কিংসকে হারিয়ে ফাইনালে ১০ জনের আবাহনী

ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনী। ফেডারেশন কাপের কোয়ালিফায়ারে তারা টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে বসুন্ধরা কিংসকে পরাজিত করেছে। এর আগে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র ছিল।
ঢাকা আবাহনী ম্যাচের প্রথমার্ধেই ১০ জনের দলে পরিণত হয়। ম্যাচের ৪২ মিনিটে দলটির ডিফেন্ডার আসাদুজ্জামান বাবলু দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ফলে ম্যাচের বাকি সময় আবাহনী ১০ জন নিয়েই লড়েছে কিংসের বিপক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধে পিছিয়ে পড়ে আবার ম্যাচের শেষ মুহূর্তে সমতা এনেছে মারুফুল হকের শিষ্যরা। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।
১০ জন নিয়ে আরও ৩০ মিনিট খেলা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তা সত্ত্বেও মারুফুল হক তার কৌশল দিয়ে ১২০ মিনিট দারুণভাবে লড়েছেন। পাশাপাশি দারুণ কিছু সেভ করেছেন আবাহনীর গোলরক্ষক মিতুল মারমা। এ ছাড়া বাবলু লাল কার্ড পেয়ে উঠে গেলেও তার শূন্যতা আবাহনীর অন্য ডিফেন্ডাররা পূরণ করেছেন।
বসুন্ধরা কিংস অতিরিক্ত সময়ের শেষদিকে গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণকে উঠিয়ে আনিসুর রহমান জিকোকে নামায়। জিকো জাফর ইকবালের শট ঠেকিয়ে কোচের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করছিলেন। একইসঙ্গে কিংস দুই শট পর্যন্ত লিডে ছিল টাইব্রেকারে। তৃতীয় শটে রাব্বি রাহুল আবাহনীর গোলরক্ষক মিতুল মারমা সেভ করেন। পরবর্তীতে ব্রাজিলিয়ান ডেসিয়েলের শট পোস্টের ওপর দিয়ে গেলে আবাহনীর জয়ের সুযোগ তৈরি হয়। ইব্রাহীমের গোলের পরই আবাহনীর জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। আবাহনীর হয়ে টাইব্রেকারে গোল করেন রাফায়েল, এমেকা ও সবুজ। আর কিংসের পক্ষে গোল করেন জোনাথন ও মোরসালিন।
ঢাকা আবাহনী প্রিমিয়ার লিগেও বসুন্ধরা কিংসকে পরাজিত করেছিল। এ নিয়ে তারা চলতি মৌসুমেই দুই বার হারাল কিংসকে। টানা পাঁচ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বসুন্ধরা কিংস চলতি মৌসুমে স্বাভাবিক ছন্দে নেই। মধ্যবর্তী দলবদলে তারা বিদেশি খেলোয়াড় পরিবর্তন করেছে। খেলোয়াড় বদল করলেও খেলার মধ্যে সেই ধার আসেনি। আবাহনী একজন কম নিয়েও কিংসকে দারুণভাবে রুখে দিয়েছে।
দশ জনের আবাহনীর বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই লিড নেয় বসুন্ধরা কিংস। ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্দেসের ক্রস আবাহনীর ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান মজিবুর রহমান জনি। আবাহনীর বিপক্ষে লিড নিয়েও কিংস সেভাবে তেড়েফুড়ে কিছু করতে পারেনি। উল্টো আবাহনী দ্বিতীয় লেগে দুই বিদেশি যোগ হওয়ার পর কিংসের বিরুদ্ধে দশজন নিয়েই লড়ে গেছে। ৮৩ মিনিটে আবাহনী ফ্রি-কিক পায় বক্সের সামনে। ব্রাজিলিয়ান রাফায়েলের শট পোস্টে লেগে ফেরত আসলে ফিরতি বলে আকাশ গোল করতে ভুল করেননি। আবাহনী প্রথম লেগ খেলেছে বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়াই। মধ্যবর্তী দলবদলে দুই বিদেশি ফুটবলার রাফায়েল ও এমেকা যোগ দেন। রাফায়েলের ফ্রি-কিক শট থেকেই আবাহনী খেলায় ফিরে। সেই দৃষ্টিতে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট সেটাই।
বসুন্ধরা কিংস হেরে গেলেও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায়নি। ১৫ এপ্রিল কিংস অ্যারেনাতেই রহমতগঞ্জের বিপক্ষে খেলবে তারা। ওই ম্যাচে জিতলে ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহে তারা আবাহনীর মুখোমুখি হবে ফাইনালে। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অপর ম্যাচে নাইজেরিয়ান এমফোনের গোলে ব্রাদার্স ইউনিয়ন প্রথমার্ধে লিড নিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধে পুরান ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জের ঘানাইয়ান ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল বোয়েটাং কর্নার থেকে হেডে ম্যাচে সমতা আনেন। ম্যাচে দুই দলেরই একাধিক গোলের সুযোগ মিস হওয়ায় নির্ধারিত সময় খেলা ১-১ সমতায় থাকে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে রহমতগঞ্জ গোল করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ফলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো ব্রাদার্স।
ঘরোয়া ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ। প্রতিযোগিতাটি এবার একটু ভিন্ন ধাচে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই গ্রুপের দুই চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ পরের পর্বে খেলছে। দুই গ্রুপের দুই চ্যাম্পিয়নের মধ্যকার ম্যাচের জয়ী দল সরাসরি ফাইনালে উঠল। দুই গ্রুপের দুই রানার্স-আপের মধ্যকার ম্যাচের বিজিত দল টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় আর দুই রানার্স-আপের মধ্যকার বিজয়ী দল আবার দুই চ্যাম্পিয়নের মধ্যকার পরাজিত দলের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে।
এজেড/এএইচএস