জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ: অন্বেষণে ব্যয় কোটি টাকা, প্রতিভা যৎসামান্য
খেলা কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সব ফেডারেশন/এসোসিয়েশনের অভিভাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। দেশের সব ক্রীড়া স্থাপনাও সরকারি এই সংস্থার। শুধু অভিভাবক নয়, খেলোয়াড় তুলে আনার কাজটাও স্বাধীনতার পর প্রথম তারাই শুরু করে।
১৯৭৬-৭৭ সালে প্রথমবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রতিভা অন্বেষণ শুরু করে। যদিও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এই অন্বেষণ কার্যক্রম হয়নি অনেক দিন। অনেক বিরতি দিয়ে মাঝে দুই-একবার হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে পুনরায় প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে এখনো করে চলেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
ক্রিকেট ছাড়া দেশের অন্য সব ফেডারেশনেই আর্থিক সংকট প্রবল। ফুটবল এএফসি, ফিফার অর্থায়নে মাঝে মধ্যে জুনিয়র টুর্নামেন্ট ও দেশ জুড়ে প্রতিভা অন্বেষণের কার্যক্রম করলেও অন্য অনেক ফেডারেশনের পক্ষে সেটা করা সম্ভব হয় না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ-১৬ পর্যায়ে প্রতিভা অন্বেষণ করছে গত এক যুগ ধরে। সরকার এই খাতে অর্থ ব্যয় করলেও কার্যত ক্রীড়াঙ্গনে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনএসসির বিভিন্ন দিক নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের। আজ প্রথম পর্বে থাকছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি।
এক যুগে প্রতিভা অন্বেষণে ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি
২০১০-১১ অর্থ বছরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির জন্য ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ টাকা ব্যয় করে। ঐ অর্থ বছরে ২০ ডিসিপ্লিনে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে ২ হাজার ৩০৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩৫৯ জন ঢাকায় এনে আরেক দফা প্রশিক্ষণ হয়। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে অন্বেষণে ব্যয় হয় ৯৫ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা। প্রথম পর্বে জেলা পর্যায়ে ৬৬০ জনকে প্রশিক্ষণের পর ১৭৫ জনকে ঢাকায় এনে মাস খানেক ক্যাম্প হয়। ২০১৩-১৪ সালেও বাজেট ছিল ১ কোটি। সেবার ১০ ডিসিপ্লিনে ১ হাজার প্রশিক্ষণার্থী জেলা পর্যায়ে এবং ঢাকায় আনা হয় পরবর্তীতে ২০০ জনকে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১২ ডিসিপ্লিনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর পরের অর্থ বছরে সরকারি এই খাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়। এজন্য ডিসিপ্লিনের সংখ্যা ছিলও বেশি ৩১টি।
করোনার জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম স্থগিত ছিল। এছাড়া ২০১৭-২৪ পর্যন্ত বাকি অর্থ বছরগুলোতে প্রায় নিয়মিতই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই কর্মসুচি করেছে। বাজেট বছর প্রতি কোটি টাকার মতোই।
আরও পড়ুন
ব্যয়ে রয়েছে প্রশ্ন
প্রতিভা অন্বেষণে ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। এত টাকা আদৌ কি খরচ হয় আবার অনেকের প্রশ্ন এত ব্যয়ে ক্রীড়াবিদরা কতটুকু উপকৃত হন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সিনিয়র কোচ কামরুল ইসলাম কিরণ প্রতিভা অন্বেষণের ব্যয় পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ‘নতুন অর্থ বছরের শুরুতে প্রতিভা অন্বেষণের সূচি নিয়ে কাজ হয়। জেলাগুলো নির্দিষ্ট হলে সেই জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয় ডিসিপ্লিন ভিত্তিক বয়স অনুযায়ী খেলোয়াড় উপস্থিত রাখার জন্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জেলা ক্রীড়া সংস্থা বরাবর চেক প্রদান করে। যে কয়দিন জেলা পর্যায়ে ট্রেনিং হয় সেটা জেলা ক্রীড়া সংস্থাই খরচ করে। পোষাক, খাবার দাবার, অন্যান্য ব্যবস্থাপনা সব জেলা ক্রীড়া সংস্থাই করে। জেলা পর্যায় থেকে বাছাই করে খেলোয়াড়দের যখন ঢাকায় আনা হয় তখন ক্রীড়া পরিষদের বিভিন্ন স্থাপনাতেই রাখা হয়। খাবার ব্যয়টা অফিস থেকেই নির্বাহ হয় তখন।’
প্রতিভা অন্বেষণে গড়ে এক কোটি টাকা খরচ হলেও প্রশিক্ষণার্থীর মাথা পিছু সেই ব্যয় ৪-৫ হাজারের বেশি পড়ে না। অধিক প্রশিক্ষণার্থী প্রদর্শন করলেও কর্মসূচি সফল এবং ব্যাপকতা অনেক এমন ধারণাও রয়েছে। এতে গুণগত মান ও উপযোগীতা কমে সেই দিকে অনেক সময় খেয়াল থাকে না। আবার ক্রীড়াঙ্গনে এমনও অভিযোগ শোনা যায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টাকা পেলেও সেগুলো এ খাতে পুরো খরচ না করে অন্য কাজের জন্য বাঁচিয়ে রাখে। একই অর্থ বছরে একই জেলায় একাধিক প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিও হয়। তখন দেখা যায় একই খেলোয়াড়কে একাধিক প্রশিক্ষণেই রাখা হয়।
কী প্রক্রিয়ায় প্রতিভা বাছাই?
