বাফুফেতে আসেননি সভাপতি, ‘শৃঙ্খলা’ই প্রাধান্য প্রতিবেদনে

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ৯টার-ও বেশি। বাফুফের বিশেষ কমিটির সভা শেষে কর্মকর্তারা ভবনের নিচে নামছেন। বাইরে অপেক্ষারত গণমাধ্যমের ভিড়। এরপর কমিটির প্রধান ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। তার নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন সভাপতি বরাবর। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের বিষয়টি তাই ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়ালের ওপরই নির্ভর করছে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলার ও কোচের দ্বন্দ্ব নিরসনে গঠিত বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেন, ‘নারী ফুটবলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সেটা নিরসনে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। আমরা প্রায় প্রতিদিনই কাজ করেছি। সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। সেই বক্তব্যের আলোকে কিছু সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ এবং সমস্যার প্রতিকার দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি সভাপতির দপ্তরে।’ প্রতিবেদনে ফুটবলার ও কোচ কোনো পক্ষকেই বড় ধরনের শাস্তির সুপারিশ নেই বলে জানা গেছে।
কোচ-খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব নিরসনে এখন পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে ফেডারেশনের সভাপতির ওপর। তিনি চাইলে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আবার প্রয়োজনে নির্বাহী সভাও ডাকতে পারেন। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা প্রসঙ্গে ইমরুল হাসান বলেন, ‘যেহেতু আমরা সভাপতি বরাবর দিয়েছি। সভাপতি চাইলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আবার প্রয়োজনে নির্বাহী সভায় সবার মতামতও চাইতে পারেন। সব কিছুই নির্ভর করছে তার ওপর। আবার প্রয়োজনবোধে তিনি খেলোয়াড়দের সঙ্গেও একবার কথা বলতে পারেন।’
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় দেশের বাইরে ছিলেন। গতকাল দেশে ফিরেছেন তিনি। আজ ফেডারেশনেও আসার কথা শোনা গিয়েছিল। নারী ফুটবল ইস্যু ক্রীড়াঙ্গন ছাপিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছালেও, তিনি আজও আসেননি। এ প্রসঙ্গে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানের ভাষ্য, ‘সভাপতির হাতেই যে প্রতিবেদন দিতে হবে বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। উনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অনেক কর্মসূচি থাকতে পারে। প্রতিবেদন পরে তিনি আপনাদের জানাবেন।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ব্রাজিলিয়ান কোচ ডিডোর সঙ্গে সাত ফুটবলারের ঝামেলা হয়েছিল। সেই ঝামেলা নিরসনে বাফুফের তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বিদেশ থেকে এসে সরাসরি ফেডারেশনে এসেছিলেন।
এদিকে, বাফুফের বিশেষ কমিটি যখন প্রতিবেদন তৈরি করছিল, ঠিক তখনই সরকার নারী ফুটবল দলকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেছে। এটি প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেনি বলে মন্তব্য ইমরুলের, ‘একুশে পদক প্রাপ্তি শুধু ফুটবল নয়, যেকোনো স্পোর্টসের জন্য বড় বিষয়। নারী ফুটবল দলের এই স্বীকৃতি ফুটবলের প্রতি আপামর জনগণের আগ্রহ আরও বাড়াবে। নারীরা সাফল্য এনে দিয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় ডিসিপ্লিন। সেখানে সাফল্য-ব্যর্থতা কোনো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেনি।’
গত কয়েক বছর নারী ফুটবলাররা বাংলাদেশকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। সমাজের অনেক প্রান্তিক পর্যায় থেকে এসে তারা দেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এমন আবেগের সঙ্গে আবার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, পেশাদারিত্ব এবং শৃঙ্খলাও রয়েছে। এই দুইয়ের সংমিশ্রণ নিয়ে বাফুফের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘কমিটিতে যারা ছিলেন সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আমরা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
আরও পড়ুন
জাতীয় দলের কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের দ্বন্দ্ব আরও কয়েক মাস আগে থেকেই চলছে। নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বিষয়টি ভালোভাবেই জ্ঞাত। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নারী উইংয়ের ব্যর্থতা নিয়ে বিশেষ কমিটির প্রধান ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনে নারী উইংয়ের করণীয় কী ছিল সেটাও আলোকপাত করেছি।’
দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী ফুটবল ম্যাচ আয়োজনে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। আজ এমন ঘটনা ঘটেছে রংপুরে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগের বলেও মনে করছে বাফুফে, ‘(আগে) জয়পুরহাটে ঘটল, আজ হলো অন্য জায়গায়। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখছে বিষয়টি।’
এজেড/এএইচএস