আইপিএল ইতিহাসে এমন লজ্জার দিন আর আসেনি চেন্নাইয়ের

অধিনায়কত্বে ফেরার ম্যাচটা জয়ে রাঙাতে পারলেন না মহেন্দ্র সিং ধোনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে কার্যত অসহায় আত্মসমর্পণ করল চেন্নাই সুপার কিংস। ৮ উইকেটের ব্যবধানে হেরে গেছে সিএসকে। তাও ৯ ওভার বাকি থাকতেই। এ নিয়ে টানা পঞ্চম ম্যাচে হারল ধোনির দল। আইপিএল ইতিহাসে এমন বিব্রতকর ঘটনা চেন্নাইয়ের জন্য এবারই প্রথম।
ঘরের মাঠ চিপকে লজ্জার রেকর্ড গড়েই শুরু করেছিল চেন্নাই। আইপিএলের ইতিহাসে ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হয় কিংস। ৯ উইকেট হারিয়ে সর্বসাকুল্যে স্কোরবোর্ডে ১০৩ রান তুলতে পারে স্বাগতিকরা। জবাবে ১০ দশমিক ১ ওভারেই জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কেকেআর।
এবারের আইপিএলে চেন্নাইয়ের শনির দশা আসরের শুরু থেকেই। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছিলো না। যত সময় যাচ্ছে ততই যেন দলের কঙ্কালসার দশা বেরিয়ে আসছে। এত বাজেভাবে আইপিএলে এর আগে হারেননি ধোনিরা। তাও আবার ঘরের মাঠে।
আরও পড়ুন
শুক্রবার টস জিতে চেন্নাইকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান কলকাতা অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে। কেকেআরের বোলিংয়ের সামনে ধসে যায় চেন্নাইয়ের ব্যাটিং।ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মইনের হাতে বল দেন রাহানে। চেন্নাইকে প্রথম ধাক্কা দেন মঈন আলী। আউট করেন আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করা ডেভন কনওয়েকে। সেই শুরু। আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ রাচিন রবীন্দ্র।
কেকেআরের তিন স্পিনারের সামনে কার্যত কিছুই করতে পারলেন না চেন্নাইয়ের ব্যাটারেরা। মঈন, সুনীল নারাইন ও বরুণ চক্রবর্তী চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের পাড়ার স্তরে নামিয়ে এনেছিলেন। ১২ ওভারে মাত্র ৫৫ রান তুলতে পেরেছিল চেন্নাই। উইকেটের পতন হয় ৬টি।
চেন্নাইয়ের ব্যাটিং আক্রমণে এ বার এমন কেউ নেই যিনি একার কাঁধে দলকে টানতে পারেন। রুতুরাজ গায়কোয়াড় ছিটকে গিয়েছেন। গতবার যে শিবম দুবে দলকে টানছিলেন তিনি এ বার গতবারের ছায়ামাত্র। রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনও ক্লিক করছেন না। এমন পরিস্থিতিতে চেন্নাইয়ের সমর্থকেরা তাকিয়েছিলেন ধোনির দিকে। সেই ধোনি কোথায় দায়িত্ব নিলেন? একটা করে উইকেট পড়ছিল আর সকলে ভাবছিলেন এ বার ধোনি নামবেন। কিন্তু কোথায় কী? তাঁর আগে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার দীপক হুদাকে পর্যন্ত নামিয়ে দিলেন ধোনি। তিনি নামলেন ন’নম্বরে। মাত্র চার বল খেললেন। নারাইনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন।
একটা সময় ৭৯ রানে ৯ উইকেট পড়ে গিয়েছিল চেন্নাইয়ের। সেখান থেকে অংশুল কম্বোজ এবং শিবম দুবের শেষ বেলায় লড়াইয়ের কারণে ১০৩ রানে পৌঁছায় তারা। চিপকে ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম রানে আউট হয়ে গেল তারা। সব মিলিয়ে আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান চেন্নাইয়ের। ১০৪ রান তাড়া করে জিততে যে কেকেআরের বিশেষ সমস্যা হবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু যেভাবে কলকাতা জিতল তা হয়তো কেকেআরের সমর্থকেরাও আশা করেননি। শেষ বেলায় যেন প্রশ্নবিদ্ধ ধোনির সেই ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বগুণও। অল্প রান তাড়ায় হাত খুলে ব্যাট চালালেন কেকেআরের দুই ওপেনার নারাইন ও কুইন্টন ডি’কক। চেন্নাই যেখানে পাওয়ার প্লে-তে দুই উইকেট হারিয়ে ৩১ রান করেছিল, সেখানে কলকাতা প্রথম ছ’ওভারে ৭১ রান করল। সেখানেই খেলা শেষ হয়ে গেল।
আফগান স্পিনার নুর সুনীল নারিনকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দিলেও ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। চেন্নাইয়ের মাঠে এবারই ১৭ বছরের খরা কাটিয়ে জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এই মাঠে কেকেআরও ১১টি ম্যাচ খেলে মাত্র তিনটি জিতেছিল। এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামকে চেন্নাইয়ের দুর্গ বলা হত। সেই দুর্গে ফাটল ধরেছে। আর সেই ফাটল দিয়ে একের পর এক প্রতিপক্ষ এসে জিতে যাচ্ছে।
এফআই/