ঘানায় তিন মৌসুমে ১৩ গোল, ঢাকায় এক ম্যাচেই ৬ গোল বোয়েটাংয়ের
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে রহমতগঞ্জ ৬-১ গোলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে হারিয়েছে। পুরান ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জের ঘানার ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল বোয়েটাং একাই ছয় গোল করেছেন। রহমতগঞ্জ ৬ ম্যাচে ৫টি জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় আর ঢাকা ওয়ান্ডারার্স চতুর্থ হারে আগের ৪ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে আছে।
২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে বাংলাদেশে পেশাদার লিগের যাত্রা শুরু। প্রথম মৌসুমে মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড পল নোয়াচুকু ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এরপর পেশাদার লিগে আর কোনো ফুটবলার সেই কীর্তি গড়তে পারেননি। দেড় যুগ পর রহমতগঞ্জের ঘানার ডিফেন্ডার ছয় গোল করলেন। কাকতালীয় ব্যাপার, সময়ের ব্যবধান দীর্ঘ হলেও দুই ম্যাচেই কমন দল রহমতগঞ্জ। ২০০৭ সালে রহমতগঞ্জ ৭-১ গোলে হেরেছিল। আজ তারা ওয়ান্ডারার্সকে ৬-১ গোল দিয়েছে।
পেশাদার ফুটবল লিগে এক সময় আফ্রিকান ফুটবলারদের দাপট ছিল অনেক। গত কয়েক বছর আবার ব্রাজিল ও ইউরোপিয়ান ফুটবলাররা ছিলেন আলোচনায়। বোয়েটাংয়ের ডাবল হ্যাটট্রিকে অনেকদিন পর আলোচনায় আসলেন আফ্রিকান ফুটবলাররা। ঘানার ২৭ বছর বয়সী ফুটবলার বোয়েটাং এবারই প্রথম বাংলাদেশে খেলতে এসেছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ছয় ম্যাচে ইতোমধ্যে ১০ ও ফেডারেশন কাপে এক গোল করেছেন।
বোয়েটাং আগে ঘানার শীর্ষ লিগের অন্যতম সেরা ক্লাব কতোকেতে খেলেছেন। আফ্রিকার এই দেশটি বিশ্বকাপেও খেলেছে কয়েকবার। সেখান থেকে এসে বাংলাদেশে খেলার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘নিজ দেশের বাইরে খেলার অভিজ্ঞতা নিতে চেয়েছি। বাংলাদেশে আমন্ত্রণ পেয়ে খেলতে এলাম।’ বোয়েটাং রহমতগঞ্জে নম্বর নাইন পজিশনে খেলছেন। লিগের প্রথম তিন ম্যাচে গোল না পাওয়ায় একটু চাপে ছিলেন তিনি। গত তিন ম্যাচে নিয়মিত গোল পাওয়ায় এখন অবশ্য স্বস্তিতে, ‘আমি প্রতি ম্যাচেই গোল করতে চাই। এখন নিয়মিত গোল করতে পারায় ভালো লাগছে।’
ঘানার শীর্ষ ক্লাবে খেললেও সেখানে গোলের সংখ্যা তুলনামূলক কমই। সেখানকার গোল নিয়ে বোয়েটাংয়ের মন্তব্য, ‘গত তিন মৌসুমে আমি ঘানায় ১৩ গোল করেছি।’ সেখানে তিন মৌসুমে ১৩ গোল, আর আজ বাংলাদেশে এক ম্যাচেই ৬ গোল। তার ক্যারিয়ারে আজই প্রথম ৬ গোল করলেন। ২৩, ৩৭, ৪৪, ৬৩, ৬৬ ও ৭০ মিনিটে ছয় গোল করেছেন বোয়েটাং। দুই অর্ধে একটি করে হ্যাটট্রিক করেছেন। চতুর্থ-ষষ্ঠ গোলের ব্যবধান ছিল মাত্র ৭ মিনিট। প্রথম হ্যাটট্রিকে প্রথম-তৃতীয় গোলের ব্যবধানও মাত্র ২১ মিনিট। প্রথম গোল থেকে ষষ্ঠ গোল পেতে তার সময় লেগেছে মাত্র ৪৭ মিনিট।
সবমিলিয়ে গড়ে আট মিনিটের কম সময়ে একটি করে গোল পেয়েছেন এই ঘানাইয়ান ফরোয়ার্ড। ডাবল হ্যাটট্রিক একজন ফরোয়ার্ডের জন্য অত্যন্ত আনন্দের উপলক্ষ্য হলেও বোয়েটাং বেশ নির্ভারই, ‘সুযোগ পেয়েছি গোল করেছি। এজন্য দলের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া বা অনুভূতি নেই। হ্যাটট্রিক হওয়ার পর ডাবল হ্যাটট্রিক করব এমন লক্ষ্য বা ভাবনাও ছিল না।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে এখন বোয়েটাংই সর্বোচ্চ গোলদাতা। সামনে আরও ১২ ম্যাচ রয়েছে। গোলের অবশ্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই তার, ‘আমি প্রতি ম্যাচই গোল করতে এবং দলকে জেতাতে চাই। এটাই আমার চাওয়া। আজকের এই সাড়া আমাকে আরও গোল করতে উদ্বুদ্ধ করবে।’ খেলার মাঠে খুব আগ্রাসী হলেও কথাবার্তায় বেশ ধীরস্থির বোয়েটাং। ইংরেরিতে খুব অভ্যস্ত নন। খেলা শেষে ঢাকায় ফেরার পথে বাংলাদেশি সতীর্থ ফুটবলারের সাহায্যেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমের মান একটু পড়তির দিকেই। ফকিরেরপুল, ওয়ান্ডারার্স ও চট্টগ্রাম আবাহনী এই তিন দলের বিপক্ষে বড় দলের ম্যাচ মানেই গোল বন্যার উপলক্ষ্য। ব্রাজিলিয়ান রবসন বাংলাদেশে খেলে যাওয়া বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম সেরাদের একজন। বোয়েটাং ডাবল হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের রেকর্ডে জায়গা পেলেও মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিচারে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা লিগে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন মেজর হাফিজ মোহামেডানের জার্সিতে। সত্তর দশকেই ডাবল হ্যাটট্রিকের আরেকটি কীর্তি কাজী সালাউদ্দিনের আবাহনীর হয়ে। ২০০৬-০৭ পেশাদার ফুটবল লিগের আগে ঘরোয়া ফুটবলে ডাবল হ্যাটট্রিকের ঘটনা সেভাবে আলোচনায় নেই। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সর্বাধিক পাঁচবার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা শেখ আসলাম ডাবল হ্যাটট্রিক সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বেশ কয়েকটি হ্যাটট্রিক রয়েছে। চার-পাঁচ গোল থাকলেও ডাবল হ্যাটট্রিক নেই। হাফিজ ও সালাউদ্দিন ভাই ছাড়া কারও ডাবল হ্যাটট্রিক ছিল বলে শুনিনি এবং দেখিওনি।’
এজেড/এএইচএস