চার মহাদেশীয় আসর, বিতর্কিত ব্যালন: ফিরে দেখা ফুটবলের দুনিয়া ২০২৪
২০২৪ সালকে বিদায়ের জন্য প্রস্তুত পুরো দুনিয়া। বক্সিং ডের সূচিতে ইংল্যান্ড ছাড়া ফুটবলের বাকি সব দেশই একপ্রকার বিদায় জানিয়েছেন নিজেদের ফুটবল ক্যালেন্ডারকে। তবে বিদায়ের আগে ফুটবল দিয়ে গিয়েছে স্মরণীয় এক বছর। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ– একইসঙ্গে চার মহাদেশে হয়েছে মহাদেশীয় ফুটবলের আসর।
সঙ্গে বছরের শেষাংশে ব্যালন ডি’অর নিয়ে নাটকীয়তা, রিয়াল মাদ্রিদের পুরস্কার বর্জন ছিল আলোড়ন ফেলে দেয়ার মতো ঘটনা। লিওনেল মেসি আলোচনায় ছিলেন ইনজুরি আর ইন্টার মায়ামিতে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মাঠের বাইরে ইন্টারনেট দুনিয়ায় হয়েছেন সেনসেশন। লিভারপুল বিদায় জানিয়েছে ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ ইউর্গেন ক্লপকে। ম্যানসিটি দেখেছেন নিজেদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের বড় ভরাডুবি।
২০২৪ সালের ফুটবলের দুনিয়ার সবকিছু থাকছে ঢাকা পোস্টের সালতামামি আয়োজনের এই পর্বে।
এশিয়ায় সেরা কাতার, আফ্রিকায় আইভরিকোস্ট
ব্র্যান্ডভ্যালুতে খানিক পিছিয়ে থাকলেও বছরের শুরুতেই দুর্দান্ত দুই আসর দেখার সুযোগ মিলেছে এএফসি এশিয়ান কাপ এবং আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সের সুবাদে। এশিয়ান কাপে জর্ডানের দুর্দান্ত উত্থান, দক্ষিণ কোরিয়ার অসাধারণ ফুটবল শৈলী ছিল চোখে পড়ার মতোই। তবে শেশপর্যন্ত শিরোপা গিয়েছে স্বাগতিক কাতারের ঘরে। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয় করেছে দেশটি।
আরও পড়ুন
অঘটন আর জমজমাট ফুটবলের সূচি ছিল আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সে। আফকনে এবারে চমকের অভাব ছিল না। মরক্কো, সেনেগাল, মিশন কিংবা ক্যামেরুনের মতো নামী দলের বিদায় হয়েছিল বেশ আগেভাগেই। অবশ্য ফাইনালে ছিল দুই পাওয়ারহাউজ নাইজেরিয়া এবং আইভরিকোস্ট। যেখানে শিরোপা উৎসব করেছে আইভরিকোস্টই। সাবাস্টিয়ান হালারের একমাত্র গোলে শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
ব্রাজিলের পেনাল্টি দুঃখ ও আর্জেন্টিনার টানা দ্বিতীয় শিরোপা
ফেবারিটের তকমা নিয়েই কোপা আমেরিকায় মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। খেলেছেও দুর্দান্ত ফুটবল। দলের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও আলবিসেলেস্তেদের ত্রাতা হয়ে আসেন লাউতারো মার্তিনেজ। পুরো আসরে ছিলেন দারুণ ছন্দে। করেছেন আসরের সবচেয়ে বেশি গোল।
ফাইনালে লিওনেল মেসির ইনজুরিতে মাঠ ছাড়া, শিরোপা জিতেই আর্জেন্টাইন তারকা আনহেল ডি মারিয়ার অবসর নেয়া কিংবা কলম্বিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল– সবই বুঁদ করে রেখেছিল ফুটবল দুনিয়াকে।
তবে এই বছরে এসেও পেনাল্টি নামক দুঃখ তাড়া করেছে ব্রাজিলকে। ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকায়ও তারা বিদায় নিয়েছে পেনাল্টি শ্যুটআউট থেকে। উরুগুয়ের বিপক্ষে পেনাল্টিতে হারের পর নিশ্চিত হয় ব্রাজিল ফুটবলে আরেকটি ব্যর্থতার বছর। বছরের প্রথমদিকে কোচ বদলেও নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেনি সেলেসাওরা।
১ যুগ পর ইউরোপ সেরা স্পেন
আরও একটাবার ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ড। গেলবার নিজেদের মাঠে ইতালির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। এবারে জার্মানিতে আবারও ইউরোর ফাইনালে ছিল ইংলিশরা। কিন্তু এবারেও হলো না শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য। স্পেনের দুর্দান্ত ফুটবলের সামনে ২-১ গোলের হারে হতাশায় ডুবেছিল হ্যারি কেইনরা।
