ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সবাই এক্সাইটেড : মিরাজ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রতিযোগিতাটির সর্বশেষ আসর। সেবার সেমিফাইনালে খেলা টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। এবার অবশ্য কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতি। বেশ অনেকদিন ধরেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে দূরে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রস্তুতির ঘাটতির কথা অকপটেই স্বীকার করে নিয়েছেন টাইগার হেড কোচ ফিল সিমন্স। অন্য দলগুলো যেখানে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যস্ত, বিপিএলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলেই ৫০ ওভারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামবে টিম টাইগার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও গেল কয়েকদিন ঘরের মাঠে ক্যাম্প করে শেষ মুহূর্তে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। দেশ ছাড়ার আগে বড় স্বপ্নের কথাই শুনিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আশাবাদী দলের অভিজ্ঞ সদস্য মেহেদী হাসান মিরাজও। তিনি অবশ্য দেশ ছাড়ার আগে বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক থাকবেন মিরাজ।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে সামনে রেখে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক শাকিব শাওনের মুখোমুখি হয়েছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্ট : ৮ বছর পর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, কতটা প্রস্তুত?
মিরাজ : বড় টুর্নামেন্ট প্রত্যেকটা ক্রিকেটারের জন্যই বড় মঞ্চ। এসব প্রতিযোগিতায় খেলতে পারাটা অবশ্যই ভালো দিক। আপনি দেখেন যে সবশেষ ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়েছিল। পরের ৮ বছরে কিন্তু আর হয়নি, এতদিন পরে আবার হতে যাচ্ছে। আমরা খুব এক্সাইটেড। দল হিসেবে ভালো করতে মুখিয়ে আছি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্ট : ব্যাটসম্যান মিরাজকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার সুযোগ দেখছেন কি না?
মিরাজ : হ্যাঁ অবশ্যই, কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে বড় টুর্নামেন্টই বলতে পারেন। আইসিসি ইভেন্ট, সুতরাং আমি যদি এখানে ভালো খেলতে পারি তো আমার জন্য ভালো হবে। ভালো করতে পারলে নতুন করে সবাই আমাকে চিনবে–জানবে। আমি আমার অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে চাই, যেহেতু ব্যাটিংয়ে একটা ভালো টাচে আছি, সেটি ধরে রাখতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : ব্যাটিংয়ে ভালো করার কথা বললেন, পছন্দের কোন পজিশনে ব্যাট করতে চান?
মিরাজ : সবসময় দলের হয়ে পারফর্ম করার ইচ্ছা। তবে অবশ্যই উপরের দিকে ব্যাটিং করতে পারলে ভালো লাগবে। আপনি দেখেন শেষ যে কয়েকটা সিরিজ খেলেছি, সেখানে কিন্তু আমি চার নম্বরে ব্যাট করেছি। এখন ওখানে তো আমি পারফরম্যান্স করেছি। টিম ম্যানেজমেন্ট যদি আমাকে সেই জায়গায় চিন্তা করে আমার জন্য ওখানে ভালো হবে, অবশ্যই আমি চারেই ব্যাট করতে চাইবো তাহলে।
ঢাকা পোস্ট : গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই বড় দলের বিপক্ষে, চ্যালেঞ্জ নিশ্চয়ই বেশি থাকবে...
মিরাজ : অবশ্যই প্রত্যেকটা ম্যাচেই চ্যালেঞ্জ থাকবে। আর এরকম বড় টুর্নামেন্টে প্রত্যেকটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং। এখানে ভালো খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আমরা অনেকদিন ধরেই তো খেলার মধ্যেই আছি। সবার মধ্যে উদ্দীপনা অনেক, আমাদের ভালো প্রিপারেশন আছে ইনশাআল্লাহ। এখন দেখা যাক, বাকিটা ব্যাটে-বলে (কতটা কী হয়)।

ঢাকা পোস্ট : ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। তাদের হারাতে পারলে সমর্থকরা বেশি খুশি হয়, সেই আনন্দ দিতে আত্মবিশ্বাসী কি না?
