পুনর্মিলনীতে ফুটবলে ভেন্যু বদল, বিপিএলে সরকারের ব্যয় ৩০ কোটি
১০ জানুয়ারি কুমিল্লার শহীদ ধীরন্দ্রেনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডান ও রহমতগঞ্জের মধ্যকার প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঐ দিন একটি প্রতিষ্ঠানের পুনর্মিলনীর জন্য স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়ায় বাফুফে বাধ্য হয়েছে ম্যাচের ভেন্যু বদলাতে। মোহামেডান এখন রহমতগঞ্জের বিপক্ষে হোম ম্যাচের পরিবর্তে মুন্সিগঞ্জে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে। গতকাল দুই ক্লাবকে চিঠি দিয়ে বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সকল স্টেডিয়ামের মালিকানা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে কোনো মুহুর্তে বরাদ্দ অনুমোদন, বাতিল, পুনঃ বরাদ্দ দেয়ার এখতিয়ার রাখে। বাফুফেকে কুমিল্লা স্টেডিয়াম লিগ আয়োজনের জন্য বরাদ্দ দিয়ে পুনর্মিলনীর জন্য আরেক প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়ার আইনত এখতিয়ারও রাখে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগের জন্য বরাদ্দ দেয়ার পর একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
মোহামেডান লিগে টানা ৬ জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে। রহমতগঞ্জ সমান ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট পেয়েছে। শীর্ষ দুই দলের ম্যাচ ভেন্যু বদল হওয়ায় খানিকটা অসন্তোষ মোহামেডানের ম্যানেজার ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবের, 'ফুটবলে হোম ম্যাচে ক্লাবের কিছু অ্যাডভান্টেজ থাকে। এই ম্যাচটি লিগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা এখন আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য হোমের পরিবর্তে অ্যাওয়ে খেলতে হচ্ছে আগে। যে কারণে ভেন্যুর পরিবর্তন সেটা ক্রীড়াঙ্গন বা রাষ্ট্রীয়ও কোনো বিষয় নয়।'
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট বিপিএলও চলছে। সেই বিপিএলের তিন ভেন্যুর (মিরপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট) সংস্কারের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়/জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ২০০৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিসিবির অধীনে পাঁচটি স্টেডিয়াম দেয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের রুহুল আমিন (বর্তমানে জহুর আহমেদ চৌধুরি) স্টেডিয়াম অন্যতম। এই পাঁচ স্টেডিয়ামের দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা ব্যয় ছাড়াও সংস্কার, মেরামতও বিসিবির করার কথা। চট্টগ্রামের ভেন্যুর মতো মিরপুর শেরে বাংলাও একই রকম চুক্তি। অথচ বিপিএল উপলক্ষ্যে সরকার ৩০ কোটি টাকা খরচ করছে।
বিসিবির দেশের অন্য সকল ফেডারেশনের চেয়ে আর্থিক সাবলম্বী তো বটেই বাংলাদেশের ক্রীড়া বাজেটের প্রায় সমান অর্থ বিসিবির স্থায়ী আমানত রয়েছে। চুক্তি এবং বিসিবির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ/ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিপিএলের আগে ৩০ কোটি টাকা সংস্কার ব্যয় করেছে। এই প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর বক্তব্য, 'স্টেডিয়ামগুলো আমাদের অধীনে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংষ্কারের দায়িত্বও আমাদের। বিপিএল তারুণ্যের উৎসবেরও অংশ। এজন্য আমরা এটি করেছি।'
অন্য দিকে দেশের আরেক জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে মাঠ সংকট তীব্র। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম তিন বছরের বেশি সময় সংস্কার কাজ চলায় গত তিন মৌসুম বিভিন্ন জেলা স্টেডিয়ামে লিগ আয়োজন করতে হচ্ছে। এবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে মাঠগুলোর অনুমতি পেতে বাফুফের বিলম্ব হয়েছে। খেলা শুরুর সময় শুরু হয়ে যাওয়ায় বাফুফে মাঠ পরিচর্যার সময়ও পায়নি। বিশেষ করে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে পীচ উঠানোর পরের দিনই ফুটবল হয়েছে। সেই কুমিল্লায় এখন আবার অন্য অনুষ্ঠানের বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
এতে ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে ফুটবল ও ক্রিকেটে এনএসসির দ্বৈতনীতি নিয়ে! যদিও মন্ত্রণালয়ের সচিব জাহেদীর মন্তব্য, 'ফুটবলকেও আমরা সহযোগিতা করছি। চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম ২৫ বছরের জন্য বাফুফেকে প্রদান করা হয়েছে। আরো কয়েকটি নিয়ে আলোচনা চলছে।' জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাফুফেকে বরাদ্দ দিলেও সেই স্টেডিয়ামের সংস্কার ব্যয় ফিফার মাধ্যমে করার চেষ্টা বাফুফের।
এজেড/এইচজেএস