শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, ক্রিকেট-ফুটবল বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা চলছে

ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে পতন হয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা হিসেবে তার মেয়াদকাল ছয় মাস পার হয়েছে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক কিছু। নিজ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম এবং ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক ভাবনা নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের।
ঢাকা পোস্ট : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আপনার মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ জানতে চাচ্ছি?
বিজ্ঞাপন
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : ছয় মাসেই সবকিছুর রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ক্রীড়াঙ্গনের টেকসই উন্নয়নের জন্য স্পোর্টস ইনস্টিটিউট গঠন নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেখানে অ্যাডভান্স লেভেলের ট্রেনিং হবে এবং এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়াবিদরা আরও বেশি সফলতা পাবেন।
এই কয়েক মাসের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনের পরিবেশের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগে এটি রাজনৈতিকভাবে ঘনীভূত ছিল, সেটি অনেকটা দূর করার চেষ্টা করেছি।
বিজ্ঞাপন
এখন পর্যন্ত ১৬টি ফেডারেশনের কমিটি হয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণভাবে ক্রীড়াঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ ও ক্রীড়ানুরাগী যারা ক্রীড়াঙ্গনকে সহায়তা (পৃষ্ঠপোষক) করতে পারেন তাদেরকে রাখা হয়েছে। আমরা সাবেক খেলোয়াড়, কোচ ও প্রকৃত সংগঠকদের প্রাধান্য দিয়েই ক্রীড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। স্থানীয় পর্যায়েও আমরা ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতির বাইরে রাখছি। ক্রীড়া সংস্থা (জেলা-বিভাগ ও উপজেলা) এখন যে ক্যাটাগরিতে গঠন হচ্ছে, সেখানে ক্রীড়াঙ্গনের লোকরাই আসছেন।
সাফ অ-২০ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় এবং সাফ নারী চ্যাম্পিয়নের মতো সাফল্যও এসেছে এ সময়ের মধ্যে। বিপিএল (ক্রিকেট) আয়োজনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফ্যাসিবাদের সময় যারা ছিল, তাদের অনেকে পালিয়ে গেছে। দল পেতে কষ্ট হয়েছে। কিছু অব্যবস্থাপনা হলেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবারের বিপিএল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। দর্শকরা রান দেখতে চান। সেই হিসাবে এবার সর্বোচ্চ রান হয়েছে। দর্শকরা হলেন খেলার প্রাণ। এবার স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতির সংখ্যাও ছিল সর্বোচ্চ। গত চার বিপিএলে যত টিকিট বিক্রি হয়েছে এবার এক বিপিএলেই সেটা হয়েছে। আমার মনে হয়, বিপিএলে আরও উন্নয়ন সম্ভব।
পাশাপাশি ফুটবলের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে। চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম (এমএ আজিজ) বাফুফেকে দেওয়া হয়েছে, নীলফামারীরটাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেখানে তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে পারবে। উত্তরবঙ্গেও বিপিএল আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা স্টেডিয়ামগুলোরও মানোন্নয়নের কাজ করছি।
ফুটবল শুধু বঙ্গবন্ধু (বর্তমান নাম জাতীয় স্টেডিয়াম) আর ক্রিকেট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকেন্দ্রিক নয়, সব বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা চলছে। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ক্রীড়াকে আমরা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। সবাই যেন ক্রীড়ার অংশীদার হতে পারেন।
ঢাকা পোস্ট : আপনি রাষ্ট্রের বৈষম্য দূরীকরণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর ফুটবল ও ক্রিকেটের বাইরে অন্যান্য খেলার খেলোয়াড়েরা আশান্বিত হয়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এবার হয়তো বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে। ছয় মাসে কতটুকু করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে ফেডারেশনগুলোকে বাজেট দেওয়া হয়, সেটি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। অলমোস্ট ডাবল করার চেষ্টা চলছে। যেসব খেলায় ভালো ফলাফল করা সম্ভব, সেগুলোর ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। আর্চারি অলিম্পিক পর্যায়ে খেলেছে, আবার কিছু খেলা আছে আমাদের জেনিটিকের সঙ্গেও যায়, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
