আফগানিস্তানকে বয়কটের ডাক, প্রতিক্রিয়া জানাল ইংল্যান্ড ক্রিকেট
ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসর শুরুর আগে আফগানিস্তানকে বয়কটের দাবি উঠেছে ইংল্যান্ডে। তালেবান সরকারের ক্ষমতায় নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের অন্তত ১৬০ জন রাজনৈতিক নেতা। সে বিবেচনায় তারা আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ম্যাচ বয়কটের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।
রাজনীতিবিদদের বয়কটের ডাক প্রত্যাখ্যান করেছে জস বাটলার–জোফরা আর্চারদের ক্রিকেট বোর্ড। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পাকিস্তানে ও দুবাইতে (কেবল ভারতের ম্যাচ) অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। যেখানে একই গ্রুপ ‘বি’–তে রয়েছে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে স্বভাবতই মুখোমুখি ম্যাচ রয়েছে ইংল্যান্ড-আফগানিস্তানের। টুর্নামেন্টের সূচি অনুযায়ী– ২৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে দল দুটি মুখোমুখি হবে।
দুই দলের সেই ক্রিকেটীয় সাক্ষাতের আগে বাগড়া দিয়েছে ‘রাজনৈতিক ইস্যু’। তালেবান সরকারের একাধিক নীতির বিরোধিতায় ইংল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের একাংশ আফগানিস্তানকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন নাইজেল ফারাজ, জেরেমি করবিন, লর্ড কিনকের মতো নেতারা। তালেবান প্রশাসন নারীদের মানবাধিকার খর্ব করছে এমন অভিযোগ তুলে তারা জানিয়েছেন, তালেবান প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিক ইসিবি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করা উচিৎ।
বয়কটের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও, ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ না খেলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অবশ্য দলটি আগে থেকেই রশিদ-নবিদের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ থেকে বিরত রয়েছে। একইসঙ্গে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়ায় নারীদের মানবাধিকারসহ সব বিষয় নিয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনার আহবান জানিয়েছেন ইসিবি প্রধান গোল্ড। তিনি বলছেন, ‘ইসিবি শক্তভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের অধীনে নারী ও মেয়েদের সঙ্গে বিরূপ আচরণের বিরোধীতা করে আসছে।’
গোল্ড আরও বলেন, ‘আইসিসির সংবিধানেই বলা আছে যে, প্রতিটি সদস্য দেশ নারী ক্রিকেটের সম্প্রসারণ ও উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেবে। সেটি বিবেচনায় নিয়েই ইসিবি আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট ম্যাচ থেকে বিরত থাকে। ইসিবি তাদের এই পদক্ষেপ সামনেও অব্যাহত রাখবে। কোনো সদস্য দেশের একতরফা আচরণের চেয়ে আইসিসির দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি প্রভাবশালী। একইসঙ্গে সারাবিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিও আমরা সম্মান জানাতে চাই।’
আরও পড়ুন
এরপর ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের বয়কটের দাবি নিয়ে ইসিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা আফগান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ ও বয়কটের দাবিও বুঝতে পারছি। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ বয়কট তালেবান সরকারের স্বাধীনতা দমন ও আফগান সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সেই চেষ্টাকে অসাবধানতাবশত সমর্থন দিয়ে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রিকেটই হতে পারে আফগান সমাজে এখনও বেঁচে থাকা আশা ও ইতিবাচকতা টিকিয়ে রাখার উৎস। ইসিবি আফগান নারীদের প্রতি বিরূপ আচরণের সমাধান পেতে চায়, একইসঙ্গে যাতে আফগান মানুষের ওপরও কোনো খারাপ প্রভাব না পড়ে।’
‘আমরা বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার, আইসিসি, অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাব। যাতে আলোচনায় সম্ভাব্য সকল পরিবর্তনযোগ্য বিষয় উঠে আসতে পারে’, আরও যোগ করেন ইসিবির প্রধান রিচার্ড গোল্ড।
— Oliver Brown (@oliverbrown_tel) January 6, 2025
এর আগে ইসিবির উদ্দেশ্যে ব্রিটেনের রাজনীতিবিদরা বলেছেন, ‘তালেবানের অধীনে আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি যে ভয়াবহ আচরণ করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য আমরা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট কর্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি। ইসিবিকে আমাদের অনুরোধ, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটি বয়কট করা হোক। এই ধরনের জঘন্য আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। আফগানিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই লিঙ্গবৈষম্য রুখে দাঁড়ানো উচিৎ। আফগান নারীদের সহমর্মিতার বার্তা দেওয়ার অনুরোধ করছি ইসিবিকে। আশা করি আফগান নারীদের আমরা নিরাশ করব না।’
এএইচএস