ক্রীড়াঙ্গনে আর্থিক অসমতা : বেতন আর স্পন্সরহীনতায় হতাশ অ্যাথলেটরা
লাল-সবুজের পতাকার প্রতিনিধি সবাই। কেউ ক্রিকেটে, কেউ ফুটবলে আর কেউ সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স কিংবা আর্চারিতে। কিন্তু ক্রিকেট ব্যতীত বাংলাদেশের প্রায় সব খেলার প্রতিনিধিরা ভুগছেন আর্থিক জটিলতায়।
ক্রিকেটের পেছনে বিনিয়োগ, ব্র্যান্ডিং কিংবা স্পন্সরশিপের ক্ষেত্র বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে বেশ অনেক আগে থেকেই। সময়ে সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল প্রচুর। সে তুলনায় আড়ালেই থেকে গেছে দেশের অন্যান্য ডিসিপ্লিনের খেলা। ফুটবলে একসময় ব্যাপক অর্থের ঝনঝনানি থাকলেও বর্তমানে সেটা নিভু নিভু এক প্রদীপ। দেশের বিভিন্ন খেলার ক্ষেত্রে সরকারি তরফে আর্থিক অসমতা থেকে শুরু হয় বেতন কাঠামোর বিশাল বৈষম্য।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আর্থিক চালচিত্র এবং বৈষম্যের হালচাল নিয়ে ঢাকা পোস্টের জুবায়ের আহাম্মেদের তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব আজ...
পেটের দায়ে কিংবা প্যাশনের জোরে খেলা
‘বাংলাদেশে যেসব খেলা তুলনামূলক ছোট খেলা হিসেবে পরিচিত, সেখানে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই খেলে যাচ্ছেন নিতান্ত পেটের দায়ে কিংবা প্যাশনের তাগিদে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই তারা ব্যক্তিগত খরচে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দিকে তাকিয়ে থেকে তো চলা সম্ভব নয়। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করা দরকার।’
ক্রিকেট বা ফুটবলের বাইরে ভিন্ন কোনো খেলায় টিকে থাকার প্রশ্নে এভাবেই উত্তর দেন সাবেক চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক গেমসে লাল-সবুজের পতাকা যিনি উঁচিয়ে ধরেছিলেন সারা বিশ্বের সামনে, জীবনের বাস্তবতার প্রশ্নে তার কাছ থেকে হতাশা আর ক্ষোভের প্রকাশই শোনা গেল অনেক বেশি।
এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী তারকা মাবিয়া আক্তারের কণ্ঠে অবশ্য ক্ষোভটাই ঝরল অনেক বেশি। দেশকে পদক এনে দেওয়া এই তারকা স্বীকার করে নিয়েছেন, একক ইভেন্টে স্পন্সর সংকট থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে এমন সব খেলার জন্য আলাদা প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল বলে জানান এই তারকা- ‘আমি মনে করি, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ব্যক্তিগত এসব ইভেন্টের খেলায় আলাদা করে প্রণোদনা বা আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। দলগত খেলায় স্পন্সর পাওয়া স্বাভাবিক। যেটা ব্যক্তিগত ইভেন্টে পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু এটা আমাদের কখনোই ছিল না।’
আরও পড়ুন
তাহলে কেন খেলে যাচ্ছেন এখন পর্যন্ত এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন খেলার প্রতি ভালোবাসার কথা, ‘আমি যখন ভারোত্তোলন শুরু করি তখন আমার বয়স ১১। এখন প্রায় ১৪ বছর আমি এই খেলার সঙ্গে যুক্ত। এই পর্যায়ে এসে যত অভাব-অনটন থাকুক না কেন। একটা মায়া বা ভালোবাসা থেকে যায়। এছাড়া নিজের একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র আমাকে কিছু সুবিধা দিয়েছে। এখন এই জায়গা থেকে সরে যাওয়া কেমন দেখায়।’
ভারোত্তোলনে প্রায় দেড় দশক কাটিয়ে দেওয়া মাবিয়া অবশ্য স্পন্সরশিপ নিয়ে খানিক ক্ষোভ দেখিয়েছেন ক্রিকেট অঙ্গনের দিকেও, ‘আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা বেশ স্বচ্ছল আর্থিক দিক থেকে। এমনকি ক্রিকেট বোর্ডও বেশ স্বচ্ছল। তারা কেন কখনো স্পন্সর হলো না আমাদের। একজন ক্রিকেটার কেন কখনো এগিয়ে আসেনি আমাদের পাশে। দেশের হয়ে দুই অঙ্গনের মানুষই অংশ নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, একজন ক্রিকেটারের তুলনায় দেশের জন্য অর্জনে আমরা অবশ্যই ওপরে থাকব। কিন্তু তবু আমাদের নিজেদের অবস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।’
বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলে নির্দিষ্ট বেতন ও ম্যাচ ফি নেই। জাতীয় দলের ক্যাম্প হলে সকল ফুটবলার ২০ হাজার টাকা করে পান সম্মানী হিসেবে। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসেও সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে খেলা ফুটবলারদের সম্মানী প্রদান করতে পারেনি বাফুফে। যদিও এসব বেতন বকেয়া রেখেই অর্ধকোটি টাকা খরচে বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করেছে বাফুফে।
কেমন বেতন পান দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তারকারা
ক্রিকেটের বেতন কাঠামোর একটা বড় অংশ আসে খেলার নিজস্ব ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং স্পন্সরশিপ থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তো বটেই, সারা বিশ্বেই ক্রীড়াখাতে স্পন্সর একটি বড় ইস্যু। বাংলাদেশে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা খেলার ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে না আসার কথাটাই বার কয়েক শোনা গেল সাঁতারু সাগরের মুখ থেকে।
২০২৪ সালের গোড়ার দিকে আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক পদক এনে দেওয়া আর্চার রোমান সানা। দেশসেরা আর্চারের এমন ঘোষণায় বেশ ধাক্কা খেতে হয়েছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে। পরে সামনে আসে আর্থিক ইস্যু। জানা যায়, বাংলাদেশ আনসারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে মাসিক ২৫ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন রোমান সানা। সেটাই তার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই বাজারে টিকে থাকার সম্বল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সাফ গেমসে টানা দুই স্বর্ণ জেতা ভারত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত আনসার থেকে পাচ্ছেন ১৬ হাজার টাকা। কিছু দিন আগে ইরানে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্সে রৌপ্য পদক জেতা জহির রায়হান বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে পান মাসিক ২৪ হাজার টাকা।
বিভিন্ন সংস্থার প্রতি একরকম কৃতজ্ঞতাই শোনা গেল সাঁতারু সাগরের কণ্ঠে, ‘আজকে যদি সার্ভিসেস সংস্থাগুলো মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে শতকরা ৯০ ভাগ অ্যাথলেট খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। আর ব্যক্তিগত কোনো স্পন্সর থাকা তো বাংলাদেশের সাপেক্ষে একেবারেই স্বপ্নের মতো।’
ভারোত্তোলনের বড় তারকা মাবিয়ার ভাষ্য, ‘সার্ভিসেস সংস্থাগুলো না থাকলে বাংলাদেশে কোনো খেলাই টিকবে না। ক্রিকেট বা ফুটবল ছাড়া অন্য কোনো খেলায় সে অর্থে বেতনই থাকে না। সেক্ষেত্রে কেন খেলবে মানুষ।’
বেতনের কথা বলতে গিয়ে হতাশার কথা উঠে এসেছে জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের খেলোয়াড় সিবগাতউল্লাহর কণ্ঠে। দেশের অন্যান্য অ্যাথলেটদের মতো তিনিও যুক্ত সার্ভিসেস সংস্থা বাংলাদেশ আনসারে। বেতন মোটে ১২ হাজার টাকা। আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘আমি জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার পর আমাকে চাকরি দেওয়া হয় বাংলাদেশ আনসারে। এ ছাড়া আমাদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। জেলা লিগ কিংবা বিভিন্ন ক্লাবে যা কিছু আয় হয় আমাদের। কদিন আগে আমি দুটো র্যাকেট নিয়েছিলাম ৫০ হাজার টাকায়। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে। আমাদের কোনো স্পন্সর না থাকলে খেলা চালিয়ে নেওয়াটাই কষ্টকর।’
চট্টগ্রামের ছেলে সিবগাত প্রায়ই ঢাকা আসছেন জাতীয় দলের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে। সেখানেও আছে অর্থ নিয়ে হতাশা, ‘জাতীয় দলের হয়ে ঢাকা আসতে হলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে দৈনিক ১ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। ঢাকা শহরে আবাসন এবং খাওয়াদাওয়ার খরচে আজকের দিনে ১ হাজার টাকায় অ্যাথলেটরা কতখানি উপকৃত হন, সেটা সহজেই বিবেচনা করা যায়।’
সাকিব-শান্তদের বেতন ঠিক কত?