আন্তর্জাতিক মাস্টার ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দাবা কোচ আবু সুফিয়ান শাকিল। প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে প্রতি বছরই থাকে দাবা। শাকিল একমাত্র দাবার কোচ হওয়ায় তিনি প্রতি অন্বেষণেই থাকেন। প্রতিভা বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন খেলার কোচ জেলা পর্যায়ে যাই। একটি জেলায় দেখা যায় ১০-১৫ জন খেলোয়াড় আসলো একটি খেলায়। তখন তাদের নিয়েই ৭/৮ দিনের আবাসিক ক্যাম্প হয়। আবার কখনো দেখা যায় কোনো খেলায় একটি খেলায় ৪০-৫০ জনও আসে। তখন তাদের মধ্যে একটি বাছাই প্রতিযোগিতা আয়োজন করি। সেখান থেকে বাছাই করে আবাসিক ক্যাম্প করি।’
প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম শুরু হলে কোচরা এক জেলা শেষ করে আরেক জেলায় যান। নির্দিষ্ট খেলার নির্দিষ্ট জেলা শেষ হওয়ার পর তারা ঢাকায় ফেরেন। ঢাকায় ফেরার পর সিদ্ধান্ত হয় কত জন নিয়ে এক মাসের ক্যাম্প হবে। তখন স্ব স্ব খেলার কোচরা সেই অনুযায়ী তালিকা করেন, ‘ঢাকায় কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে যদি দাবার ১০ জন ঢাকা হয় তাহলে পাঁচ জেলায় অন্বেষণ হলে প্রতি জেলা থেকে দুই জন আবার যদি ২০ জন হয় সেক্ষেত্রে চার জন করে ডাক পায়। এটা আসলে নির্ভর করে কেন্দ্রের সংখ্যা ও জেলার উপর’ বলেন শাকিল।
২০১৫-১৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরকারের কাছ প্রতিভা অন্বেষণের জন্য ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। সেই বার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঐ টাকা ফেডারেশনের কাছে দিয়েছিল। ঐ সময় বেশ কয়েকটি ফেডারেশন টাকার সদ্ব্যবহার করলেও অ্যাথলেটিক্স, টেনিস,ভারত্তোলন কাজেই লাগাতে পারেনি। এ নিয়ে তখন বেশ সমালোচনা হয়েছিল।
গত এক যুগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিভা অন্বেষণে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর বিপরীতে জাতীয় পর্যায়ে কতজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় এসেছে। এর কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দাবা কোচ শাকিল বলেন, ‘নাইম হক সহ আরো কয়েকজন দাবাড়ু এসেছে ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে।’ প্রতিভা অন্বেষণে প্রতি বছরই থাকে দাবা। সেই হিসেবে দাবাড়– প্রাপ্তি কমই বিষয়টি স্বীকার করলেন শাকিল, ‘জাতীয় দাবাড়ুর সংখ্যা হিসাব করলে সেটা অবশ্যই কম। এজন্য দাবা ফেডারেশনে খেলার পরিবেশ সহ আরো অনেক বিষয় জড়িত।’
সাবেক ভারত্তোলক শাহরিয়া সুলতানা সূচি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভারত্তোলক কোচ। তার দাবি, ‘ভারত্তোলনে প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে আমরা অনেককে পেয়েছি। আশিকুর রহমান তাজ, স্মৃতিসহ বর্তমানে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ ভারত্তোলক রয়েছে যারা এই প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমেই এসেছেন।’
স্ব স্ব খেলার কোচরা প্রতিভা প্রাপ্তির সংখ্যা বললেও বাস্তবিক অর্থে সেটা খুবই নগণ্য। প্রতি বছর জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণার্থী থাকে হাজারের বেশি। সেখান থেকে কখনো পাঁচভাগের এক ভাগ বা চার ভাগের এক ভাগ ঢাকায় আসেন। সেই হিসেবে গত এক যুগে ঢাকায় এসে প্রতিভা অন্বেষণে এক মাস বা তিন সপ্তাহের বেশি ক্যাম্প করা ক্রীড়াবিদের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। এর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়াবিদ হাতে গোণা কয়েকজনই। যা শতাংশের হিসেবে পাঁচেরও কম!
