‘আমার হৃদয়ে আমি ফিলিস্তিনি’, ম্যারাডোনা যা বলে গিয়েছিলেন

চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে দিয়েগো ম্যারাডোনা নেই! ফুটবল ছেড়ে, পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য ভূবনে। খেলাধূলার বাইরে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবেও সমাদৃত ছিলেন ম্যারাডোনা। বিশ্বজুড়ে প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোতে কোনো চোখ বন্ধ করে সমর্থন করে যেতেন। তার বন্ধুস্থানীয় ছিলেন ভেনেজুয়েলার হুগো শ্যাভেজ, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো এবং বলিভিয়ার ইভো মোরালেসের মতো নেতারা।
ফিলিস্তিন নিয়েও নানা সময়ে সরব ছিলেন ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুর পর শোকবার্তা এসেছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই ভূখণ্ড থেকেও। দিনটা ছিল ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের মৃত্যুর পর শোকে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব। শোক নেমে এসেছিল ফিলিস্তিনের বুকেও।
আরও পড়ুন
হামাসের তৎকালীন মুখপাত্র সামি আবু জুহরি এক টুইটবার্তায় ম্যারাডোনার পরিবার এবং বিশ্বজুড়ে তার অগুণিত ভক্ত-সমর্থকের প্রতি শোক প্রকাশ করে লিখেছিলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, ‘ম্যারাডোনা’র মৃত্যুতে, যিনি প্যালেস্টাইন বিষয়ক আন্দোলনের জন্য পরিচিত।”

বছরের পর বছর ধরে বর্বরতা চালানো দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী যেন এবার মরণকামড় দিয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদাররা। প্রতিদিনই বড় হচ্ছে লাশের মিছিল। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। গাজার অধিবাসীদের জন্য হৃদয় পুড়ছে বিশ্ববাসীর। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবাদ হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না ক্রীড়াঙ্গনের তারকারাও।
— Salem Barahmeh (@Barahmeh) November 25, 2020
গাজাবাসীর এমন দিনে আবারও মনে পড়ছে ম্যারাডোনার কথা। যার হৃদয়ে ছিল ফিলিস্তিন। যিনি নিজেকে প্যালেস্টেনিয়ান পরিচয় দিতেন গর্ব করে। ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর বলা যায় আর্জেন্টিনার প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তীকে।
ফিলিস্তিন নিয়ে কী বলেছিলেন ম্যারাডোনা
২০১২ সালে ম্যারাডোনা নিজেকে “প্যালেস্টাইন জনগণের সবচেয়ে বড় ভক্ত” বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তাদের শ্রদ্ধা করি এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করি। আমি কোনো ভয় ছাড়া প্যালেস্টাইনকে সমর্থন করি।”
দুই বছর পর তথা ২০১৪ সালে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দখলদার ইসরায়েল। যাতে অন্তত তিন হাজার ফিলিস্তিনি মারা যায়। এ ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন ম্যারাডোনা। ইসরায়েলের সমালোচনা করেন। এক বিবৃতিতে সে সময় তিনি বলছিলেন, “ইসরায়েল প্যালেস্টাইনদের সঙ্গে যা করছে, তা লজ্জাজনক।”
একবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে উঠে এসেছিলেন, ২০১৫ সালে এএফসি এশীয় কাপের সময় ফিলিস্তিনি জাতীয় দলকে প্রশিক্ষণ দিতে ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন ম্যারাডোনা। যদিও এ দাবির পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
— LEO Rakan (@Blaugrana_86) July 15, 2018
২০১৮ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার মস্কোতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। যেখানে তিনি আবারও তার দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আব্বাসকে আলিঙ্গন করে বলেন, “আমার হৃদয়ে, আমি প্যালেস্টাইন,” এবং সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও তার ইনস্টাগ্রাম পেজে আপলোড করা হয়।
শুধু ফিলিস্তিন ইস্যুতেই নয়, সিরিয়া নিয়েও প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে তাকে। অ্যান্টি জর্জ বুশ শার্ট পরা অবস্থায় তাকে বেশ কয়েকবার জনসম্মুখে দেখা গেছে। আমৃত্যু একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন ম্যারাডোনা। যার প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর এখনো যেন বেজে চলছে।
সূত্র : আল-জাজিরা।
এফআই