কিছুদিন আগেই জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য এবং সিনিয়র তারকা মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, কেবল বিপিএলের কল্যাণে অনেক ক্রিকেটারের পক্ষে কিছুটা ভালোভাবে টিকে থাকা সম্ভব। বিপিএল কেন্দ্রিক বিশ্লেষণের আগে জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতনের একটা ধারণা নেওয়া যেতে পারে।
২০২৪ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ক্রিকেটারদের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তি প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। যেখানে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ১০ হাজার বেতন পাচ্ছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই চুক্তির আওতায় ৫ লাখের ওপর বেতন পেয়েছেন সাকিব আল হাসান (দুই ফরম্যাটে অবসরের আগে পর্যন্ত), মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং শরিফুল ইসলাম। সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা বেতন পাচ্ছেন শেখ মেহেদি হাসান এবং তানজিম হাসান সাকিব। এছাড়া ফরম্যাট ভেদে বাকিদের বেতন এক লাখের বেশি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসরে প্লেয়ার্স ড্রাফটে এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ এই ছয়টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছিল ক্রিকেটারদের। ড্রাফটের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ৬০ লাখ এবং সর্বনিম্ন ১০ লাখ। গত ১৪ তারিখ হয়েছিল সেই ড্রাফট। এর বাইরে বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন স্পন্সর এবং জাতীয় লিগে অংশগ্রহণ থেকে বিভিন্ন সময়েই আর্থিক অঙ্কটা ভারি হচ্ছে ক্রিকেটারদের জন্য।
ঘরোয়া ক্রিকেটের মাঝে এনসিএলে ম্যাচপ্রতি ১ লাখ (চ্যাম্পিয়ন হওয়া সাপেক্ষে) টাকা ম্যাচ ফি পান ক্রিকেটাররা। রানারআপ দলের জন্য থাকে ৯০ হাজার টাকা। আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মূলত চুক্তিভিত্তিতে যুক্ত হন ক্রিকেটাররা। সেটাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাখের অঙ্ক পেরিয়ে যায়। সেটা কোনো কোনো খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে ঠেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
বেতনের প্রভাব পড়ছে পারফরম্যান্স এবং সামাজিক মর্যাদায়
‘বাংলাদেশের বর্তমান যা অবস্থা সেটা বিবেচনায় অলিম্পিক তো দূরের কথা, দক্ষিণ এশিয়াতেও কদিন পর পদকের আশা করা কষ্টকর।’– নিজেদের বর্তমান অবস্থার কথা এভাবেই বলছিলেন সাঁতারু মাহফিজুর সাগর। অলিম্পিক খেলে আসা এই তারকার ভাষ্য, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণেই রোমান সানা কিংবা মাবিয়া আক্তারের মতো তারকারা এখন পর্যন্ত তরুণদের কাছে ক্রীড়াঙ্গনের আইকন হয়ে উঠতে পারছেন না।
‘সামাজিক অবস্থান, নিরাপত্তা কিংবা একজন অ্যাথলেটের পুষ্টির পুরো ব্যাপারটাই একটা চেইনের মতো। আর্থিক দিক থেকে এটা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে আসলে পুরো বিষয়টা কাজ করবে না। অনেক অ্যাথলেট জানেই না তার আদর্শ পুষ্টি চাহিদা কেমন হতে পারে’– বলছিলেন সাঁতারু সাগর। একই সুরে কথা বলেছেন মাবিয়া নিজেও, ‘বাংলাদেশে কেউ খেলার ব্যাপারে দরকারি জ্ঞান পর্যন্ত রাখে না। ফিজিও আনতে হয় দেশের বাইরে থেকে। দেশে স্পোর্টসের ওপর ডিপ্লোমা করা কোনো ফিজিও এখন পর্যন্ত আছে বলে মনে হয় না।