তবে, আলটিমেটলি স্পোর্টস ইজ অ্যা প্রডাক্ট। এটি নির্ভর করে মানুষ মূলত কোনটি দেখতে চায় বা পছন্দ করে। এর ভিত্তিতেই সেই খেলা ও খেলোয়াড়দের আর্থিক বা অন্যান্য বিষয় নির্ভর করে। ক্রিকেট বা ফুটবলের ক্লাবগুলো নিজ থেকেই অনেক অর্থ ব্যয় করে, যেখানে সরকারের সহায়তা থাকে না। সরকার শুধু ফেসিলেটেড (স্থাপনা, অনুমোদন) করতে পারে। সরকারের দিক থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য।
ঢাকা পোস্ট : সম্প্রতি দেশের দুই অন্যতম সেরা অ্যাথলেট রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী উন্নত জীবনের জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। নব্বইয়ের দশক থেকে মূলত ক্রীড়াঙ্গনে মেধাপাচার শুরু হয়েছে। এক সময় ছিল খেলতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়া, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে খেলে এসে সেই ভিসাতেই পরবর্তীতে চলে যাওয়া। ক্রীড়াবিদদের আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং পরবর্তী জীবন সুরক্ষিত নয় বিধায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বিগত কোনো সরকারই বিষয়টি ভাবেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবে কি না?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : দেখুন, আর্থসামাজিক বাস্তবতার বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমেরিকার পার ক্যাপিটা ইনকাম বা জীবনযাত্রার যে মান সেটি তো আমরা দিতে পারব না। এখানেও দেশপ্রেমিক হওয়ার একটি বিষয় থাকে। এরপরও সম্ভাবনাময় যেসব ক্রীড়াবিদ আছেন, আমরা তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখব। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সামনে যাতে এমন কোনো ঘটনা না ঘটে। এরপরও বলব, দিনশেষে এটি আসলে যার যার চয়েজ বা স্বাধীনতা। এখানে আমাদের তেমন কিছুই করার থাকে না। তারপরও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সামনে যাতে এমন (ক্রীড়ার মেধাপাচার) কিছু না ঘটে।
ঢাকা পোস্ট : উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার বাংলাদেশের নিয়াজ মোর্শেদ। নব্বইয়ের দশকে নিনি ও আতিক কমনওয়েলথ শুটিংয়ে স্বর্ণ জিতেন। আশি-নব্বই দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব হয়েছিলেন শাহ আলম ও বিমল। গলফার ও আরচ্যাররা সরাসরি অলিম্পিক খেলেছেন। এত সাফল্যের পরও এসব খেলার খেলোয়াড়েরা ন্যূনতম অনুশীলন কিংবা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ, এমনকি সম্মানী পর্যন্ত পান না। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় হাজার কোটি, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের শত কোটি এবং আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্রীড়া কল্যাণসেবী ফাউন্ডেশনে প্রায় ৭০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রয়েছে। এসব সংস্থা থেকে সমন্বিতভাবে একটি অঙ্ক স্থায়ী আমানতের বিপরীতে প্রাপ্ত সুদের অর্থ দিয়ে খেলোয়াড়দের একটি স্থায়ী কাঠামোর মধ্যে আনা যায় কি না?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : বিসিবি, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন— দুটোই কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। কিছু বিষয়ে আমরা তাদের গাইডলাইন দিতে পারি। তবে, আর্থিক বিষয়ের পুরোটাই তাদের কর্তৃত্ববাদী। তাদের অর্থ তারা কীভাবে খরচ করবে কিংবা অন্যদের দেবে কি না, পুরোটাই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। বিসিবি কিন্তু নারী ফুটবলারদের আর্থিক পুরস্কার দিয়েছে। বড় ফেডারেশনগুলো এভাবে এগিয়ে আসতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে আমরা অনুরোধ করতে পারি।
আমাদের মন্ত্রণালয়ের কমন প্র্যাকটিস রয়েছে যে, সাফল্য আসলে পুরস্কৃত করা; আমরাও করি। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, আমরা পুরস্কৃত করেছি। সাফল্য ছাড়াও অনেক ক্রীড়াবিদ বা ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের সহায়তা করা হয়। ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন দুস্থ ও অসহায় ক্রীড়াবিদদের নিয়ে কাজ করছে।
