স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউট– প্রতি মিনিটে যেখানে কোটি টাকার ব্যবসা

আম্পায়ার হাতঘড়ি দেখানোর মতো ইঙ্গিত করছেন। ধারাভাষ্যকাররা বলছেন, And it’s time for Ceat Strategic Timeout’। এরপর বিজ্ঞাপন চলছে। খেলোয়াড়রা পাচ্ছেন আড়াই মিনিটের বিশ্রাম। দর্শকরা কিছুটা সময়ের জন্য ফোনে কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত। কিন্তু এরইমাঝে আইপিএল বা বিসিসিআই পকেটে পুরছে কোটি কোটি রুপি।
ভারতের গাড়ির জগতে বেশ পরিচিত নাম সিয়েট (Ceat)। জাতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মাসহ অনেকের ব্যাটেই স্পন্সর হিসেবে শোভা পায় সিয়েটের নাম। আইপিএলে স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের স্পন্সরও তারা। প্রতিটি ম্যাচে ৪ বার দেখা মেলে এই স্ট্র্যাটেজিক টাইমের। প্রতি ইনিংসে দুবার দেওয়া হয় এই আড়াই মিনিটের বিরতি।
সবমিলিয়ে প্রতি ম্যাচে ১০ মিনিটের বিরতি। আর ৭৪ ম্যাচের আইপিএলে ৭৪০ মিনিট। আর এই বিরতিটাই বিসিসিআইয়ের জন্য কোটি কোটি রুপির ব্যবসার দ্বার খুলে দিয়েছে। আর সিয়েট কোম্পানির জন্য ভারতের বাজারে এনেছে নতুনত্ব।
এবারে খতিয়ে দেখা যাক, স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের আড়ালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বড় রকমের বাণিজ্যের রকমফের।
টেলিভিশন টাইমআউট থেকে স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউট
শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ আইপিএল থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অনুষ্ঠিত সেই আইপিএলে দেয়া হয়েছিল সাড়ে ৭ মিনিটের টেলিভিশন টাইমআউট। খেলার মাঝে এই বিরতি মোটেই ভালোভাবে নেননি মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে থাকা দর্শকরা। তবে লাভের অঙ্ক দেখেছিল বিসিসিআই।
আরও পড়ুন
আইপিএলের জনপ্রিয়তার সুবাদে তখন থেকেই প্রতিটি বিজ্ঞাপনের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করা শুরু করে বিসিসিআই। স্বাভাবিকভাবেই দর্শকদের আপত্তির মুখে এমন বাণিজ্য ছাড়তে রাজি ছিল না তারা। বিকল্প হিসেবে ধার করে আনা হয় বাস্কেটবলের টাইমআউট রীতি। প্রতি ইনিংসে দুই দলের জন্য একটি করে স্লট নির্ধারণ করা হয় ম্যাচের কৌশল সাজানোর জন্য। আর বিসিসিআই এই ফাঁকে শুরু করে বড় রকমের বাণিজ্য।
২০১০ সাল থেকে শুরু হয় আইপিএলের স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউট। শুরুর দিকে কেবল টাইমআউট চলাকালে টিভিতে প্রচারিত বিজ্ঞাপন থেকেই আয় বুঝে পেত বিসিসিআই। তবে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের বড় এক বাণিজ্য।
সিয়েটের আগমন আর আর্থিক ঝনঝনানি
আইপিএলের বিজ্ঞাপন মানেই আর্থিক বিনিময়। গেল বছরেও ১০ সেকেন্ডের স্লটের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোকে দিতে হতো ১৬.৪ লাখ ভারতীয় রুপি। এবারে ৫ সেকেন্ডের জন্যই খরচ ১২ লাখ রুপি। সিয়েটের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো স্ট্র্যাটেজিক টাইমের স্পন্সর হয় সিয়েট টায়ার কোম্পানি। সেবারে ৩১ দশমিক ৫ কোটি রুপিতে আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত হয় সিয়েট। ৩ বছরের জন্য হয় এই চুক্তি।
২০১৮ সালে আরও ৫ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করে তারা। যা শেষ হয় ২০২৩ সালে। আর সবশেষ ২০২৪ থেকে ২০২৮ চক্রে নতুন করে যুক্ত হয় তারা। এবারের চুক্তিটা ছিল ২৪০ কোটি রুপিতে। যার অর্থ প্রতিবছর ৪৮ কোটি রুপি কেবল সিয়েট টায়ারের কাছ থেকে পাচ্ছে আইপিএল।
মিনিটে হিসেব করলে বছরে ৮৮৮ মিনিটের জন্য ৪৮ কোটি রুপি পাচ্ছে বিসিসিআই। সম্ভবত এই কারণেই ২০২২ সাল থেকে আড়াই মিনিটের বদলে ৩ মিনিটে পরিণত করা হয় সিয়েট স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের সময়।
সিয়েট কেমন লাভ করছে?
ব্রডকাস্টিং টিভি চ্যানেল, ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে ম্যাচের খেলোয়াড়রা পর্যন্ত এখন পরিচিত সিয়েট স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের সঙ্গে। মানুষের মুখ থেকে মুখে ছড়িয়ে পড়ার সুবাদে সিয়েটের ব্যবসায় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ২০২৪ সালে আইপিএলের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের ঘোষণা দেয়ার পরেই শেয়ার বাজারে দাম বেড়েছিল সিয়েটের।
চুক্তি নবায়নের পর বিএসই স্টক এক্সচেঞ্জে সিয়েটের সূচকের দাম বেড়েছিল ১.১৯ শতাংশ। আর ভারতের এনএসই স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের দাম বেড়েছিল ১.৩১ শতাংশ। কেবল এক বছরেই তাদের লাভ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। কোম্পানির মোট মূলধন বেড়েছিল ২.৯৪ শতাংশ।
ভারতীয় একাধিক প্রতিবেদন বলছে, আইপিএলের সুবাদেই কেবল ১৮১ কোটি রুপি লাভ দেখেছিল সিয়েট টায়ার। স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের সুবাদে আইপিএলের দলগুলো ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে লাভবান হলেও সবচেয়ে বড় লাভ যে মূলত সিয়েট কিংবা বিসিসিআইয়ের, সেটা হয়ত আলাদা করে উচ্চারণের প্রয়োজন হয় না।
জেএ /এফআই