পাকিস্তানে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই : নাহিদ রানা

পাকিস্তানের মাটিতে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের টেস্ট সফর দিয়ে প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে দেশের বাইরে খেলতে গিয়েছিলেন নাহিদ রানা। সেই একই ভূমিতে এবার তিনি যাচ্ছেন নিজের প্রথম কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ঘোষিত দলের সঙ্গে রানা বর্তমানে দুবাইতে অবস্থান করছেন। যেখানে টুর্নামেন্ট শুরুর দ্বিতীয় দিন (২০ ফেব্রুয়ারি) ভারতের মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ।
বর্তমান সময়ে দেশের ক্রিকেটে অন্যতম আলোচিত নাম নাহিদ রানা। তরুণ এই পেসার গত বছর বল হাতে গতির ঝড় তুলে ক্রিকেটবিশ্বের নজর কেড়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পারফর্ম করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন কিংবদন্তি পেসার কোর্টনি ওয়ালশ, ইয়ান বিশপ থেকে শুরু করে বিপিএলে চিটাগাং কিংসের কোচিং করানো শন টেইটের কাছ থেকেও। সদ্য সমাপ্ত বিপিএলেও বোলিংয়ে গতি ও লাইন-লেংথের সমন্বিত প্যাকেজে রানার ফর্ম ছিল ঈর্ষণীয়!
আইসিসির প্রথম কোনো মেগা ইভেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই পেসার। যেখানে তিনি জাতীয় দলে ডাক পাওয়া, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের লক্ষ্য ও বড় মঞ্চে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য নাহিদ রানার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
ঢাকা পোস্ট : প্রথমবার আইসিসি টুর্নামেন্টে ডাক পেলেন, খবরটি শুনে অনুভূতি কেমন ছিল?
নাহিদ রানা : আলহামদুলিল্লাহ, অবশ্যই ভালো লেগেছে। আইসিসির কোনো ইভেন্টে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছি বাংলাদেশ দলে। এটা অবশ্যই দারুণ অনুভূতির।
ঢাকা পোস্ট : আপনার ক্যারিয়ারে খেলা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি…
নাহিদ রানা : হ্যাঁ অবশ্যই, এটাই আমার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত বড় টুর্নামেন্ট। পরিবার সবসময় সমর্থন করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে যখন ডাক পাই, তখনই পরিবার থেকে ভালো করে খেলার কথা বলেছিল। বলছে দেশ ও দলের জন্য খেলতে। একইসঙ্গে যেন ফিট ও সুস্থ থাকি সেটাও চায় পরিবার।
ঢাকা পোস্ট : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চয়ই বড় মঞ্চ, কতটুকু প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন?
নাহিদ রানা : আলহামদুলিল্লাহ প্রস্তুতি নিয়েছি যতটুকু পারা যায় আরকি। নিজের মতো করে (নিয়েছি)...কোচরাও ছিলেন। শেষ কয়েকদিনে পরিশ্রম করেছি। অনুশীলন করেছি সবার সঙ্গে।
ঢাকা পোস্ট : গতিতারকা নাহিদ রানাকে ভালো করে চেনানোর মঞ্চ নিশ্চয়ই এই টুর্নামেন্ট…
নাহিদ রানা : এগুলো আসলে মাথায় নিচ্ছি না আপাতত। কিন্তু চেষ্টা থাকবে অবশ্যই ভালো করার। দেশের হয়ে পারফর্ম করতে পারলে তো অবশ্যই ভালো লাগে। দলের হয়ে যেখানে সুযোগ পাব, সেখানেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। যা অতীতেও বলেছি, এখনও বলছি। এই ইভেন্টে ভালো কিছু করার লক্ষ্য–ই থাকবে।

ঢাকা পোস্ট : ইতোমধ্যে পাকিস্তানের মাটিতে খেলেছেন, ভালো করারও অভিজ্ঞতা আছে। সেটিকে বাড়তি সুবিধা মনে করেন কি না?