ঢাকা পোস্ট : জাতীয় সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের আগেই আপনি ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। সংবিধান সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন পেশ করেছে। অথচ ২৯ আগস্ট সার্চ কমিটি গঠন করা হলেও এখনও ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের সুপারিশ বা প্রতিবেদন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পায়নি। দেরি হওয়ার কারণ বলবেন কী?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : সংবিধান সংস্কার কমিশন নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করেছেন। নিজেরাও গবেষণা করেছেন। এরপর পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। সংস্কার প্রক্রিয়াটি একটু দীর্ঘ, আর সার্চ কমিটির কাজও একটু ভিন্ন। তারা ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের নীতিমালার পাশাপাশি বিভিন্ন ফেডারেশনের কমিটি গঠন নিয়েও কাজ করছে। একটি ফেডারেশনের কমিটি গঠন নিয়ে ৩/৪টির বেশি মিটিং করা লাগে। ৫৫টি ফেডারেশন (অ্যাসোসিয়েশনসহ), তাদের খেলোয়াড় ও সংগঠকদের সঙ্গে বসা; ফলে অনেক সময় লাগছে। যদি কমিটি গঠন করা না লাগত তাহলে শুধু ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন দ্রুতই দেওয়া যেত।
ঢাকা পোস্ট : সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা এবং কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আপনি একজন সদস্য (মহিউদ্দিন বুলবুল) পরিবর্তন করেছেন। অথচ কমিটির আহ্বায়ক (জোবায়েদুর রহমান রানা) একটি ফেডারেশন (ব্যাডমিন্টন) থেকে পদত্যাগ করেও সেই ফেডারেশনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। এটি সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে ফেলবে কি না?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : বাফুফের নির্বাচনে একজন ক্যান্ডিডেট ঘোষণার সময় তিনি (মহিউদ্দিন বুলবুল) উপস্থিত ছিলেন। যা সার্চ কমিটির সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না।
ফেডারেশনে যাওয়া বা না যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি কোনো সমস্যা দেখি না। আমার কোনো একটি খেলা বেশি ভালো লাগে এবং আমি যদি বেশি বেশি সেখানে যাই তাহলে কি বাকি খেলাগুলোর লোকজন আমাকে নিয়ে বলা শুরু করবে! উনি (সার্চ কমিটির আহ্বায়ক) ওই (ব্যাডমিন্টন) খেলার সঙ্গে দীর্ঘদিন ছিলেন। ফেডারেশনে যাওয়া নয়, তিনি যদি ফেডারেশনের নির্বাচন বা পক্ষপাতমূলক কোনো কিছু করেন, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠবে।
ঢাকা পোস্ট : রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বাস্তবিক অর্থে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সকল ক্রীড়া স্থাপনার মালিকানা ও সব ফেডারেশন/ক্রীড়া সংস্থার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ক্রীড়াঙ্গনে গতিশীলতা আনতে খোদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কি সংস্কার প্রয়োজন?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : স্টেডিয়াম ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জায়গা রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে স্পোর্টস প্রায়োরিটির তালিকায় নিচের দিকে থাকে। এ কারণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাজেট কম পায়। সেক্ষেত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জায়গা রয়েছে। ক্রীড়ার উন্নয়নের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের স্পোর্টস ভিলেজ নির্মাণের ভাবনা রয়েছে। এজন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কিছু সম্পদ বেদখল হয়ে আছে। সেগুলো উদ্ধার করে খেলার জন্য মাঠ করা হবে। আমার মনে হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা গেলে ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক উন্নয়ন তথা ক্রীড়াঙ্গনে আরও বেশি সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে।