মিরাজ : দেখেন ভারতের সঙ্গে যখনই আমরা খেলি, তখন দলের সবাই এক্সাইটেড থাকে এবং ভালো একটা ম্যাচ হয়। আমাদের জন্য ভালো খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ, পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রথম ম্যাচ সবাই অনেক এক্সাইটেড থাকবে। জিততে পারলে আমাদের দলের জন্যই সুযোগ থাকবে। সবাই বুস্ট-আপ থাকবে দল হিসেবে।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্ট : কন্ডিশন কতটা পক্ষে থাকবে, যেহেতু এশিয়ান মাঠে খেলা…
মিরাজ : হ্যাঁ অবশ্যই (পক্ষে থাকবে), রাওয়ালপিন্ডিতে শেষ দুটো টেস্ট কিন্তু আমরা খেলেছি। কন্ডিশন-উইকেট সব কিন্তু আমাদের পরিচিত, আর বিশেষ করে আমি ওই সিরিজের আগে কিন্তু কখনো পাকিস্তানে খেলিনি। এখন সেখানকার উইকেট সম্পর্কে বেশ ধারণা আছে, যেহেতু খেলেছি। এটা কাজে দেবে, আর দুবাইতে অনেকবার খেলেছি। সবাই খেলেছে যার যার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে বলতে পারেন এশিয়ান কন্ডিশন হওয়ায়।
ঢাকা পোস্ট : দলে আপনার রোল কতটা থাকবে, এখন তো সিনিয়র ক্রিকেটার (সহ-অধিনায়ক ঘোষণার আগে)
মিরাজ : দেখেন আমাদের রোলটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যারা দলের সিনিয়র ক্রিকেটার আছে, এ ছাড়া আমার রোলটা কিন্তু একটু বেশি–ই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যাটিং বলেন আর বোলিং, দুটাই করতে হবে। দুইটার একটা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে কিন্তু দলের জন্য ক্ষতি হবে। আমি চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য।

ঢাকা পোস্ট : প্রত্যাশা, বিশ্বাস কিংবা আত্মবিশ্বাস বলেন, দল হিসেবে কত দূর যেতে পারবেন বলে মনে করেন?
মিরাজ : ফাইনাল (খেলা) বলতে পারেন একটা ভাগ্যের ব্যাপার। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে প্রত্যেকটা ক্রিকেটারকে পারফর্ম করতে হবে ফাইনালে যেতে হলে। যারা আছে সবার পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ২০১৭–তে সেমিফাইনাল খেলেছিলাম, এটা আমাদের জন্য আলাদা একটা কনফিডেন্স। ক্রিকেটারদের সবাইকে শতভাগ দিতে হবে তিন ম্যাচেই। আর তিন ম্যাচের মধ্যে যদি দুটো জিততে পারি, সেক্ষেত্রে একটা আশা থাকবে সেমিফাইনাল খেলার ব্যাপারে।
ঢাকা পোস্ট : সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কি সম্ভব বাস্তবিক অর্থে?
মিরাজ : প্রত্যেকটা ক্রিকেটারই চাই যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে, চ্যাম্পিয়ন হতে। তবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আসলে খেলার অবস্থা কি সেটার ওপর। এখন আমি যদি বলি যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো, এটা একটা অযৌক্তিক (কথা), আবার আমি যদি বলি যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারবো না এটাও অযৌক্তিক। আমাদের লক্ষ্য প্রথম ম্যাচটা যদি জিততে পারি তাহলে আমরা কিন্তু অর্ধেকটা এগিয়ে যাব। পরে পাকিস্তানে গিয়ে যদি একটা ম্যাচ জিততে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের সুযোগটা বেশি থাকবে। প্রত্যেকটা ক্রিকেটার যার যার জায়গা থেকে সেরাটা দিতে পারলেই হবে।
মিরাজের দাবি- ভারতের সঙ্গে যখনই আমরা খেলি, তখন দলের সবাই এক্সাইটেড থাকে এবং ভালো একটা ম্যাচ হয়। আমাদের জন্য ভালো খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ, পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রথম ম্যাচ সবাই অনেক এক্সাইটেড থাকবে। জিততে পারলে আমাদের দলের জন্যই সুযোগ থাকবে। সবাই বুস্ট-আপ থাকবে দল হিসেবে।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ দলের পেসারদের নিয়ে এখন দারুণ প্রতিযোগিতা…
মিরাজ : আমাদের যে পেস ইউনিটটা আছে সেখানে কিন্তু সবাই পারফর্ম করছে। আমি আলাদা করে কারো নাম বলতে চাই না কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যারা আছে সবাই অভিজ্ঞ এবং ক্যাপাবল। সবাই ভালো করবে আশা করি, তাসকিন-মুস্তাফিজ অভিজ্ঞ আছে। এ ছাড়া নাহিদ-সাকিব যারা আছে আমার কাছে মনে হয় এই কম্বিনেশনটা খুবই ভালো। পেসারদের মধ্যে একটা কম্পিটিশন কিন্তু এখন আছে, যেটা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিকল্প অনেক পেসার আছে যে কারণে পারফর্ম করতেই হবে।
ঢাকা পোস্ট : আপনাদের জন্য শুভকামনা
মিরাজ : ধন্যবাদ। দোয়া করবেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা উঠবে। পরদিনই (২০ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারতের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপপর্বে টাইগারদের পরবর্তী দুই ম্যাচ ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ড এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচই হবে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে।
এসএইচ/এফআই/এএইচএস