চোখ বন্ধ করলেই ফাইনাল হার চোখে ভাসছে : শরিফুল

সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে রানার্সআপ হয়েছে চিটাগাং কিংস। যেখানে ফরচুন বরিশালের কাছে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হেরেছে কিংসরা। দল হারলেও এদিন চিটাগাংয়ের হয়ে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ৩৪ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার। অবশ্য আসরজুড়েই ধারবাহিক ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে পেয়েছেন ১৭ উইকেট।
বিজ্ঞাপন
বিপিএলের এবারের আসরের অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স এবং আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে কথা বলেছেন শরিফুল ইসলাম। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-
ঢাকা পোস্ট : ফাইনাল হারের পর কি হতাশা কাজ করছে?
বিজ্ঞাপন
শরিফুল: অবশ্যই খারাপ লাগছে, হতাশা তো একটু কাজ করছে। গতকাল রাতে ঘুমাতে চারটা বেজে গিয়েছিল। চোখ বন্ধ করলেই ওই শেষ মুহূর্তটা চোখে ভাসছিল। একজন ক্রিকেটার হিসেবে বা খেলোয়াড় হিসেবে বলেন ফাইনাল ম্যাচ হার এই দুঃখটা আসলে অন্যরকম, খুবই খারাপ লাগে। আবার তখন নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে দল হিসেবে আমরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো ভাগ্যে ছিল না তার জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্ট : ব্যাটিংয়ের গভীরতা কম ছিল আপনাদের, এটা নিয়ে পরিকল্পনা কী ছিল?
শরিফুল: প্রতিটি দলের খেলোয়াড় কিন্তু নিজ দলকে বিশ্বাস করে। বিশেষ করে জয়ের ক্ষেত্রে আমরাও বিশ্বাস করেছিলাম, যে আমরা জিতব। আমাদের খেলোয়ারদের প্রতি বিশ্বাস ছিল আমরা জেতার জন্য খেলব। আর আমাদের অনেক ম্যাচে ৫ উইকেট যাওয়ার পরে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান থাকে না। আমাদের আসলে সাকিব ভাইয়ের অভাবটা ছিল। যদি সাকিব ভাই থাকতো তাহলে একটা ব্যাটসম্যান বেশি খেলানো যেত। তাছাড়া যদি বলেন, মঈন ভাই বা ম্যাথিউস যদি আসত তাহলে আমাদের টিমটা আরো ভালো হতো।
ঢাকা পোস্ট : ফাইনালের আপনাদের ফিল্ডিং দৃষ্টিকটু ছিল, এমনটার পেছনে কোনো কারণ আছে কি?
শরিফুল: হ্যাঁ, আমরা কিছু ফিল্ডিং মিস করেছি। আমি আসলে বাজে বলবো না। সবাই আসলে চেষ্টা করে সেরাটা দেওয়ার। কেউ কিন্তু বাজে ফিল্ডিং করতে চায় না কিংবা কেউ চায় না যে তার খেলাটা মাঠে বাজে হোক। সবাই চায় সেরাটা দেওয়ার। তো চেষ্টা করেছে খেলোয়াড়রা হয়তো ভুল হয়েছে।
ঢাকা পোস্ট : দলের একাধিক তারকা ক্রিকেটার চুক্তির পর আসেনি, এতে দল কতটা ভুগেছে?
শরিফুল: হ্যাঁ, কিছু খেলোয়াড় থাকলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু দিন শেষ আমরা কিন্তু ফাইনাল খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ, দলে যারা ছিল সবাই তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
ঢাকা পোস্ট : ফাইনালে আপনি দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। জিতলে ম্যাচ সেরাও হতে পারতেন। আফসোস কাজ করে কি না?
শরিফুল: এসব নিয়ে আসলে ভাবার খুব একটা সময় থাকে না। বা এটা নিয়ে আমি ভাবিও না। আমি আমার কাজটা করার চেষ্টা করি সবসময়। গতকাল ম্যাচে শুধু জয়ের কথাই ভেবেছিলাম। যে আল্লাহ যেন ম্যাচটা আমরা জিততে পারি কিন্তু আসলে হয়নি শেষ পর্যন্ত।
ঢাকা পোস্ট : আসরের শুরুর দিকে উইকেট পাচ্ছিলেন না, শেষের দিকে দারুণ ভাবে ফিরেছেন। পরিকল্পনা কী ছিল?