কোচ নেই, অন্বেষণও নেই
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সময়ের সাথে সাথে কোচের সংখ্যা কমছে। যে খেলার কোচ নেই সেই খেলার প্রতিভা অন্বেষণও হয় না। সাতার ও অ্যাথলেটিক্স মাদার অফ অল ডিসিপ্লিন হিসেবে বিবেচিত। এই গুরুত্বপূর্ণ দু’টি খেলার কোচ অবসর যাওয়ায় পদশূন্য। কোচ না থাকায় এই খেলাগুলোর প্রতিভা অন্বেষণ হয় না কয়েক বছর।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। সেই ফুটবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিভা অন্বেষণ হয় না অর্ধ যুগের বেশি সময়। চান, স্বপন কুমার দাস, মোশাররফ বাদল এই তিন ফুটবল কোচ প্রায় কাছাকাছি সময়ে অবসরে যান। তাদের অবসরে যাওয়ার পর ফুটবলেও নাই হয়েছে অন্বেষণের তালিকা থেকে। এই প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কোচ মোশাররফ বাদলের পর্যবেক্ষণ, ‘আমরা ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ। খেলাকে ভালোবাসি। যাদের শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে বা ইচ্ছে রয়েছে তাদের নিয়ে দুই-তিন মাসের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে প্রতিভা অন্বেষণ করাতে পারে। এতে কিছু হলেও বাচ্চারা খেলার প্রতি আসে। এর মধ্যে কয়েকজন প্রতিভা পেলেও পাওয়া যেতে পারে।’
অন্বেষণের সুনির্দিষ্ট পলিসি নেই
গত এক যুগ অনেকটা নিয়মিতভাবেই প্রতিভা অন্বেষণের কার্যক্রম করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এই সময়ের মধ্যে তিন পদ্ধতিতে কাজ হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচরা জেলা পর্যায়ে গিয়ে সেখানে কয়েক দিন ট্রেনিং দেন। সেই ট্রেনিংয়ের মধ্যে তাদের চোখে সেরাদের ঢাকায় নিয়ে এসে কয়েক দিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গত বছর হয়েছে ব্যতিক্রম। কোচরা জেলা পর্যায়ে না গিয়ে সরাসরি জেলা থেকে খেলোয়াড়দের ঢাকায় আনা হয়েছিল। ঢাকাতেই মাস খানেকের ক্যাম্প হয়।
বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক বাদল রায়ের ব্রেন চাইল্ড ছিল যুবদের নিয়ে একটি গেমস করার। এর আগে প্রতিভাধর তরুণদের বের করতে হবে এবং প্রশিক্ষণে রাখা প্রয়োজন। বাদল রায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোষাধ্যক্ষও ছিলেন। বাদল রায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ২০১৫-১৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরকারের কাছ প্রতিভা অন্বেষণের জন্য ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। সেই বার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঐ টাকা ফেডারেশনের কাছে দিয়েছিল। ঐ সময় বেশ কয়েকটি ফেডারেশন টাকার সদ্ব্যবহার করলেও অ্যাথলেটিক্স, টেনিস,ভারত্তোলন কাজেই লাগাতে পারেনি। এ নিয়ে তখন বেশ সমালোচনা হয়েছিল।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বর্তমানে কাজ করা একাধিক কোচ বেশ আক্ষেপের সঙ্গেই বললেন, ‘আসলে এটি দুঃখজনক হলেও সত্য। আমাদের এখনো অন্বেষণের পলিসি সুনির্দিষ্ট হয়নি। ট্রায়াল এন্ড এররভাবেই যেন চলছে।’ বর্তমান ও সাবেক কোচ অনেকেরই অনুযোগ কোন পর্যায়ে কোথায় অন্বেষণ হবে সেটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পরিচালক ঠিক করে। কোচরা পরবর্তীতে সেটাই বাস্তবায়ন করেন।
অন্বেষণের পর আর খোঁজ নেই
জেলা পর্যায় থেকে বিভিন্ন খেলার তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকায় একটি আবাসিক ক্যাম্প হয়। প্রায় এক মাস ঢাকায় রেখে আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রদান করা হয়। এরপর একটি অনুষ্ঠানে ক্রীড়া মন্ত্রী বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব একটি সনদ দেন তরুণদের। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আর সেই খেলোয়াড়দের খোজ থাকে না। বিষয়টি স্বীকার করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সিনিয়র কোচ কামরুল ইসলাম কিরণ বলেন, ‘আবাসিক ক্যাম্প শেষ হওয়ার পর আমরা আর তাদের ধরে রাখতে পারি না। যেটা সবচেয়ে জরুরি।’
