বাফুফের অধীনে এমএ আজিজ, শঙ্কায় চট্টগ্রামের অন্য খেলা
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ২৫ বছরের জন্য বাফুফেকে বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এটা বাফুফে ও ফুটবলের জন্য সুখবর হলেও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) জন্য কপালে চিন্তার ভাঁজ।
দেশের সচল ক্রীড়া সংস্থার মধ্যে এক নম্বরেই থাকবে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, কাবাডি ও হ্যান্ডবল থেকে শুরু করে সংস্থাটির ২০টির বেশি খেলা প্রতি বছরই আয়োজন করে। সেই সকল খেলার ভেন্যু চট্টগ্রামের এমএ আজিজ। যা জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে ছিল। সেই ভেন্যু বাফুফের অধীনে যাওয়ায় অন্য সকল খেলা আয়োজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর। যিনি চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে তিন দশকেরও বেশি সময় জড়িত। এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বাফুফের অধীনে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘চট্টগ্রাম একমাত্র জেলা যেখানে বিভিন্ন খেলায় তৃতীয় বিভাগ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। সেসব খেলার ভেন্যু এমএ আজিজ। শুধু চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার খেলা নয় এখানে গত কয়েক বছরের মধ্যে অ্যাথলেটিক্স, সাইক্লিং এবং টেবিল টেনিসের জাতীয় প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামনে বাফুফের অধীনে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থাকলে নিশ্চিতভাবেই অন্য খেলাগুলোর আয়োজন বাধাগ্রস্ত হবে।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে উর্বর ক্ষেত্র চট্টগ্রাম। ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়াও হকি, ব্যাডমিন্টন এবং আরও অনেক খেলায় বন্দরনগরী সক্রিয়। নানা খেলার অনেক খেলোয়াড় উঠে আসে চট্টগ্রাম থেকে। এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ফুটবলের হলে চট্টগ্রামের অন্য ইভেন্টগুলো গভীর শঙ্কায় পড়বে।
চট্টগ্রামে বড় মাপের স্টেডিয়াম দু’টি। একটি জহুর আহমেদ চৌধুরী যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়, আরেকটি এমএ আজিজ। জহুর আহমেদের আগে এমএ আজিজেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছে। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট জয় এই এমএ আজিজেই। পরবর্তীতে ক্রিকেট স্থায়ীভাবে জহুর আহমেদ চৌধুরীতে স্থানান্তরিত হয়। যা সাগরিকা স্টেডিয়াম হিসেবেও পরিচিত। ২০০৬ সালেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সাগরিকাকে সম্পূর্ণ বিসিবির অধীনে দিয়েছে। এরপর থেকে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামেই চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সবেধন নীলমণি। এখন সেটা বাফুফের অধীনে যাচ্ছে।
এতে স্থানীয় পর্যায়ের খেলা বড় সংকটের মুখে বলে জানিয়েছেন সিরাজউদ্দিন আলমগীর, ‘দুই স্টেডিয়াম দুই ফেডারেশনের অধীনে থাকলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব মাঠ/স্থাপনা বলে কিছু থাকছে না। আউটার স্টেডিয়াম এখনও সেভাবে প্রস্তুত নয়। মহিলা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ছাড়া অন্য কোনো ক্রীড়া স্থাপনা/মাঠও নেই। অন্য খেলা সচল না থাকলে কেবল চট্টগ্রাম নয়, প্রভাবিত হবে গোটা ক্রীড়াঙ্গনই।’
আরও পড়ুন
বিসিবির অধীনে মিরপুর শের-ই বাংলা ছাড়াও জেলা পর্যায়ে ৭টি স্টেডিয়াম রয়েছে। সেখানে বাফুফের বঙ্গবন্ধু ও কমলাপুর স্টেডিয়াম ছাড়া জেলা পর্যায়ে কোনো স্টেডিয়াম নেই। চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে ফিফার অর্থায়নে আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়ামে রূপ দিতে চায় বাফুফে। সেই অর্থ প্রদানের আগে ফিফা যাচাই করবে স্টেডিয়ামের পুরোপুরি অধিকার বাফুফের আছে কি না। এজন্যই মূলত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাফুফেকে ২৫ বছরের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ গতকাল বাফুফেকে ১২টি শর্তে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছে ২৫ বছরের জন্য। সেই শর্তের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবহারের বিষয়টি নেই। এরপরও বিষয়টি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানালেন ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম, ‘চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কাজ করছে।’
চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক ক্রীড়াবিদরা বাফুফের সঙ্গে সমন্বয় করে এমএ আজিজে অন্য খেলা আয়োজন করতে চায়। ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাফুফে ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা উভয়ের অধিকার কিভাবে সমুন্নত রাখে সেটাই দেখার বিষয়।
এজেড/এএইচএস