল নারী ক্রিকেট দল পাখির চোখ রাখছে ২০২৩ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে।
অধিনায়ক মোরেত্তি আভেরি পরবর্তী থাইল্যান্ড হওয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, ‘আমরা এখন যাই করছি সেটা আমদের প্রথম লক্ষ্যের পথে এক একটি ধাপ। আমাদের ঐতিহ্যে ক্রিকেট না থাকলেও আমরা ধাপগুলো অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’
ক্রিকেট ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট ম্যাট ফেদারস্টোন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনে ক্রিকেটে অবদান তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, ‘একটি অনাথাশ্রম থেকে আমরা শুরু করেছিলাম। সেখান থেকে পুরো দেশেই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে খেলাটি। ক্রিকেট এর কারণে এখন সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা স্কুল শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে দেশটির সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে এবং খেলাটিকে ঘিরে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারবে।’
তবে এই শিশুদেরকে ক্রিকেটে আনতেও বেশ কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে ক্রিকেট ব্রাজিলকে। শিশুদের অভিভাবকদের রাজি করানো ছিল একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। অধিকাংশ অভিভাবকই এই খেলায় তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। সরকার থেকে তহবিল আসলেও স্পন্সরদেরও অবদানও কম নয় ব্রাজিল এর ক্রিকেট উত্থানে। বায়োট্রিট, ডানসান তাদের অন্যতম দুটি স্পন্সর। লর্ডস ট্যাভারনেরস এর পাঠানো বিপুল পরিমাণ জার্সি ও সরঞ্জামাদিকে পুনর্ব্যবহৃত কিটের সবচেয়ে বড় অনুদান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ফেদারস্টোন।
ক্রিকেট ব্রাজিলের লক্ষ্য আগামী সকল বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের বাছাই পর্ব পার করে মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া। স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে ক্রমাগত নিজেদের ক্রিকেট অবকাঠামো নিয়ে কাজ করে চলছে তারা। লক্ষ্যে অবিচল থাকলে ২০২৩ বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মত কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে দেখা যেতে পারে ব্রাজিলকে।
এআইএ/এটি/এনইউ