ব্যবধানটা তো গড়ে দিয়েছিলেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ মুস্তাফিজই!
টুকটাক ঝলক দেখা যাচ্ছিল বটে, কিন্তু বল হাতে আগের ধারটা যেন ছিল না মুস্তাফিজুর রহমানের। বিশেষ করে, গেল নিউজিল্যান্ড সিরিজে যখন কিছুটা চোট নিয়ে খেলছিলেন, আর ছন্দহীনতায় পড়ছিলেন বেশ, তখনই ফিসফাস ভারী হতে লাগল ক্রমে। মুস্তাফিজ আর সেরা ছন্দে ফিরতে পারবেন তো?
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিটা খেললেন, তিনটে উইকেটও পেলেন। কিন্তু মাত্র জিম্বাবুয়েই তো, সেই জিম্বাবুয়ে যারা কিনা খেলছে না আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও! তার পারফর্ম্যান্সকে একটু নিচু করে দেখার একটা উপায় ছিল তাই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে যা করলেন, তার পর কি আর যে উপায়টা আছে? নিঃসন্দেহে না। মুস্তাফিজ তাই বৈশ্বিক গণমাধ্যমের তারিফও কুড়োচ্ছেন ঢের।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে এলেন আক্রমণে। ভেঙে ভেঙে করা দুটো ওভারে দিলেন চার রান। কিন্তু আসল পরীক্ষা তো ডেথ ওভারে! মুস্তাফিজ যেন নিজের সবটুকু জাদু তুলে রেখেছিলেন শেষের জন্যই।
নিজের তৃতীয় ওভারে যখন এলেন আক্রমণে, তখন অস্ট্রেলিয়ার চাই ৪ ওভারে ৩৮ রান। হাতে আরও ৭ উইকেট। সেই সময়ে পুরো ওভারে দিলেন চার রান, তাতে অজিদের কাজটা হয়ে পড়ল আরও একটু কঠিন।
শরিফুল পরের ওভারে দিলেন ১১, প্রতিপক্ষের প্রয়োজনীয় রানের সংখ্যাটা নেমে এল ২৩-এ, দুই ওভার থেকে। তখনই চূড়ান্ত আক্রমণ মুস্তাফিজের। না, দুই তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচটা শেষ করে দেননি; কিন্তু যা করেছেন তা যেন উইকেট থেকেও অমূল্য, অন্তত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর কাছে তো বটেই। অ্যালেক্স ক্যারি আর ড্যান ক্রিশ্চিয়ান তার একের পর এক কাটারে পরাস্ত হয়ে তুলতে পারলেন মোটে এক রান, ম্যাচটা শেষ সেখানেই। শেষ ওভারে ১১ রান তুললেও কাজ হয়নি তাই।
১০ রানের এই জয় ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয় ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের হাতে। বিচারকদের রায়ে ম্যাচসেরা হলেন মাহমুদউল্লাহ। লড়াকু এক অর্ধশতকের পর নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রান ডিফেন্ড করে দলকে জেতানো, অধিনায়ক রিয়াদের এই অর্জনের যথেষ্ট কারণ ছিল বটে। মুস্তাফিজ তাতে রয়ে গেলেন আড়ালেই।
তবে সংবাদ সম্মেলনে এসে তাকে আর আড়ালে থাকতে দিলেন না রিয়াদ। সতীর্থকে ভাসালেন স্তুতিতে। বললেন, ‘মুস্তাফিজ আজ যে স্পেল করেছে, পাঁচ উইকেট পেলে যেমন হয় এর চেয়ে এটা কম কিছু ছিল না। বিশেষ করে ১৯তম ওভারে এসে কেবল একটি রানই দিয়েছে সে, পাঁচটা ডট বল করেছে। এটা আসলেই অনেক বড় কিছু।’
এমন এক ম্যাচের পর অধিনায়ক রিয়াদের আশা, আরও অনেকদিন দলকে এমনভাবে জিতিয়ে দিয়ে যাবেন মুস্তাফিজ। বললেন, ‘সে একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার, সেটা আমার সবসময়ের বিশ্বাস। সে বিশ্বমানের একজন। ইনশা আল্লাহ, সে আরও অনেক বছর দেশকে সার্ভিস দিবে এবং আরও অনেক ম্যাচ জেতাবে।’
এনইউ