শরিফুল: মানসিকভাবে তখন আমি শুধু নিজেকে বলার চেষ্টা করেছি যে, আমি পারবো। আমার ভেতরে বিশ্বাস ছিল যে আমি পারবো। আর প্রধান কোচ শন টেইট আমাকে ভালো উপদেশ দিয়েছে। সে আমাকে সবসময় বলেছে যে, তুমি হতাশ হবে না, তুমি পারবে, নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে। যখন খারাপ সময় যাচ্ছিল, ভিডিও দেখে সে আমাকে অনেক কিছুতে সাহায্য করেছে। সে খুব পজিটিভ কথাই বলেছে আমাকে।
ঢাকা পোস্ট : আসরে সবমিলিয়ে ১৭ উইকেট পেয়েছেন, আপনি সন্তুষ্ট কি না?
শরিফুল: শুরুর দিকে যদি কয়েকটি ম্যাচে ভালো করতে পারতাম তাহলে উইকেট সংখ্যা আরো বাড়ত বলে আমার মনে হয়। তবে হয়তো এরকমই লেখা ছিল, চেষ্টা করেছি হয়নি আর কি। দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়, আল্লাহ ভরসা। যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আসলে আর ভাবছি না, চিন্তাও করছি না। সামনের দিকে ভাবছি আল্লাহ চাইলে হয়তো পরবর্তীতে আরো ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।
ঢাকা পোস্ট : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ হয়নি, এট কীভাবে দেখছেন?
শরিফুল: আসলে কোনো খারাপ লাগা নেই। সতীর্থদের জন্য অবশ্যই আমার বার্তা আছে, আমরা যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। সবার প্রতি অনেক শুভকামনা ও দোয়া। একটাই চাওয়া যে, সবাই যেন সুস্থ থেকে খেলা শেষ করতে পারে। তারা যেন তাদের সেরা খেলাটাই খেলতে পারে। মন থেকে এই দোয়া থাকলো। দেশের জন্য দোয়া থাকবে, দলের জন্য দোয়া থাকবে। তারা ভাল রেজাল্ট করবে আশা করি।
ঢাকা পোস্ট : সামনে ডিপিএল, সেখানে লক্ষ্য কী থাকবে?
শরিফুল: আমাদের ঘরোয়া আসরের মধ্যে বড় টুর্নামেন্ট এটি। এটা তো অবশ্যই প্রমাণের মঞ্চ। আমি চেষ্টা করব ভালো করার, যত ভালো পারফরম্যান্স করা যায় আর কি। যদিও এখনো দল ঠিক হয়নি কথাবার্তা চলছে, দেখা যাক।
ঢাকা পোস্ট : গ্রামের বাড়িতে গেলে আপনি এখনো টেপ-টেনিসে খেলেন।
শরিফুল: এই খেলাটা আমাকে আসলে মানসিক শান্তিটা দেয়। ছোটবেলা থেকেই খেলে বড় হয়েছি ওইটা খেলতে আসলে ভালো লাগে। সবার সাথে খেলতে পারি এলাকাতে। তবে এখন গেলে দেখা যায় অনেকে ফোনে আসক্তি বেশি। যখন গ্রামে থাকতাম আগে সবাই বিকালে স্কুল ছুটি হলেই মাঠে খেলতে চলে আসতো। এখন আসলে সেটা দেখা যায় না। কমে গেছে, অনেকেই খুব খারাপ অবস্থায় আছে, বিভিন্ন নেশায় যুক্ত। এজন্য আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট করেছিলাম।
ঢাকা পোস্ট : পরিবারের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটান?
শরিফুল: ক্রিকেটের শুরু থেকে আমার আব্বা-মা, মামা, ভাই সবার অনেক অবদান ছিল। এছাড়া আলমগীর কবির স্যারের অনেক অবদান ছিল, সবাই জানেন আপনারা। এরপরে আমার স্ত্রী এখন খেলা দেখে আমাকে সাপোর্ট করে। যখন খারাপ খেলি তখন ফোন হাতে নিয়ে দেখি যে তার টেক্সট সবার আগে আসে। এখন বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাও খেলা দেখে, টিভিতে তাকিয়ে থাকে আমাকে দেখতে।
এসএইচ/এইচজেএস