বাফুফের ‘আমলাতন্ত্র’ : ফাইল ওঠে না দেড় মাসেও!
২২ নভেম্বর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় মোহামেডান-বসুন্ধরা কিংস চ্যালেঞ্জ কাপ ২.০ ম্যাচ দিয়ে ২০২৪-২৫ ফুটবল মৌসুম শুরু হয়েছিল। ওই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে স্মোক ফ্লেয়ার ছোড়ার ঘটনায় খেলা বন্ধ ছিল প্রায় মিনিট দশেক। ঘরোয়া ফুটবলে এমন ঘটনা খুবই বিশেষ। সেই ঘটনার দেড় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাফুফে এই সংক্রান্ত কোনো শৃঙ্খলা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
লিগ, টুর্নামেন্টে ঘটিত শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটিই দেখভাল করে। বসুন্ধরা কিংস-মোহামেডান ম্যাচের বিষয়টি শৃঙ্খলা কমিটিতে ওঠার কথা। দেড় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন সিদ্ধান্ত হয়নি- ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ করতে গিয়ে জানা গেল বিস্ময়কর তথ্য, ‘আমি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ডিসিপ্লিনারি কমিটির তালিকা পাইনি। ফলে কোনো মিটিং/সভাও হয়নি।’
২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ নভেম্বর নির্ধারণ হয়েছে বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটি। ডিসিপ্লিনারি, আপিল ও প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটিতে বাফুফের নির্বাহী কমিটির কেউ থাকতে পারেন না। গত দেড় যুগ এই কমিটিতে একই ব্যক্তিরা কাজ করছেন। ২০০৮ সাল থেকে বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন। বাফুফের বর্তমান নির্বাহী কমিটিও তাকেই চেয়ারম্যান রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের মন্তব্য, ‘ডিসিপ্লিনারি একটি স্বাধীন কমিটি। নির্বাহী কমিটি পরিবর্তন হলেও এই কমিটি সাধারণত পরিবর্তন করা হয় না। তারাই ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন।’
ডিসিপ্লিনারি কমিটি মেজবাহ উদ্দিন এবং তার বিগত কমিটির ব্যক্তিবর্গই যদি পুনরায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হন সেই বিষয়টি অন্তত ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক/অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো প্রয়োজন ছিল। এর চেয়েও বড় বিষয় ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লিগের মতো আসর চলছে, যেখানে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় থাকে সেখানে ডিসিপ্লিনারি ও আপিল কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে স্মোক ফ্লেয়ারের মতো একটি ঘটনা ঘটেছে এবং দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান ফেডারেশনে কড়া চিঠিও দিয়েছে। এরপর লিগের ছয় ম্যাচ এবং ফেডারেশন কাপ থেকে মোহামেডানের বিদায় হয়ে গেলেও বাফুফে দেড় মাস আগের ঘটনার কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছে না।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ঢাকা আবাহনী ক্লাবের বিপক্ষে ফেডারেশনে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো সুরাহা নেই। প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির চেয়ারম্যান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাবেক সচিব আখতার হোসেন খান। তিনি ২০ বছর ধরে এই কমিটির প্রধান। ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিনের মতো তিনিও জানেন না নতুন কমিটি তাকে দায়িত্বে রেখেছে কি না।
প্লেয়ার স্ট্যাটাস ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সঙ্গে মূলত কাজ করে বাফুফে সচিবালয়। খেলোয়াড়দের কোনো আবেদন বা কোনো শৃঙ্খলার বিষয় থাকলে সেটা প্লেয়ার স্ট্যাটাস/ডিসিপ্লিনারি কমিটিকে অবহিত করা বাফুফে সচিবালয়ের দায়িত্ব। অনেক সময় বাফুফে সচিবালয় সংশ্লিষ্ট কমিটিকে জানাতে সময় ক্ষেপণ করে, আবার অনেক ক্ষেত্রে কমিটির সিদ্ধান্ত হওয়ার সপ্তাহ খানেক বা আরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাফুফে সচিবালয়। সাধারণ আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতার মতোই যেন বাফুফের আমলাতন্ত্র!
আশি-নব্বইয়ের দশকে বাফুফেতে বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। স্বল্প বেতনধারীরাই ফেডারেশনের নানা বিষয় সামলাতেন। এখন লাখ লাখ টাকা পাওয়া এক্সিকিউটিভের সংখ্যা ততোধিক হলেও ফিফার শাস্তির তালিকায় থাকে বাংলাদেশের নাম। মাঠের খেলা ফুটবলে ফুটবলার, রেফারি ও কোচদের সম্মানী বকেয়া থাকলেও ফেডারেশনের স্টাফদের পকেটে বেতন-বোনাস ঢোকে অনেক সময় মাস শেষ হওয়ার আগেই।
এজেড/এএইচএস