জাজের কাঁধে দেশের আরচ্যারি

ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের অন্য সকল ফেডারেশন মূলত সাধারণ সম্পাদক নির্ভর। এই পদধারী ব্যক্তির ওপরই মূলত ফেডারেশনের কর্মকান্ড এবং সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে। গত অর্ধযুগে দেশের অন্যতম সফল ফেডারেশন আরচ্যারি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আরচ্যারি ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি করেছে ২৮ মার্চ। সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আরচ্যারির জাজ তানভীর আহমেদ আলোকে।
আম্পায়ার-বিচারকদের অনেকেই সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তবে একটি ফেডারেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকে কোনো আম্পায়ার/জাজকে সাম্প্রতিক সময়ে (ফুটবল রেফারি কাবাডি ফেডারেশনে ছিলেন অতীতে) দেখা যায়নি। একজন জাজ হয়ে গুরু পদে দায়িত্ব পাওয়ায় কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করলেন তানভীর আহমেদ, 'এই কমিটি সরকার থেকে হয়েছে। একজন জাজকে তারা এই পদের জন্য যোগ্য মনে করেছেন। আমি মনে করি এটা আম্পায়ার বা খেলার সঙ্গে যারা বিচারকের কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের সবার জন্যই অনুপ্রেরণামূলক।'
তানভীর আহমেদ বাংলাদেশের আরচ্যারির সঙ্গে জড়িত অনেক দিন থেকেই। তার পরিচিতি মূলত জাজ হিসেবেই। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে কখনো ছিলেন না। সাংগঠনিক দায়িত্বে না থেকে সরাসরি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ায় অনেকটা বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে তার বক্তব্য, 'আমি ফেডারেশনের কমিটিতে ছিলাম না ঠিক তবে আমি ফেডারেশনের একজন কাউন্সিলর। বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমার সরব উপস্থিতি ছিল। বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস এসোসিয়েশনের আমি যুগ্ম সম্পাদক। আমার সাংগঠনিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।'
আরচ্যারির জন্মলগ্ন থেকে কাজী রাজীবউদ্দিন আহমেদ চপল সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে। তার দায়িত্বকালেই দুই আরচ্যার রোমান সানা ও সাগর ইসলাম সরাসরি অলিম্পিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। স্থায়ী পৃষ্ঠপোষক, নিজস্ব ভেন্যু, আন্তর্জাতিক সাফল্যসহ অনেক কিছুর কারিগরই ছিলেন চপল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও অ্যাডহক কমিটিতে প্রথমে চপলকে সাধারণ সম্পাদক করলেও পরবর্তীতে সার্চ কমিটির পদত্যাগের হুমকির দাবিতে চপলকে সদস্য করে তানভীরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
চপলের স্থলাষিভিক্ত হওয়া তানভীর সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান, 'চপল ভাই আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তার আন্তর্জাতিক আরচ্যারিতে অনেক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়েই আরচ্যারির উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।' তানভীর আরচ্যারির দায়িত্ব পাওয়ার পরই একটি দুঃসংবাদ এসেছে। পুলিশ আরচ্যারি থেকে দল গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে অনেক আরচ্যারের রুটি-রুজি শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। নতুন সাধারণ সম্পাদক পুলিশকে আরচ্যারিতে রাখার উদ্যোগ নেবেন, 'জাজেস এক প্রোগ্রামে ফ্রান্সের প্যারিস রয়েছি। পরশু দিন দেশেই এটা নিয়ে আমরা কাজ করব। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশের আইজি সহ সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে গিয়ে দলটি রাখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরব।'
জাজেস অ্যাসাইনমেন্টে তাকে দেশের বাইরে যেতে হয় প্রায়ই। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর নিজের অ্যাসাইনমেন্টে খানিকটা ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছেন, 'এখন অবশ্যই ফেডারেশনের দায়িত্ব সর্বাগ্রে। এটা সমন্বয় করেই জাজ করব। বছরে অন্তত একটা টুর্নামেন্ট/আসর করতেই হবে জাজেসশীপ ধরে রাখতে হলে।' বিশ্ব আরচ্যারির সর্বোচ্চ বিচারকদের ইন্টারনশ্যাল জাজ টাইটেল। এর পরের ধাপ কন্টিনেন্টাল জাজ। বাংলাদেশের তানভীর কন্টিনেন্টাল জাজ যদিও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রজ্ঞাপনে তাকে ইন্টারন্যাশনাল জাজ হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে। পাশাপাশি সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতির বিবরণ থাকলেও জাতীয় পর্যায়ের আরচ্যারিতে তার উপস্থিতি ছিল না বলেই তথ্য আরচ্যারি সংশ্লিষ্টদের। ফেডারেশনগুলোতে পদ সাধারণ সম্পাদক থাকলেও আরচ্যারির সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে শুধু সম্পাদক উল্লেখ রয়েছে।
এজেড/এইচজেএস