ফেডারেশন কাপে বসুন্ধরা-সাইফের ‘কর্পোরেট’ ফাইনাল
ঘরোয়া ফুটবলে এক সময় একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল আবাহনী-মোহামেডানের। লিগ-টুর্নামেন্টসহ প্রায় সকল প্রতিযোগিতার শিরোপা নির্ধারণে থাকত ঐতিহ্যবাহী এই দুই দল। গত এক যুগে মোহামেডান ফুটবলে শিরোপা দৌড়ে নেই। ঢাকা আবাহনী অনেকটা একচ্ছত্র প্রাধান্যেই চলেছে, মাঝে শেখ রাসেল, শেখ জামাল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিল। শেখ রাসেল মাত্র এক মৌসুম শিরোপা লড়াইয়ের নামার মতো দল গড়েছিল আর শেখ জামাল দুই-তিন মৌসুম।
২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংস ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পদার্পণের পর থেকে আবাহনীর একচ্ছত্রতা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ থেকে ‘২০ সাল পর্যন্ত তিনটি ফেডারেশন কাপের ফাইনালেই খেলছে বসুন্ধরা। যেখানে আবাহনী মাত্র একটিতে। ২০১৮ সালে লিগ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। গত বছর করোনার কারণে অসমাপ্ত লিগে বসুন্ধরা কিংস পয়েন্ট টেবিলে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল।
দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরা। তারা ফুটবলে আগ্রহী হয়েছে বছর তিনেক যাবৎ। বেশ পেশাদারভাবে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা সিটিতে নিজস্ব স্টেডিয়াম নির্মাণ, বিদেশি ভালোমানের কোচ, খেলোয়াড় আনাসহ সব কিছুই করছে সুচারুভাবে।
দেশের আরেক বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের অর্থায়নে চলছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। সাইফ ২০১৭ সাল থেকে প্রিমিয়ার লিগ খেলছে। ক্লাবটি এখন পর্যন্ত কোনো ট্রফি জিততে না পারলেও ঘরোয়া ফুটবলে প্রকৃত পেশাদারের বীজ বপন হয়েছে তাদের হাত ধরেই।
ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের ফাইনালের মাধ্যমে ঐতিহ্যের পরিবর্তে ঘরোয়া ফুটবলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দাপটের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন ফুটবলসংশ্লিষ্টরা। দেশের ফুটবলের জন্য এটি অত্যন্ত ইতিবাচক মনে করেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারওয়ার টিপু।
তিনি বলেন, ‘মোহামেডান তো অনেকটা অস্তিত্বের সংকটে আর আবাহনী ভালো করছিল। তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এখন সেই জায়গাটি নিয়েছে বসুন্ধরা।’ ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম বিশ্লেষক কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘গত তিন বছরে বসুন্ধরা আবাহনীকে অধিকাংশ সময় হারিয়েছে। ফলে বসুন্ধরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে ইতোমধ্যে। সাইফ স্পোর্টিং যুবদের নিয়ে পেশাদারভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশের ক্লাবগুলো সাধারণত চলে অনুদানের ওপর। এজন্য শেখ রাসেল, শেখ জামালের মতো ক্লাবগুলোর দল গড়ার মান এক থাকে না। ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডান লিমিটেড কোম্পানি হলেও তারা অপেশাদার আদলেই চলছে। ঐতিহ্যবাহী এই দুই ক্লাবকে অনেকটা চোখে আঙুল দিয়ে পেশাদারিত্ব শেখাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।
বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমরা বড় প্রতিষ্ঠান চালাই নিয়মের মধ্যে। ক্লাবটিকেও আমরা নিয়মতান্ত্রিক পেশাদারভাবে চালাই। ক্লাবের জন্য আমাদের নির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে। সেই বাজেটের ভিত্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সব কিছু করি।’
সাইফ স্পোর্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরউদ্দিন চৌধুরি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী গ্রুপ। ব্যবসার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ করি। অনেকটা শখ থেকেই ফুটবলে আসা। আমরা দেশের ফুটবলের পেশাদারিত্বের পথিকৃৎ হতে চাই।’
এজেড/ এমএইচ