নাহিদ রানা : হ্যাঁ, কিছুটা সুবিধা পাওয়া যাবে। কেননা আমি সেখানে খেলেছি, সেখানকার পরিবেশ-উইকেট সবকিছু সম্পর্কে আমার একটা ধারণা আছে। চেনা-জানা থাকার কারণে একটু সুযোগ-সুবিধা থাকবেই। আমি সেই সুবিধাটা আসলে বল হাতে কাজে লাগাতে চাই। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
ঢাকা পোস্ট : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপপর্বে তিনটা ম্যাচই বড় দলের বিপক্ষে, এতে বেশ চাপ দেখছেন নিশ্চয়ই…
নাহিদ রানা : না, চাপ নিচ্ছি না। কারণ চাপ নিলে আসলে ভালো কিছু কখনোই সম্ভব হয় না। জাস্ট চেষ্টা থাকবে নিজের কাজটা ঠিকভাবে করার। দলের হয়ে কিভাবে কন্ট্রিবিউট করা যায় সেটাই লক্ষ্য।
‘আমি আসলে ফাইনাল নিয়ে চিন্তা করছি না। এতদূর চিন্তা করতে চাচ্ছি–ও না। সেটা করলে একটু সমস্যা হবে। এ কারণে আমি আসলে প্রত্যেক ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। মূলত (টুর্নামেন্টের) শুরুটা ভালো করতে চাই।’
ঢাকা পোস্ট : ভারত-পাকিস্তান নাকি নিউজিল্যান্ড, কোনো দলের সঙ্গেই জয় পাওয়াটা সহজ হবে না…
নাহিদ রানা : আগে সেখানে যাই। যেখানে তিনটা দলই শক্তিশালী। তবে প্রত্যেকটা ম্যাচের আগেই আমরা জয়ের জন্য নামব। সেভাবেই সাজাব নিজেদের ভেতরের পরিকল্পনাটাও। আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচেই জয়ের পরিকল্পনা করে মাঠে নামব।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্ট : বিপিএলে টানা ম্যাচ খেলেছেন, কিছুটা বিশ্রাম পেলে ভালো হতো কি না?
নাহিদ রানা : হ্যাঁ অবশ্যই, বিশ্রাম পেলে তো ভালো লাগতো। কিন্তু কিছু করার নেই, ক্রিকেটারদের জীবন এমনই। আপনি বিশ্ব ক্রিকেটের দিকে তাকালে এটাই দেখবেন। আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি সব সময়। বিপিএল খেলে অভিজ্ঞতা কিন্তু বেড়েছে। মিকি আর্থার আমাকে সবসময় বলেছে আমি সেরা। আমি যে প্ল্যানটা করব, সেটা যেন মাঠে (বাস্তবায়ন) করতে পারি, আমাকে সবসময় এই কথাটাই বলেছেন তিনি।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে বাংলাদেশের পেস বিভাগে দারুণ প্রতিযোগিতা চলছে, বর্তমান স্কোয়াডের পেস ইউনিটকে কীভাবে দেখছেন?
নাহিদ রানা : আপনি বলতে পারেন বর্তমানে বাংলাদেশের সব পেসাররা কিন্তু অনেক ভালো করছে। আলাদা একটা প্রতিযোগিতা কাজ করছে এখানে। দলের বাইরে যারা আছে তারাও কিন্তু অনেক ভালো খেলছেন। এভাবে প্রতিযোগিতায় থাকাটা কিন্তু (দলের জন্য) অনেক ভালো দিক।
ঢাকা পোস্ট : সাকিব আল হাসান দলে থাকলে বাড়তি সুবিধা হতো কি না?
নাহিদ রানা : অবশ্যই, সাকিব ভাইয়ের মতো অলরাউন্ডার থাকলে তো দলের জন্য ভালো–ই। তিনি যেহেতু নেই, অবশ্যই তাকে মিস করব। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার বিপিএলের সময় কথা হয়নি। শেষবার কথা হয়েছিল গেল বছর ডিসেম্বরে টেস্ট ম্যাচের পর। উনি আমাকে বলছিলেন, আমি এখন উইকেট পেলে সেলিব্রেশন করি। অন্য সময় আসলে করতাম না। এমন কথা–ই হয়েছিল আরকি। আমার সঙ্গে অনেক মজা করে উনি।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্ট : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ শেষবার সেমিফাইনাল খেলেছিল, এবার কী লক্ষ্যটা ফাইনাল…
নাহিদ রানা : আমি আসলে ফাইনাল নিয়ে চিন্তা করছি না। এতদূর চিন্তা করতে চাচ্ছি–ও না। সেটা করলে একটু সমস্যা হবে। এ কারণে আমি আসলে প্রত্যেক ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। মূলত (টুর্নামেন্টের) শুরুটা ভালো করতে চাই।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা উঠবে। পরদিনই (২০ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারতের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপপর্বে টাইগারদের পরবর্তী দুই ম্যাচ ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ড এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচই হবে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে।
এসএইচ/এএইচএস