আর ২০১২ সালের পর ১ যুগের অপেক্ষা শেষ করে ফের মহাদেশীয় শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে স্পেন। টুর্নামেন্টের বড় আকর্ষণ হয়ে ছিলেন লামিনে ইয়ামাল। ১৭ বছরের এই কিশোর বিমোহিত করেছেন পুরো ফুটবল দুনিয়াকে। অনেকের কাছেই খ্যাতি পেয়েছেন নতুন যুগের মেসি নামে।
লেভারকুসেনের অবিশ্বাস্য উত্থান, রিয়ালের শ্রেষ্ঠত্ব
ক্লাব ফুটবলে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় হয়ে ছিল বায়ার লেভারকুসেনের বীরত্ব। মৌসুমের শুরুতেই ২০২৩ সালে চমক দিয়েছিল তারা। তবে ২০২৪ সালে নিজেদেরই যেন ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনে নেমেছিল দলটি। পুরো ৯ মাসের মৌসুমে যারা হেরেছে কেবল ১ ম্যাচ। সেটাও ইউরোপা লিগের ফাইনালে আতালান্টার কাছে। প্রথম দল হিসেবে জার্মান বুন্দেসলিগা তারা শেষ করে অপরাজিত থেকে।
তবে আরও একটাবার রিয়াল মাদ্রিদই থাকলো ইউরোপের সেরা ক্লাব হয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তারা হারিয়েছে জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে। ঘরে তুলেছে নিজেদের ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। আর উয়েফা সুপার কাপের ম্যাচে তাদের জয় আসে আতালান্টার বিপক্ষে।
আরও পড়ুন
বিতর্কিত ব্যালন ডি’ অর
রদ্রি নাকি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র? প্রশ্নটা ছিল নিছক কাগজে কলমে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অর ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুসের হাতে যাচ্ছে, সেটা একপ্রকার অনুমিতই ছিল। রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে সব আয়োজনই সমাপ্ত করা হয়েছিল। এমনকি বিশেষ জেটে ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ছিল দলের একাধিক সদস্যের। কিন্তু একটা ফোনকলে ভেস্তে যায় সবই।
ম্যানচেস্টার সিটির পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয়, ভিনিসিয়ুস নয় বরং রদ্রিই পাচ্ছেন ব্যালন ডি অ’রের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। এরপরেই আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় পুরো ফুটবল দুনিয়াতে। পুরো অনুষ্ঠান বর্জন করে রিয়াল মাদ্রিদ। পুরস্কার ঘোষণার সময়েও দর্শকদের মধ্যে থেকে ভেসে আসছিল ভিনিসিয়ুসের নামটাই।
যদিও একেবারে বছরের শেষদিকে ফিফা দ্য বেস্টের পুরস্কার ঠিকই নিজের করে নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তাতে মনের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পেরেছেন ব্রাজিলের এই তারকা।
ক্লপের বিদায়, কোচেদের আসা যাওয়া
একাধিক কোচের রদবদল ছিল ফুটবল অঙ্গনে আলোচনার খোরাক। হোসে মরিনিও ছেড়ে গিয়েছিলেন ইতালিয়ান ক্লাব। শীর্ষ ৫ লিগ থেকেই সরে গিয়েছেন তিনি। বার্সেলোনা এনেছে জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিককে। যার ফুটবল দর্শন বছরের শেষ দিকে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে সব ছাপিয়ে লিভারপুলের কোচ ইউর্গেন ক্লপের বিদায়টাই ছিল সবচেয়ে বেশি চমকের।
লিভারপুলে ৯ বছর পার করার পর সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন ক্লপ। বিদায়ের সময় ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ হয়ে ছিলেন তিনি। তার আকস্মিক বিদায় এবং নতুন কোচের আগমন ইংলিশ ফুটবলের বড় দিক হয়ে থাকবে এই বছর।
এছাড়া ইন্টার মায়ামির হয়ে লিওনেল মেসির রেকর্ড গড়ে সাপোর্টার্স শিল্ড জয়, ক্রিশ্চিয়ান রোনালদোর ইউটিউব যাত্রা, ম্যানচেস্টার সিটির টানা হার কিংবা এমবাপের দলবদলের ঘটনা ফুটবল বিশ্বে ছিল আলোচনার খোরাক।
জেএ