ভবিষ্যতের অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার গড়ার কারিগর বাংলাদেশের সেলিম
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম দুর্গ পার্থ। এখানকার ওয়াকায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল যেমন অপ্রতিরোধ্য তেমনি পার্থ থেকে ডেনিস লিলি, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইক হাসির মতো ক্রিকেটার এসেছেন। পার্থের ভবিষ্যত প্রজন্মের হাসি-গিলক্রিস্ট তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার মাহবুবুর রহমান সেলিম।
১৭ বছর আগে পার্থে যান সেলিম। প্রথমে পার্থ ক্রিকেট ক্লাবের স্পেশালিষ্ট ব্যাটিং কোচ ছিলেন। ১০ বছর পার্থের এই শীর্ষ ক্লাবের কোচিংয়ে ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগে পার্থ ক্রিকেট ক্লাব গত এক দশকে শীর্ষ চারের মধ্যেই ছিল। একবার রানার্সআপও হয়েছিল।
তার কোচিংয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় নিজেই একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। পার্থ ক্রিকেট মেন্টরিং একাডেমিতে ৮০ জনের মতো ক্রিকেটার প্রশিক্ষণ নেয়। এখানে অনূর্ধ্ব পর্যায়ে বেশি জোর দেয়া হয়। অনূর্ধ্ব ১৩ থেকে ১৭ পর্যায়ে পার্থের অনেক ক্ষুদে ক্রিকেটার সেলিমের একাডেমি থেকে তালিম নেন। তার একাডেমিতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটি সময় মাসখানেকের জন্য সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ব্র্যাড হগও আসেন। তিনি তরুণ ক্রিকেটারদের স্পিন নিয়ে কাজ করেন।
সেলিমের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারেরও ভালো পরিচয় রয়েছে। ল্যাঙ্গার অস্ট্রেলিয়ান দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে পার্থ রাজ্যের (ওয়েস্টার্ন ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়া) হেড কোচ ছিলেন। টম মুডিও পার্থের। ভবিষ্যতে টম মুডিকেও তার একাডেমিতে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আমার একাডেমির ক্রিকেটাররা নিয়মিতভাবেই রাজ্য দলে থাকছে। রাজ্য দল থেকে ভালো করতে পারলে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হবে। আমার স্বপ্ন একদিন পার্থ ক্রিকেট মেন্টরিং থেকে অস্ট্রেলিয়ান জার্সি পড়বে অনেকে’ পার্থ থেকে ঢাকা পোস্টকে বলেন সেলিম।
সেলিমের একাডেমি থেকে প্রতি বছর পার্থের লিগে অংশ নেওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩০ এর বেশি এবং পার্থ রাজ্য দলে ৩-৪ জন ক্রিকেটার জায়গা করে নেয় সেলিমের। বাংলাদেশের ক্রিকেটারের স্বপ্ন তার একাডেমি ও তার হাতে গড়া ক্রিকেটার একদিন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে খেলবে, ‘আমার একাডেমির ক্রিকেটাররা নিয়মিতভাবেই রাজ্য দলে থাকছে। রাজ্য দল থেকে ভালো করতে পারলে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হবে। আমার স্বপ্ন একদিন পার্থ ক্রিকেট মেন্টরিং থেকে অস্ট্রেলিয়ান জার্সি পড়বে অনেকে’ পার্থ থেকে ঢাকা পোস্টকে বলেন সেলিম।
বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে কোচিং পেশা হিসেবে নেওয়া খুবই কঠিন। পার্থের মতো উন্নত জায়গায় বাংলাদেশ থেকে গিয়ে নিজেকে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পার্থ ক্রিকেট মেন্টরিংয়ের আর্থিক প্রসঙ্গে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াতে ঘণ্টা অনুযায়ী হিসাব। আমার এখানে এক ঘণ্টা অনুশীলন করলে ৭০-৮০ ডলার দেয় প্রশিক্ষণার্থীরা। আমাকে মাঠ ভাড়া, অন্যান্য কোচের সম্মানী দিতে হয়। সব মিলিয়ে ভালোই চলছে একাডেমি।’ হগের মতো ব্যক্তিদের বিশেষ সম্মানীও দেন সেলিম। অস্ট্রেলিয়ান ছাড়াও সেলিমের একাডেমিতে বাংলাদেশি প্রবাসী ২ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়াতে ঘণ্টা অনুযায়ী হিসাব। আমার এখানে এক ঘণ্টা অনুশীলন করলে ৭০-৮০ ডলার দেয় প্রশিক্ষণার্থীরা। আমাকে মাঠ ভাড়া, অন্যান্য কোচের সম্মানী দিতে হয়। সব মিলিয়ে ভালোই চলছে একাডেমি।)
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করা অধিকাংশ বাংলাদেশি প্রবাসী থাকেন মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন শহরে। সেলিমের পার্থ বেছে নেওয়া ভিন্ন কারণে, ‘আমার স্ত্রী পার্থে পিএইচডির অফার পায়। তখন আমরা দুজনেই এখানে আসি। সে পিএইচডি করেছে আমি ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। পার্থে পৌঁছানোর এক বছরের মধ্যে পার্থ ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হই। সময়ের পরিক্রমায় আমার স্ত্রী শিক্ষকতায় ও আমি পার্থ ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হই।’
পার্থে নিজের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পেছনে শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সেলিম, ‘শুধু ক্রিকেটের ট্যাকনিক্যাল জ্ঞানই অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় প্রবাসীদের জন্য। একাডেমিক শিক্ষাও খুব প্রয়োজন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের পড়াশোনার যথেষ্ট অবদান রয়েছে এখানে। সেই পড়াশোনা না থাকলে আমি এই অবস্থায় আসতে পারতাম না।’
ময়মনসিংহে জন্ম সেলিমের। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে খেলা সেলিম প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা আবাহনীসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে খেলেছেন। ২০০৪ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে বসবাস করছেন বাংলাদেশের এই সাবেক ক্রিকেটার।
এজেড/এটি/এমএইচ