ভারতের অসহযোগিতা নাকি বাংলাদেশের পরিকল্পনাহীনতা

জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার সাবেক ফুটবলার আমের খান বরাবরই হাস্যোজ্জ্বল থাকেন। ভারতের শিলংয়ে এসে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বাংলাদেশ স্বস্তি নিয়ে এখনো এক সেশন অনুশীলন করতে পারেনি শিলংয়ে। যা স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের পরিকল্পনা ও খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে।
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নিয়মানুযায়ী, ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে সফরকারী দলকে ম্যাচের নির্দিষ্ট শহরে পৌঁছাতে হয়। ম্যাচ শুরুর দুই দিন আগে স্বাগতিক দলকে সফরকারী দলের আতিথেয়তা দেয়ার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে। ম্যাচ ভেন্যুতে সফরকারীদের খেলার আগের দিন ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করতে দেয়াও বাধ্যতামূলক এএফসির আইনে। এর একদিন আগে অনুশীলন ভেন্যুর (ম্যাচ ভেন্যুর বাইরে) ব্যবস্থা করে দেয়া স্বাগতিক ফেডারেশনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব।
৪৮ ঘণ্টার আগে সফরকারী দল ভেন্যুতে আসলে অনুশীলন, আবাসন সংক্রান্ত বিষয়াদি দুই ফেডারেশনের সমঝোতা ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। এখানে ফুটবলের আইনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ বাংলাদেশের। সেই ম্যাচ খেলতে পাঁচ দিন আগে গত ২০ মার্চ বিকেলে শিলংয়ে পৌঁছেছেন হামজা-জামালরা। ২১ মার্চ উত্তর পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ ও গতকাল জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের টার্ফে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। এই দুই অনুশীলনই ছিল অস্বস্তি। নেহেরু মাঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট নয় আর ঘাসের মাঠে খেলার আগে টার্ফে অনুশীলনও আদর্শ নয়।
আরও পড়ুন
এ নিয়ে জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান বলেন, ‘রাতে এক ধরনের আলোচনা হয়, পরের দিন সকালে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। গত দুই দিনের মতো আজও এ রকম হচ্ছে। কাল রাতে নিশ্চিত করেছে জওহরলাল স্টেডিয়ামের টার্ফে অনুশীলন এখন আজ সকালে বলছে নেহু গ্রাউন্ডে যেতে। আজ ম্যাচ কমিশনার এসেছে। তাকে বিষয়টি জানিয়েছি দেখি কোথায় হয়।’
এশিয়া কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে ভারত, সিঙ্গাপুর ও হংকং। হোম এন্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে প্রতি দল ছয় ম্যাচ খেলার পর গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন সরাসরি এশিয়া কপে খেলবে। তাই প্রতিটি ম্যাচই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হোম ম্যাচে সম্পূর্ণ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা থাকবে প্রতি দলই। বাংলাদেশ এএফসি’র নির্দেশনার অতিরিক্ত আগে আসায় যে ভোগান্তিতে পড়ছে এটা মূলত নিজেদের পরিকল্পনাহীনতারই ফল।
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তিন ফুটবলার ইনজুরিতে। অন্য দিকে বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন হামজা চৌধুরি। হামজা বাংলাদেশের হয়ে মাত্র এক সেশন অনুশীলন করেছেন ঢাকায়। ভারতে এসে সেভাবে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করতে পারেনি। এতে হামজার কিছুটা হলেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খানিকটা কষ্ট হবে। অনুশীলন ভেন্যুর অসহযোগিতার মাধ্যমে ভারত ফুটবল ফেডারেশন চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের বহিঃপ্রকাশই।
নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌঁছালে অনেক সময় মাঠ ভাড়া নিয়ে অনুশীলন করতে হয়। গতকাল বাংলাদেশকে সেই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনুশীলনের সময় অ্যাম্বুলেন্স, মেডিক্যাল বিল, স্টেডিয়ামের স্টাফ সংক্রান্ত বিল ভারত ফেডারেশন পাঠিয়েছে। সেটা বাফুফে পরিশোধ করবে এই অঙ্গীকার পাওয়ার পর বাংলাদেশ দল কাল অনুশীলন করেছে।
ভারত ম্যাচের জন্য প্রস্তুতির পরিকল্পনা মূলত করেছেন বাংলাদেশের স্প্যানিশ হেড কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তার সেই পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় দল কমিটি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ক্যাম্প শুরু হয় ভারত ম্যাচ নিয়ে। ৫-১৭ মার্চ সৌদির তায়েফে ছিল বাংলাদেশ দল শিলংয়ের কন্ডিশন ও ভালো মাঠের জন্য প্রস্তুতিতে। সৌদি আরবের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে ঢাকার গরম আবহাওয়ায় ১৮-১৯ দুই দিন ছিল বাংলাদেশ দল। সেই গরম আবহাওয়া থেকে আবার পরের দিন থেকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় পদার্পণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মূল খেলোয়াড় হামজার সঙ্গে বাংলাদেশের অনুশীলন সেভাবে হচ্ছে না। এগুলো কোচ হ্যাভিয়েরের দূরদর্শিতার যেমন অভাব তেমনি জাতীয় দল কমিটিরও অপরিকল্পিত পদক্ষেপ।
১০ জুন সিঙ্গাপুর ঢাকায় অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে। সেই ম্যাচের জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি এপ্রিলে ঢাকায় আসবে বলে জানান বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খান, ‘আমি যখন সৌদি আরবে তখনই সিঙ্গাপুরের ম্যানেজারের আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জুনের ম্যাচ নিয়ে। তারা এপ্রিলে ঢাকায় আসতে পারেন সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করতে। আমি বেশ কিছু দিন ধরেই পেশাদার ম্যানেজারের কথা বলে আসছি। বর্তমান সময়ে এটা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভারতে এসে এর পুনরায় প্রয়োজনীয়তা অনুভব হলো।'
বাংলাদেশের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। সেখানে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ঠিক হয় ম্যাচের সপ্তাহ কয়েক আগে। ম্যানেজার মনোনীত হওয়ার আগেই ফেডারেশনের প্রশাসনিক স্টাফরা মেইল চালাচালি করে হোটেল, অনুশীলন মাঠ ঠিক করে ফেলেন জাতীয় দল কমিটি ও কোচের সঙ্গে আলোচনা করে। মেইলের সঙ্গে বাস্তবের পার্থক্য-পরিবর্তন হয় অনেক ক্ষেত্রে। তখন সেটা সামলাতে হয় ম্যানেজারকে।
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া একই গ্রুপে পড়েছিল। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে হোম ম্যাচ খেলতে এসেছিল ৪৮ ঘন্টার কম সময়ের আগে। এক দিন আগে রাতে এসে পরের দিন অনুশীলন করে ম্যাচ খেলেছে। ফুটবলে উন্নত অনেক দেশেই প্রতিপক্ষের দেশে গিয়ে বিড়ম্বনা এড়াতে এই রকম কৌশল অবলম্বন করে। বাংলাদেশ এসব দেখেও যেন দেখে না।
এজেড/জেএ