দেশের ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্সে বৈশ্বিক অঙ্গনে পিছিয়ে থাকার পেছনেও বেতন কাঠামোর দিকে ইঙ্গিত মাবিয়ার। নিজের বেতনের কথা উল্লেখ করে জানান, ‘ইনজুরি হলে আমাদের দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না। বেতন কাঠামোতে উন্নতি আসলে, ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়লে সেটা ফলাফল দিতে শুরু করবে। আমাদের আগে কিছু অর্জন করে এরপর সুবিধাদি অর্জন করতে হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমি আগে সাফল্য পেয়েছিলাম বলেই পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল।’
বেতন কাঠামোতে পিছিয়ে থাকার কারণে প্রাপ্য সামাজিক মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা এসব অ্যাথলেট। দেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও অনেকের কাছেই পরিচিত নন তারা। যে কারণে তরুণ প্রজন্মও এসব খেলায় আগ্রহী হচ্ছে না বলে মত সাঁতারের মানুষ সাগরের, ‘ক্রিকেটে একটা আর্থিক নিশ্চয়তা আছে। একজন খেলোয়াড় যখন কোনো ক্লাবে খেলবে কিংবা জাতীয় দলে থাকবে সে জানে তার একটা আর্থিক নিশ্চয়তা আছে। নতুন প্রজন্মের কেউ কেবল এই আর্থিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে অন্যান্য ডিসিপ্লিনে আসতে চাইছে না।’
আছে বেতনহীন থাকার রেকর্ডও
সবমিলিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে সরাসরি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বেতনের আওতাভুক্ত কেবল ফুটবল ও ক্রিকেট। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানেও আছে বেতনহীন থাকার সংস্কৃতি। ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই নারী ফুটবলাররা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ৩ মাস ছিলেন বেতনহীন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরেই বেতন অনিয়মিত। দুই-তিন মাস পর এক মাসের বেতন পেয়েছেন। বাফুফে নতুন চুক্তিতে একাদশে থাকলে ১০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি নির্ধারণ করেছে। সেই ফিও থাকে বকেয়া।
বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলে নির্দিষ্ট বেতন ও ম্যাচ ফি নেই। জাতীয় দলের ক্যাম্প হলে সকল ফুটবলার ২০ হাজার টাকা করে পান সম্মানী হিসেবে। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসেও সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে খেলা ফুটবলারদের সম্মানী প্রদান করতে পারেনি বাফুফে। যদিও এসব বেতন বকেয়া রেখেই অর্ধকোটি টাকা খরচে বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করেছে বাফুফে।
বেতনহীনতার এই সংস্কৃতিতে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নামও। ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে খবর এসেছিল, প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ আছে জ্যোতি-নাহিদাদের বেতন। সেই বছরের জুনে জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের ২০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু সেই ঘোষণার পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। যদিও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বেতন জটিলতা নিরসন করেছিল দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া সংস্থা।
জেএ/এফআই