সুযোগ কাজে লাগাতে শিখে গেছেন সাইফউদ্দিন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ৪ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এই সময়টাতে যতটা না মাঠে কাটিয়েছেন, তার চেয়েও বেশি ভুগিয়েছে ইনজুরি। যখনই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন, তখনই কোনো ইনজুরি এসে হানা দেয়।
সাইফউদ্দিন আর ইনজুরি যেনো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তবে সাইফউদ্দিনও ছাড়বার পাত্র নন। বারবার ছিটকে গিয়ে, আবারও দৌড়ে ঠিকই ফিরেন তিনি। নিজেকে প্রমাণ করতে যে সুযোগই পান, সেটিকেই আঁকড়ে ধরেন শক্তভাবে। এতোকিছু বলার একটাই কারণ হলো- ক্রিকেটের মোড়লখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার সাথে সদ্য শেষ হওয়া ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। শুরু থেকেই নতুনের কেতন উড়িয়ে দুর্দান্ত রূপে ছিল টিম বাংলাদেশ।
একে একে টানা তিনটি জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় টাইগাররা। অথচ ইনজুরিমুক্ত পুরোপুরি ফিট সাইফউদ্দিন নেই- একটি ম্যাচেরও সেরা একাদশে! সোশ্যাল মিডিয়া ও ক্রিকেট বিশ্লেষকদের আলোচনায় বিষয়টি কিছুটা উঠে এলেও, দলের ধারাবাহিক জয়ের কারণে এটি আসলে ধোপে টিকেনি। সাথে বোলারদের কার্যকর পারফরম্যান্স ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়মিত অনুসরণ করা একটি পক্ষ-সাইফউদ্দিনের সুযোগ না পাওয়ায় নিতান্তই হতাশ হয়েছে।
এই সিরিজে মিরপুরের উইকেট স্লো এবং স্পিন সহায়ক করে তৈরি হয়েছে বলে সাইফউদ্দিন নেই দলে, এমনটাও জানা গেছে অনেকের আলোচনায়। এই যুক্তিও মেনে নেয়নি অনেকে। এর কারণ হচ্ছে- ঘরের মাটিতে বিশেষ করে মিরপুরে সাইফউদ্দিনের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। এছাড়াও কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ে সফরেও তিনি ব্যাটে-বলে সরব ছিলেন। এর আগে যদি আপনি ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দিকে দৃষ্টি দেন, সেখানে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও নিজেকে প্রমাণ করার দৃষ্টান্ত রেখে- আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করতে ভূমিকা পালন করেন তরুণ এই অলরাউন্ডার।
অনুশীলনে হঠাৎ ইনজুরিতে পড়ে সর্বশেষ বিপিএল খেলতে না পারলেও গত বছরের অক্টোবরে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপেও তিনি ছিলেন স্বনামে উজ্জ্বল। সেখানেও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন। এ টুর্নামেন্টগুলো মিরপুরেই হয়েছিল। সে দৃষ্টিতে ঘরের মাঠে অর্থাৎ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাইফউদ্দিন কতটা কার্যকর হতেন, সেটি ধারণা করা যেতেই পারে । সেই ভাবনায় ঢোলের বাড়িটা সাইফউদ্দিনই আবার দিয়ে দিলেন সিরিজের সর্বশেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়েই।
টানা ৩ ম্যাচ জয়ের পর ৪র্থ ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ পায় লাল-সবুজ বাহিনী। এর ফলে সিরিজের ৫ম ও শেষ টি টুয়েন্টিতে দুইটি পরিবর্তন আনে টিম ম্যানেজমেন্ট। এতে সুযোগ আসে সাইফউদ্দিনের এবং গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের ‘ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হন তিনি। এতেই শেষ চার ম্যাচে তার অনুপস্থিতি নিয়ে সবার আফসোস বাড়ে। তবে সাইফউদ্দিনকে দেখে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছে ম্যাচে, বাস্তবতায় নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছে এই সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার। যখনই সুযোগ আসবে, তখনই পারফর্ম করতে হবে-এই মন্ত্রেই যেন উজ্জীবিত তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে প্রতি মুহুর্তে, এটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। আর এই উপলব্ধির জন্য বেশিদূর তাকানোর দরকার নেই। নিজের সতীর্থ এবং বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দিকে নজর দিলেই হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত যিনি নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন- অন্য এক উচ্চতায় । জিম্বাবুয়েতে নিজের আইডল সাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে ব্যাট করে- দলকে জেতানোর পুরোনো স্বপ্ন পূরণ করেন সাইফ। বোলিংয়ে জুটি বেঁধে দলকে জিতিয়ে বাকি ইচ্ছেও পূরণ করে নিলেন সম্ভবত ।
একদিকে সাকিব নেন চার উইকেট, অন্যদিকে সাইফউদ্দিন নেন তিনটি। এতেই নিজেদের সর্বনিম্ন টি-টুয়েন্টি স্কোরে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া, মেনে নেয় সিরিজের সবচেয়ে ‘অমর্যাদার’ পরাজয় । ইতিমধ্যে এই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি মিলে ৫০টি ম্যাচ বাংলাদেশের হয়ে খেলে ফেলেছেন সাইফউদ্দিন। এই অর্ধশতাধিক ম্যাচে রেকর্ড ধরনের কিছু তৈরি করতে না পারলেও বেশ ধারাবাহিক থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিছু কিছু ম্যাচে খরুচে হলেও দলের প্রয়োজনে একাধিকবার ব্রেক-থ্রু এনে দিয়ে দলের জয়ে ভূমিকা পালন করেছেন।
বোলিংয়ে চেষ্টা করেছেন ভিন্নতা আনতে। যখনই ব্যাট করার সুযোগ এসেছে, তখনই সামর্থ্যের জানান দিতে চেয়েছেন। যদিও এগুলো কেবলমাত্র শুরু, পথ এখনও অনেক দীর্ঘ। ইনজুরি থেকে মুক্ত থেকে সাকিবের মতো দেশকে আরও অনেকদিন সার্ভিস দেবেন- সাইফউদ্দিন, হবেন আরও পরিণত; এটিই প্রত্যাশা ক্রিকেট বিশ্লেষক ও অনুরাগীদের ।
শরিফুল ইসলাম অপু।। ক্রীড়া লেখক ও সার্টিফায়েড ক্রিকেট আম্পায়ার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
এটি