ক্রিকেটার তৈরি করতেই রাজিনের অ্যাকাডেমিতে ফ্রিতে অনুশীলনের সুযোগ
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রাজিন সালেহ। ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন অনেক আগেই। তবে সখ্যতা এখনো সেই ক্রিকেটের সঙ্গেই। খেলা ছাড়ার পর মনোযোগ খেলোয়াড়দের তৈরি করার ব্যাপারে। বর্তমানে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথমসারির কোচদের একজন তিনি। কাজ করছেন ডিপিএল, বিপিএল, এনসিলের মতো টুর্নামেন্টে। এছাড়া জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বেও দেখা গেছে তাকে।
কাজ করেছেন হাই পারফর্মম্যান্স ইউনিটের সঙ্গেও। তবে সব ছাপিয়ে রাজিন সালেহের রয়েছে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। যেটা হয়ত সাধারণ ভক্ত-সমর্থকদের অজানা। সেই গল্পের সন্ধানেই সিলেটের পথে নামতে হলো। জান গেক, ২০০৮ সালে সিলেট সুরমা ক্রিকেট একাডেমি নামে যাত্রা শুরু করেছিল রাজিনের অ্যাকাডেমির। সেই অ্যাকাডেমি এখনো চলমান, সিলেট শহরের সদরেই অবস্থিত এই ক্রিকেটার গড়ার কারখানা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুদে ক্রিকেটারদের অনুশীলন ম্যাচের চিত্র। স্থানীয় আরেকটি দলের সঙ্গে লড়ছে সুরমা একাডেমির জুনিয়র দল। সিলেট এমসি কলেজের মাঠেই উইকেট বানিয়ে এসব ক্রিকেটাররা খেলে থাকেন এখানে। ভালো উইকেটের সাথে মাঠের দৈর্ঘও দেখা গেল বেশ বড়। সবমিলিয়ে সিনিয়র জুনিয়র মিলে এখানে ক্রিকেটার রয়েছেন ১৫০ জন। রয়েছেন তিন জন কোচিং স্টাফের সদস্যও।
আলাপ করে জানা গেল, কোনো স্পন্সর ছাড়াই চলছে রাজিনের এই অ্যাকাডেমি। কোচিং স্টাফদের বেতনও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেন তিনি। কোচিং স্টাফের সদস্য আল ইমরান অনিক বিষয়টা জানাচ্ছিলেন বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে। চমকে উঠতে হয় এটা শুনে, সুবিধা বঞ্চিত বা আর্থিক কষ্টে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য রাজিন সালেহ রেখেছেন আলাদা ব্যবস্থা। অর্থের অভাবে যেন ক্রিকেটার হওয়ার পথ না হয়, তাই আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ক্রিকেটাররা ফ্রি-তেই ক্রিকেটের পাঠ নিচ্ছেন সুরামা অ্যাকাডেমিতে।
২০০৮ সাল থেকে এত বছরের সফলতা নিয়ে অনিক বলছিলেন, ‘মুজাক্কির হোসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পেয়েছিলেন। তিনি আমাদের অ্যাকাডেমির ক্রিকেটার ছিলেন। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচও খেলেছেন। ঢাকা প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টে আমাদের দুজন ক্রিকেটার রয়েছেন।’
বিনামূল্যে কোচিংয়ের বিষয়ে অনিক বলেন, ‘বর্তমানে অ্যাকাডেমির কোনো পৃষ্ঠপোষক নেই। কোচিং স্টাফ যারা রয়েছেন তাদের বেতন আসে রাজিন স্যারের পকেট থেকে। সিলেট শহরে এই অ্যাকাডেমি হওয়ায় সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ থেকে অনেকে আসেন। যাদের অর্থনৈতিক সমস্যা থাকে, তাদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে ১৫০ জন ক্রিকেটার রয়েছে অ্যাকাডেমিতে। তাদের মধ্যে ৬০-৭০ জন বিনামূল্যে অনুশীলন করছে। এদের মধ্যে যারা বয়সভিত্তিক দলে খেলতে যায়, তাদের পরিধান সামগ্রীসহ অনেক কিছু দেওয়া হয়।‘
অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ নিয়ে জুনিয়র দল ও ১৮ বছরের ওপরে যারা থাকে তাদের নিয়ে সিনিয়র দল গঠন করা হয়। সিনিয়ররা সিলেটের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রিকেট খেলে।'
অন্য অ্যাকাডেমি থেকে সুরমাতে ক্রিকেটার আসার বিষয়ে অনিকের ভাষ্যে, 'সিলেটে তিনটি উইকেট রয়েছে। এর মধ্যে এমসি কলেজের মাঠের এই উইকেট আমরা ব্যবহার করি। এখানে একটি কংক্রিটের উইকেটও রয়েছে। যেকোনো সময় এই মাঠ ব্যবহারের কারণে ক্রিকেটাররাও নিয়মিত অনুশীলন করতে পারে, ম্যাচ খেলতে পারে।'
সুবিধা বঞ্চিত বা আর্থিক কষ্টে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য রাজিন সালেহ রেখেছেন আলাদা ব্যবস্থা। অর্থের অভাবে যেন ক্রিকেটার হওয়ার পথ না হয়, তাই আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ক্রিকেটাররা ফ্রি-তেই ক্রিকেটের পাঠ নিচ্ছেন সুরামা অ্যাকাডেমিতে।
অ্যাকাডেমির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কোচ রাজিন সালেহ বলেন, 'সিলেট-সুরমা অ্যাকাডেমি নিয়ে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে সিলেট বিভাগের জন্য কীভাবে আমরা একজন ক্রিকেটার তৈরি করে দিব। এই অ্যাকাডেমি পরিচিতির জন্য করিনি, আমার আবেগের জায়গা থেকে করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আমার জন্য অনেক কিছু করেছে, সেই জায়গা থেকে আমি যদি কিছু ক্রিকেটার তৈরি করে দিতে পারি, সেটিই হবে আমার সাফল্য।’
নিজের অ্যাকাডেমি থেকে বছরে অন্তত একজন ক্রিকেটার দেশকে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন রাজিন সালেহ, ‘এখানে অধিকাংশ ছেলে বিনামূল্যে অনুশীলন করে। একা চালাতে কষ্ট হয়, তবু চেষ্টা করি তাদের সেরা সুবিধা দিতে। ইকরাম-অনিক কোচ হিসেবে আছেন, এর আগে কোচ এমদাদুল হাসান দাদুল ছিলেন, তিনি মারা গেছেন। তারও পরিকল্পনা ছিল, কীভাবে এখান থেকে একজন ক্রিকেটার বের করা যায়। এখন আমরাও সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’
এসএইচ/জেএ