ঢাকা পোস্ট : নারী ফুটবলে কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব আগে থেকেই। ফেডারেশন সেই সমস্যা না মিটিয়ে কোচের সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি করেছে। এ ঘটনায় সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের ১৬ নারী ফুটবলার ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করতে অসম্মতি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ফেডারেশন কোচকে রাখলে মেয়েরা খেলা ছেড়ে দেবেন। এই অচলাবস্থা নিরসনে ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে আপনি কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : উদ্ভূত পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। খেলাধুলা তো আমাদের শৃঙ্খলা শেখায়। বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব ফেডারেশনের। ফেডারেশন বিষয়টি দেখছে, তারা ব্যর্থ হলে আমরা তখন দেখব।
ঢাকা পোস্ট : এনএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে বিসিবিতে আপনি দুজন (ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম) পরিচালক মনোনীত করেছেন। তাদের মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি ক্রিকেটাঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : আমার মনে হয় না দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমি তো বিসিবিতে গিয়েছি, দেখেছি তারা একসঙ্গে কাজ করছেন। আমার কাছে তো কোনো সমস্যা মনে হয়নি।
ঢাকা পোস্ট : আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ফেডারেশন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি একটি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিতে আবার আপনার মন্ত্রণালয়েরই একজন সদস্য মনোনীত হয়েছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : এখানে বিধি বা আইন অনুযায়ী কোনো সমস্যা নেই। এমন প্র্যাকটিস আগে হয়তো ছিল না। বিগত সময়ে ফেডারেশনের কমিটিতে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য ছিল। মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো খেলার প্রতি কেউ যদি আগ্রহ দেখাতেন, তিনি সেই ফেডারেশনে কাজ করতে পারতেন। এটাও ঠিক যে, মন্ত্রণালয় থেকে ফেডারেশনে সম্পৃক্ত করাটা সমীচীন নয়। যদি না সেই ব্যক্তি ওই খেলার প্রতি আগ্রহী না হন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি সংশ্লিষ্ট খেলায় আগ্রহী হন, তখন তিনি সেখানে সংযুক্ত হতে পারেন।
এক্ষেত্রে আমরা ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই প্রাধান্য দিচ্ছি। বিগত সরকারের আমলে কখনও খেলোয়াড়, কোচ বা সংগঠকদের কথা সরাসরি শোনা হয়নি। আমি নিজেও সব স্তরের মানুষের কথা শুনেছি। এমনকি আমাদের সার্চ কমিটিও সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, খেলোয়াড়, সংগঠক, বিচারক ও পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। যা আগে কখনও হয়নি।
ঢাকা পোস্ট : প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চলতি বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। সময় খুবই কম। এ সময়ের মধ্যে কী কী করতে সক্ষম হবেন বলে আপনি মনে করেন? যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রীড়াঙ্গন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে আজীবন মনে রাখবে।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : ঠিকই বলেছেন, সময় খুবই কম। আমরা কিন্তু টেক অ্যান্ড অ্যাকশনের চেয়ে নীতিমালা প্রণয়নের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। ব্যক্তি নয়, আমাদের সিস্টেমের পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি আগেও বিষয়টি বলেছি। একটি সুষ্ঠু ও দিকনির্দেশনামূলক নির্দেশনা বা নীতিমালা আমরা যদি ক্রীড়াঙ্গনে প্রণয়ন করতে পারি এবং সেটি যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে এ অঙ্গনের উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। পরবর্তীতে যারাই দায়িত্বে আসুক তারা যদি এটি অনুসরণ করে তাহলে ক্রীড়াঙ্গনকে আরও কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
ঢাকা পোস্ট : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দেখভালও করতে হয়ে আপনাকে। সেখানে সময়ও বেশি দিতে হয়। ফলে ক্রীড়াঙ্গন কিছুটা হলেও বঞ্চিত হচ্ছে কি না?
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : দেখুন, আমি খুবই ক্রীড়াপ্রেমী। ক্রীড়ার ক্ষেত্রে সার্চ কমিটিসহ আরও অনেক টিম কাজ করছে। প্রতিনিয়ত সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। আমার মনে হয় না কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে। যদিও স্থানীয় সরকারের পরিধি অনেক বড়। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্বাভাবিকভাবে সেখানে একটু বেশি সময় দিতে হয়। তারপরও স্পোর্টসকে কখনও অবহেলা করিনি।
এজেড/এএইচএস/এফআই/এমএআর