এক দশক পর এই বিষয়টি সচেতন হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এই বছর প্রতিভা অন্বেষণ শেষে কয়েকটি ডিসিপ্লিনে শীর্ষ পাঁচ জনের নাম সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনে প্রেরণ করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোঃ আলমগীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিভা অন্বেষণের এই কার্যক্রমের উপযোগীতা সেভাবে দেখেন না, ‘এটা অনেকটা করার জন্যই করা কার্যক্রমের মতো অবস্থা। প্রতিভা টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই। এজন্য আলাদা বাজেট, লোকবল আরো আনুষাঙ্গিক বিষয় প্রয়োজন। এগুলো না থাকায় এই কর্মসূচি ও আয়োজন কার্যকরিতা পাচ্ছে না।’
সাল | ডিসিপ্লিন সংখ্যা | জেলা পর্যায় | ঢাকা ক্যাম্প |
২০১০-১১ | ২০ | ২৩০৮ | ৩৫৯ |
২০১২-১৩ | ৭ | ৬৬০ | ১৪৪ |
২০১৩-১৪ | ১০ | ১০০০ | ২০০ |
২০১৪-১৫ | ১২ | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
২০১৫-১৬ | ৩১ | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
২০১৭-১৮ | ৮ | ৫৬০ | উল্লেখ নেই |
২০১৮-১৯ | উল্লেখ নেই | ২৯৪ | উল্লেখ নেই |
২০২০-২১ | ১৩ | ৫৯২ | উল্লেখ নেই |
২০২১-২২ | ৮ | ৩৮৪ | ১০৪ |
২০২২-২৩ | ১২ | ১৯২ | ৬০ |
২০২৩-২৪ | ১১ | উল্লেখ নেই | ১৬৩ (সরাসরি) |
পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার অভাব
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ের প্রতিভা অন্বেষণ করে মূলত স্ব স্ব খেলার ফেডারেশনগুলো এদের খোঁজ পায়। একেক ফেডারেশনের একেক সূচি। ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বাছাইকৃত প্রতিভা অনেক সময় ফেডারেশনগুলো ব্যবহার করতে পারে না। অ্যাথলেটিক্সের সাবেক কোচ ও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক সময় অনেক ফেডারেশন জুনিয়র ক্যাম্প শুরু হওয়ার পর এই অন্বেষণ কার্যক্রম শেষ হয়। তখন আর ঐ প্রতিভাবানদের নেয়ার সুযোগ থাকে না। আবার অনেক ফেডারেশন জুনিয়র ক্যাম্প বা প্রতিযোগিতা আয়োজন করে এই প্রতিভা অন্বেষণের বছর বা কয়েক মাস পর। এটাও আরেকটা সমস্যা।’
হ্যান্ডবল ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন গত কয়েক বছর প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির সঙ্গে ফেডারেশনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানালেন, ‘গত কয়েক বছর প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে আমরা তেমন কোনো খেলোয়াড় পাইনি। একবার আমাদের মাধ্যমে আয়োজন করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ঐ বছর অনেক খেলোয়াড় পেয়েছিলাম।’
বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সিনিয়র এই সংগঠক দীর্ঘদিন থেকে প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমের সমন্বয়ের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন, ‘বিকেএসপি প্রতিভা অন্বেষণ করে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও করে আবার কিছু ফেডারেশন নিজস্বভাবেও করে। এতে অনেক সময় একই জেলায় বারবার আবার অনেক জেলায় একটি খেলা অন্বেষণের বাইরেও থেকে যায়। পাশাপাশি প্রতি সংস্থারই প্রায় একই খাতে অনেক অর্থ ব্যয় হয় কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্য সেই অর্থে বাস্তবায়ন হয় না। ’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সদ্য সাবেক সচিব পরিমল সিংহও এই বিষয়টির সঙ্গে একমত ছিলেন।
এজেড/জেএ