শিলং বাংলাদেশের ফুটবলের বাঁকবদল না ভারতের গতিপথে ফেরার উপলক্ষ্য

পাহাড় ঘেরা মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের ব্যস্ততম এলাকা পুলিশ বাজার। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে শিলংবাসীর বাড়তি আগ্রহ আজকের বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে। ভারতের উত্তর-পুর্ব অঞ্চলে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ও চর্চা অনেক হলেও শিলংয়ে ১৯ মার্চের আগে ভারত আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলেনি। আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে সাতটা) এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ মেঘালয় রাজ্যের জন্য বড় উপলক্ষ্যই বটে।
শিলংবাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত দুুই দেশের জন্যই আজকের ম্যাচটি অনেকটা যুগ সন্ধিক্ষণের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। গত দুই যুগে ফুটবল ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার আড়ালে ছিল। ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ খেলা ফুটবলার বাংলাদেশের হয়ে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে এসে ফুটবলের সেই পুরনো প্রেম জাগিয়ে তুলেছেন। গত এক সপ্তাহ বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি ভারত ম্যাচ নিয়ে।
বাংলাদেশ এশিয়া কাপের মুল পর্বে খেলেছিল ১৯৮০ সালে একবারই। কুয়েতে সেই আসরে খেলার পর আর কখনো মুল পর্বে খেলতে পারেনি। এবার ফরম্যাট ও গ্রুপের প্রতিপক্ষের কারণে একটা সম্ভাবনা আগেই ছিল। হামজা চৌধুরী যোগ হওয়ায় সেই পালে আরো হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশের গ্রুপে টপ সিডেড পাশ্ববর্তী দেশ ভারত। আজ ভারতের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিতে পারলে গ্রুপের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হংকং ও সিঙ্গাপুরকে হারানোর মানসিকতাও অর্জন করতে পারবে।
ভারত বাংলাদেশের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। হামজা চৌধুরী আসায় বাংলাদেশ দলের ভেল্যু এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। দিন শেষে ফুটবল দলীয় খেলা। একজনের বিশেষ নৈপুণ্য বা ঝলকে ম্যাচ জেতা কঠিনই। সেখানে হোম ম্যাচে ভারত বেশ শক্তিশালী। এরপরও প্রতিপক্ষ ভারত বলেই বাংলাদেশ খানিকটা আশা সঞ্চার করতে পারে। কারণ গত দুই দশকে বাংলাদেশ-ভারতকে হারাতে না পারলেও প্রতিটি ম্যাচ জয়ের মতোই খেলেছে কখনো শেষ মুহূর্তে ড্র অথবা হেরে মাঠ ছেড়েছে। হামজা ছাড়াই যখন ছেত্রীদের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়েছে সেখানে হামজাকে নিয়ে জেতার আশা করা অমূলক নয়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতার সংকট ছিল। হামজার আগমনের খবর শুনে ফেডারেশনে পৃষ্ঠপোষকরা ভিড় করছে। আজ ভারতকে হারাতে পারলে বাংলাদেশের ফুটবলে উন্মাদনা বাড়বে বহুগুণে। এতে পৃষ্ঠপোষক,সমর্থক সকলের আগ্রহ থাকবে। বাফুফের নতুন কমিটিরও পথ চলতে সুবিধা হবে।
নিকট অতীতে বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোনো ম্যাচ নিয়ে এত আলোচনা হয়নি। এই চাপের ভারে বা যে কোনো কারণে আজ শিলংয়ে ফলাফল নেতিবাচক হলে আবার সেই পুরনো দৃশ্য পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে হামজা আসার পর মানুষের এত ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ হলেও আজ ফলাফল ইতিবাচক না হলে ভিন্ন রকম আলোচনাও শুরু হতে পারে।
মাঠের খেলায় ফলাফল যে কোনো কিছুই হতে পারে। এক ম্যাচের ফলাফল খানিকটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া বা বাড়তি উন্মাদনা তৈরি করতে পারে কিন্তু প্রক্রিয়া সঠিক না হলে এর ফল দীর্ঘমেয়াদী হয় না। ভারত ম্যাচের আগে প্রাথমিক দল নির্বাচন, ভারতে বেশি আগে আসা, ফাহমিদুল ইস্যু, প্রকৃত প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলতে পারা এগুলো নিয়ে যদি বাফুফে শিক্ষা না নেয় তাহলে ফুটবল সঠিক গতিপথে ফেরা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শিলংয়ের ফলাফল যাই হোক এই বিষয়গুলো শুধরে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের বাকি পাঁচ ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
শিলংয়ের ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য বাঁক বদলের গল্পের উপলক্ষ্য, তেমনি আবার স্বাগতিক ভারতের জন্য গতিপথে ফেরার। মাত্র কয়েক বছর আগে ভারতের র্যাঙ্কিং ছিল ১০০'র কম। সেই ভারতের র্যাঙ্কিং এখন ১২৬। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৬ ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছিল। সুনীল ছেত্রী ভারতকে টেনেছেন এক যুগের বেশি সময়। গত বছর অবসর নিলেও আবার দলের প্রয়োজনে ফিরেছেন।
আজ বাংলাদেশের ম্যাচের উপর ভারতের ফুটবলেরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। হেরে গেলে গ্রুপের শীর্ষ বাছাই দল হলেও এশিয়া কাপের পথ হোঁচট দিয়ে শুরু হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে ভারতের রাজত্ব ছিল একচ্ছত্র। সাম্প্রতিক সময়ে টানা হারের (মালদ্বীপ ব্যতীত) পর বাংলাদেশের বিপক্ষে হারলেও দক্ষিণ এশিয়ার কর্তৃত্ব খানিকটা শঙ্কার মধ্যেই পড়বে। আর বাংলাদেশকে হারলে সাময়িক সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিপথে ফেরার উপলক্ষ হবে।
এজেড/জেএ