‘অস্ট্রেলিয়ায় সুযোগ-সুবিধা দেখে দেশের ক্রিকেটের জন্য আফসোস হচ্ছে’

মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলে জাতীয় দল থেকে অনির্দিষ্টকালের বিরতিতে গিয়েছিলেন জাহানারা আলম। যে কারণে ছিলেন না সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেও। চলমান নারী ডিপিএলেও খেলছেন না তারকা এই পেসার। বর্তমানে অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়াতে, সেখানে লিগ ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় কাটছে। গুঞ্জন আছে দেশটিতে থিতু হতে পারেন।
এসব বিষয় নিয়েই সুদূড় অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন জাহানারা আলম। জাতীয় দল প্রসঙ্গ ও দেশে ফেরা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
চলমান ডিপিএল খেলছেন না, কারণ কী?
জাহানারা আলম: ডিপিএলে আমি খেলব না এটা বোর্ড এবং ক্লাবকে তো আগেই জানিয়েছিলাম। এখানে (অস্ট্রেলিয়া) লিগ খেলছি এটা শেষ করেই আসি সিজনটা। এরকমই প্ল্যান ছিল আরকি, এটা মার্চে শেষ হবে।
চারদিকে গুঞ্জন, অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ী হচ্ছেন?
জাহানারা আলম: না অফিসিয়ালি বিসিবিকে জানিয়েছিলাম ফোনে যে আমি ডিপিএলটা খেলব না। আমি যেহেতু এখানে খেলছি ছুটি নিয়েছি সুমন ভাই ফাহিম স্যার সবাইকে জানিয়েছি এবং আমার ক্লাবকেও জানিয়েছি। কিছু প্লেয়ারদের সাথে আমার কথা হচ্ছে, সব কিছু দেখছি আমি। এখানে খেলছি তার মানে এই না যে আমি আর দেশে ফিরবো না বা এখানে স্যাটেল হবো।
কত দিনের ছুটির কথা বলেছিলেন বিসিবিকে?
জাহানারা আলম: আমি যখন ছুটি নিয়েছিলাম তখন বলেছিলাম যে আমি কিছু মাসের জন্য ছুটি নেব আর কি। এভাবে লেখা ছিল কাপল অব মান্থ তার মানে কিছু মাস, নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল না। এখন এটা নির্ভর করছে যে আমার মানসিক স্বাস্থ্য কতটুকু উন্নতি হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমি মানসিকভাবে ফিট আছি কি না মাঠে পারফর্ম করার জন্য। কারণ বাংলাদেশ দল তো আমাদের সব থেকে বড় প্রায়োরিটির জায়গা। ঘরোয়াতে কিন্তু আপনি ১০৪ জ্বর নিয়েও খেলতে পারবেন, হাতে পাঁচটা সেলাই নিয়েও খেলতে পারবেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে সেটা না। ১৬ বছর আমি জাতীয় দলে খেলছি তো এটুকু তো আমি ছুটি নিতেই পারি, মানে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য।
সামনে বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার ম্যাচ, খেলবেন কি না?
জাহানারা আলম: দেখুন আমি যদি সিলেকশনে থাকি, টিম যদি মনে করে আমি টিমে থাকার মতো। আর আমি যদি মানসিকভাবে সুস্থ থাকি, তখন যদি মনে করি যে কোয়ালিফাই রাউন্ড আসতে আসতে আমি ফিট হয়ে গিয়েছি তো অবশ্যই আমি খেলব।
মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বললেন কতটুকু সুস্থ এখন?
জাহানারা আলম: হ্যাঁ, একটু তো উন্নতি করেছে আমার মনে হয়। যেহেতু আমি একটা নতুন ওয়েদার পেয়েছি, নতুন পরিবেশ পেয়েছি, এখানে ক্রিকেট খেলছি। আর সবদিক থেকে বলতে পারেন যে আমার একটু ভালো লাগছে নিজের কাছে। এখানে যেখানে খুশি ট্রেনিং করা যায় কোন বাধা নেই ইচ্ছামত ট্রেনিং করা যায়, অনেক ভালো ফ্যাসিলিটিজ। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি ইশ বাংলাদেশে যদি এমন থাকতো কতই না ভালো হতো। আমাদের খেলোয়াড়রা কতই না উন্নতি করতো বিশ্ব ক্রিকেটে, আমরা অনেকে এগিয়ে যেতাম।
দেশের বাইরে যাওয়ার পর অধিনায়ক বা বোর্ডের কেউ খোঁজ নিয়েছে কি না?
জাহানারা আলম: না আমি কারো থেকে কোনো ফোন কল পাইনি। এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার যখন আমি দলের বাইরে ছিলাম তখনও তো কেউ আমার সাথে কমিউনিকেট করে নাই, হাই হ্যালো পর্যন্ত করেনি, কথা বলেনি। এটা একটা প্রফেশনাল এর জায়গা এখানে খারাপ লাগার কোনো জায়গা নাই। আমরা যে কোনো কিছু ইজিলি নিতে পারি ডিল করতে পারি। এখানে আসার আগে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছিল আর সুমন ভাই, ফাহিম স্যারের সাথে আমার কথা হয় সবসময়।
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থেকেও খেলছেন না বোর্ড কি বলেছে এ বিষয়ে?
জাহানারা আলম: আমি আমার ছুটির জন্য যে ইমেইল করেছিলাম সেখানে বলেছিলাম। আমি যেহেতু খেলছিনা আমি ছুটি নিচ্ছি আমি চাচ্ছিলাম যে আমাকে সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্টের বাইরে রাখতে। আমি অনুরোধ করেছিলাম পরে সুমন ভাই আমাকে ফোন করে বলেন যে তোমাকে সেন্ট্রাল চুক্তিতে আপাতত রেখেছি, ছুটি নাও অসুবিধা নেই। আমি বলেছিলাম যে আমাকে রাইখেন না পরে আবারো ফোন দিয়েছিলেন উনাদের সাথে আবার কথা হয়েছে এভাবে।
পরিবার থেকে সাপোর্ট পাচ্ছেন?
জাহানারা আলম: আমার পরিবার আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেছে। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে, আমার যেটা ভালো লাগে সেটা করতে বলেছে। এটাই অনেক বড় সাপোর্ট আর কি।
তাহলে কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন, নিদিষ্ট সময় কী ঠিক হয়েছে
জাহানারা আলম: আমি যে কারণ ছুটি নিয়েছি এটা কিন্তু আসলে কারোর হাতে নাই। ডিপেন্ড করছে কতটুক আমার মেন্টালি উন্নতি হয়েছে। তো আমি আশা করছি এখানে যেহেতু আমি আড়াই মাসের বেশি খেলছি তো এখানকার সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে যে আমি অনেকটা রিকভার করেছি। আমার বিশ্বাস আমি খুব শিগগিরই দেশের ক্রিকেটে ফিরব, এটা ঘরোয়াও হতে পারে জাতীয় দলের খেলাও হতে পারে। এটা ঈদের আগেও হতে পারে পরেও হতে পারে। পরে বোর্ড যদি মনে করে যে আমাকে আবার ঘরোয়াতে পারফরম্যান্স করে তারপরে জাতীয় ফিরতে হবে ওকে সমস্যা নেই। যেটাই সামনে থাকবে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত। যদি বলে যে তুমি ডিরেক্ট দলে চলে আসো তো আলহামদুলিল্লাহ। আমি রেডি আছি যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে।
ব্রেট লির সঙ্গে সিডনিতে খেললেন দেখলাম, কেমন অনুভূতি ছিল?
জাহানারা আলম: প্রথমেই শুনেছিলাম যে ব্রেট লি আমার বিপক্ষে খেলবেন পরে দেখি যে আমরা একই দলে। খুবই খুশি হয়েছিলাম তখন আমি ব্রেটলির ভাই শান লি উনিও ছিলেন, সাবেক আরো সাত আট জন ক্রিকেটার ছিলেন দুই দলে। শুরুতে ব্রেট লি একপাশ থেকে ওপেন বল করলেন পরে আরেক পাশ থেকে আমি বল করলাম। পরে ব্যাটিং করার সময় একসাথে ব্যাটিং করলাম ব্রেট লির সাথে। আমি অবাক হলাম আসলে উনাদের ভ্যালু বা রেসপেক্ট দেখে সবকিছু অন্য লেভেলের।
বিয়ে কবে করছেন, ভক্তদের কাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন
জাহানারা আলম: এটা নিয়ে আমার আলাদা একটা কনসেপ্ট আছে। প্রথমত এটা আল্লাহর হাতে যখন চাইবেন তখনই হবে। আমি বলেছিলাম অনেক আগেই যে আমি দুইটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে বিয়ে করব। একটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছি আরেকটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ যদি খেলতে পারি। তাহলে আমি সিরিয়াসলি চিন্তা করব যে আমি এখন বিয়ে করবোই করবো। আমার পরিবার থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়া হয় এ বিষয়ে।
এসএইচ/এফআই